আন্দামানে বঙ্গোপসাগরের অতলে যখের ধন পেল ভারত! যা ভারতীয় অর্থনীতিকে এক ধাক্কায় অনেকটাই উপরের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আন্দামান সাগরে খনিজ তেলের বিরাট ভাণ্ডার থাকার ইঙ্গিত পেয়েছে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। অনুমান করা হচ্ছে, অন্তত ২ লক্ষ কোটি লিটার খনিজ তেল রয়েছে ওই অঞ্চলে। এই খনিজ তেলের ভাণ্ডার এতটাই বিশাল যে আগামীদিনে ভারতকে আর তেল আমদানি করতে তো হবেই না, উল্টে তেল রফতানি করে বৈদশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বিপুল পরিমানে। ফলে অচিরেই চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখবে ভারত।
আন্দামান সাগরে তেল ভাণ্ডারের তাৎপর্য কি?
সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তর উপকূলে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র গুয়ানাতে তেলের ভাণ্ডারের খোঁজ মেলার পর এই দেশের চেহারা বদলে গিয়েছে। হত দরিদ্র ওই দেশের অর্থনীতি আজ ফুলেফেঁপে উঠেছে। ভারতের তেমনই সুদিন আসতে চলেছে। কেন্দ্রীয়মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর দাবি, এই তেল ভাণ্ডার থেকে আগামীদিনে প্রতিদিন আড়াই লক্ষ্য ব্যারল তেল উত্তোলন সম্ভব হবে। জানা যাচ্ছে আন্দামান সাগরের নিচে আনুমানিক ৫ লক্ষ ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে খনিজ তেলের বেসিন আছে। যা ভারতের অর্থনীতি ২০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দিতে পারে আগামী কয়েক বছরেই। ভারতকে আর মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। উল্লেখ্য, এতদিন ভারত নিজের প্রয়োজনের জ্বালানি তেলের ৮৫ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ইরান, কাতার, সৌদি আরবের তেল আমদানি করেই ভারত অধিকাংশ ডলার খরচ করে। এই মুহূর্তে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। আবার আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠলে বারবার সমস্যার মুখে পড়তে হয় ভারতকে। যেমন এখন ইজরায়েল ও ইরানের যুদ্ধে সেই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
কিভাবে এই তেলের খোঁজ মিলল?
কেন্দ্রে বিজেপির নরেন্দ্র মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ভারত জ্বালানি ক্ষেত্রে আমাদের খুব বেশি অগ্রগতি করেনি। বরং কংগ্রেস আমলে তেল আমদানি করেই নিশ্চিত থাকতো। কিন্তু মোদি সরকারের উদ্যোগে পুরনো নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়।আগে যেখানে অনুসন্ধান ক্ষেত্রে খুব বেশি অর্থ ব্যয় করত না ভারত। এবার নয়া নীতিতে অনুসন্ধান ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই একের পর এক জায়গায় সাফল্য এসেছে। যার মধ্যে আন্দামানে সবচেয়ে বড় তেল ভাণ্ডারের খোঁজ মিলল। আপনারা জানেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অশোকনগর এলাকাতেও খনিজদের সন্ধান মিলেছে। ২০২৪ সালে ওএনজিসি মোট ৫৪১টি কুয়ো খুড়েছে, যা বিগত ৩৪ বছরে সর্বোচ্চ। এই অনুসন্ধানে অশোকনগর ছাড়াও রাজস্থান, মুম্বই ও কৃষ্ণা-গোদাবরী অঞ্চল, বিহারের সমস্তিপুর এলাকায় খনিজ তেলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ফলে আগামীদিনে ভারত জ্বালানি ক্ষেত্রে যেমন আত্মনির্ভর হবে, তেমনই তেল রফতানিকারক দেশ হিসেবে উঠে আসবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতই তেল সরবরাহ করতে পারবে বিভিন্ন দেশে। আর আন্দামানে তেল উত্তোলন করতে ভারতীয় সংস্থাগুলি ছাড়াও বহু বিদেশী বিনিয়োগকারী লাইন লাগিয়েছে ইতিমধ্যেই। কারণ ওই এলাকা মালক্কা প্রণালী হয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্য পথের মাঝে অবস্থিত। ফলে সোনায় সোহাগা ভারতের জন্য।
Discussion about this post