ভারতের সেভেন সিস্টার্স “ল্যান্ডলকড”, তাই বাংলাদেশ “ওনলি গার্ডিয়ান অফ দ্য ওসেন”। সম্প্রতি চিন সফরে গিয়ে চিনা অর্থনীতি সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিতে গিয়ে এমনই মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সেই মন্তব্যের পর ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ভারতের একটা বড় অংশের মানুষ দাবি তোলেন এবার বাংলাদেশকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে। কিন্তু ভারত সে পথে হাঁটেনি। বরং এমন একটা চাল দিল, যাতে ইউনূস সাহেবের রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড়। গত ৮ এপ্রিল ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেয় ভারত। এতে বাংলাডশের বিশ্ব বাণিজ্য বড়োসড়ো ধাক্কা খেল এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। পাশাপাশি এই এক সিদ্ধান্তে ভারত বাংলাদেশকে কার্যত “ল্যান্ডলকড” করে দিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে পাঁচটি প্রধান স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য করতো তা কার্যত বন্ধ হল। তবে কয়েকটি স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য চলবে। এরমধ্যে একমাত্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি। নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সামান্য বাণিজ্য করে বাংলাদেশ। কিন্তু ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করায় বাংলাদেশ আরও বড় বিপদে পড়ল। একটা হিসেব বলছে, ভারতের সড়ক ব্যবহার করে ৩৬ দেশে পোশাক রফতানি করতো বাংলাদেশ। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৫ হাজার ৬৪০ কোটি টাকার পণ্য পাঠায় বাংলাদেশ। ডলার হিসাবে আয়ের পরিমাণ প্রায় ৪৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, প্রতি মাসে গড়ে ৩৭৬ কোটি টাকা রফতানি করতো বাংলাদেশ।
এই পণ্য পাঠানো হয় মূলত ট্রাকযোগে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বিভিন্ন বন্দর এবং বিমানবন্দরের মাধ্যমে তৃতীয় কোনও দেশে। বাংলাদেশের শিল্প উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করলে ঢাকার চেয়ে প্রতি কেজিতে ১ ডলার থেকে ২ ডলার পর্যন্ত খরচ কম হতো। সেই সঙ্গে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের বুকিং জটও এড়ানো যেতো। এবার ভারত এই সুবিধা বাতিল করায় বিকল্প পথ হারিয়ে পোশাক রফতানিতে নতুন চাপ তৈরি হয়েছে। এই ধাক্কা সামলাতে হলে এবার বাংলাদেশকে নতুন রুটে বছরে প্রায় ৭৩০টি বিমান চালাতে হবে। যা কার্যত অসম্ভব।
অন্যদিকে ভারত শিলিগুড়ি করিডোরে যে পরিমাণ সৈন্য সমাহার করেছে তাতেও একটা চাপ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের উপর। সেই সঙ্গে সীমান্তে মোতায়েন করা আছে রাশিয়া থেকে আনা অত্যাধুনিক এস ৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও আকাশ মিসাইল সিস্টেম। শুধু শিলিগুড়ি করিডোর নয় ত্রিপুরা মেঘালয় ও আসামেও বিপুল পরিমাণ সৈন্য ও আর্টিলারি মোতায়েন করেছে ভারতীয় সেনা। একদিকে চিকেন নেক করিডোরকে চওড়া করার প্রস্তাব, অন্যদিকে বাংলাদেশের চিকেন লেগ চট্টগ্রামকে আলাদা করার প্রস্তাব, দুটোই বিবেচনার মধ্যে রেখেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যেভাবে ভারতের বিরুদ্ধে তিনি একের পর এক চাল চলে গিয়েছেন এবার তার পাল্টা দিতে শুরু করেছে ভারত। একদিকে ভাতে মারার চেষ্টা, অন্যদিকে হাতে মারার প্রস্তুতি সব মিলিয়ে ভারত যেকোনো সময় বড় কোন পদক্ষেপ নিলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশেষ করে ইউনুস যখন চিনে গিয়ে ভারতকে একটি বড় হুমকি দিয়ে রেখেছেন, তা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে যে পার্শ্ব বৈঠক হয়েছিল, তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কি কি করতে হবে। রীতিমতো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই কাজ যদি না হয় তাহলে একে একে ব্যবস্থা। যা ইতিমধ্যে নিতে শুরু করেছে ভারত।
Discussion about this post