কয়েক দিন ধরে অশান্ত বাংলাদেশের এই পাহাড়ি এলাকা। সে দেশের সংখ্যালঘু এবং চাকমা জনজাতির বাসিন্দারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। তাঁদের দাবি পৃথক রাষ্ট্র। নাম জুম্মাল্যান্ড। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়েই নয়া রাষ্ট্রের ভৌগলিক সীমানার নকশা এঁকেছে বিদ্রোহীরা। জাতীয় পতাকাও তৈরি হয়েছে। সেই নকশা আবার ইজরায়েলের জাতীয় পতাকার মতো। ইসলামিক রাষ্ট্রে ইজরায়েলের আদলে পতাকা উড়ছে। পরিস্থিতি যে কতটা জটিল তা সহজেই অনুমেয়। তবে এপার বাংলার গোর্খাল্যান্ডের মতোই ওপারের দীর্ঘদিনের মাথা ব্যথা জুম্মাল্যান্ড। বছর পাঁচেক আগেও এ নিয়ে জোরাল আন্দোলন হয়। তখন বাংলাদেশের মসনদে শেখ হাসিনা। যিনি এখন দেশত্যাগী। আওয়ামী লিগ ক্ষমতা হারানোর পর ফের জোরাল হচ্ছে জুম্মাল্যান্ডের দাবি। বিক্ষোভ বাড়ছে। রক্তও ঝড়ছে। এই আন্দোলনের সামনের সারিতে রয়েছেন চাকমা জনজাতির লোকজন। ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বর্তমান উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশ এবং মায়ানমারের আরাকান নিয়ে ছিল চাকমা সাম্রাজ্য। সেই চাকমাদের একটা বড় অংশ এখন চট্টগ্রামে থাকেন। ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মিজোরামেও চাকমা জনজাতির আধিক্য দেখা যায়। এই চাকমাদের নেতৃত্বেই চলছে পৃথক জুম্মাল্যান্ডের আন্দোলন। সরাসরি বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আন্দোলন। জানা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম স্ট্র্যাটিজিক্যালি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরামসহ উত্তর-পূর্ব ভারত লাগোয়া যে অঞ্চল রয়েছে তাহলো চট্টগ্রাম। উত্তরপূর্ব ভারতের এই মুহূর্তে কোনো সমুদ্রপথ নেই। আসাম বা ত্রিপুরায় ভারতীয় পণ্য পরিবহনে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয় এসব পণ্য। তাই চট্টগ্রাম যদি ভারতের হয়ে যায় তবে এই পথ অনেকটা কমে যাবে। তাছাড়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার যদি ভারতের হয়ে যায় তাহলে বঙ্গপোসাগরে ভারতের যে ডোমিন্যান্স, যে আধিপত্য বাড়বে, আমেরিকা ধারে কাছে এগোতে পারবে না। বাংলাদেশ সেন্টমার্টিন নিক বা সেন্ট হেনরি নিক, চট্টগ্রামটা যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে যায় বা ভারতের হয়ে যায়, তাহলে শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় গোটা পৃথিবীর যারা বঙ্গোপসাগর দখল করতে চায় তাদের চিন্তার কারণ হয়ে যাবে। ১৯৪৭ সালের দিকে চট্টগ্রাম হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল। তাদের তাড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রামকে মুসলিমপ্রধান অঞ্চলে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে। কারণ এই চট্টগ্রাম থেকে হিন্দুরা বিদ্রোহ শুরু করতে পারে। মাস দেড়েক ধরে এই বাংলাদেশিদের একাংশের নজর ভারতের সাত রাজ্যের দিকে। সেভেন সিস্টার্স দখলের হুংকার শোনা যায়। শিলিগুড়ি করিডর দখল করে উত্তর-পূর্বের ভারতকে দেশের মূল ভুখন্ড থেকে আলাদা করারও হুংকার দিতে থাকেন অনেকে। সেভেন সিস্টার্স নিয়ে বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ ইউনূসও দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি পুরোপুরি আলাদা। সেভেন সিস্টার্স লোভী বাংলাদেশ নিজেদের জমিই হারাতে চলেছে। বাংলাদেশের এই জটিল পরিস্থিতি নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়ছে না ভারত। সোশাল মিডিয়ায় ট্রেলার বন্যা বইছে। বাংলাদেশিদের একাংশের দাবি চট্টগ্রামে অশান্তির পিছনে রয়েছে ভারত। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার মদতেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি দিল্লির সাউথ ব্লক। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যের বিরোধিতা করে সোচ্চার হলেন ভারতীয় ইসকনের মুখপাত্র। গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের চট্টগ্রামে হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ সামনে আসছে। এই আবহে ইসকনকে নিষিদ্ধ করারও ডাক দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে। এই সবের মাঝেই চট্টগ্রামে উত্তেজনা ছড়ানোর নেপথ্যে ইসকন সদস্যদের দায়ী করেন পুলিশ কমিশনার। এই আবহে পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হল ইস্কনের পূর্বাঞ্চলীয় মুখপাত্র রাধারমণ দাস। এর আগে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার রইস উদ্দিন বলেছিলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন উস্কানিমূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে ওইসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ইসকনের লোকজনই জড়িত।’ এই আবহে এবার মুখ খুললেন ভারতীয় ইসকনের মুখপাত্র। রাধারমণ দাসের কথায়, ‘চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার সাংবাদিক বৈঠকে যা বলেছেন তা আশ্চর্যজনক। তিনি বলেছেন হিন্দুরা ওখানকার এক মুসলিম দোকানদারের গ্রেফতারির দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। তারা জয় শ্রীরাম স্লোগান দেয়। পুলিশ কমিশনারের দাবি ওই জনতা ইসকনের সদস্য। তিনি আরও দাবি করেছেন ইসকনের লোকজন মুসলিমদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। ওই সাংবাদিক সম্মেলনে কার্যত ইসকনকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইস্কনকে জঙ্গি সংগঠনের তকমা দেওয়া হচ্ছে। মুসলিমরা ইসকন সদস্য়দের খুনের হুমকি দিচ্ছে। বাংলাদেশের পুলিস ইসকন নিয়ে যা বলেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বড় কোনও ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আগে আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি তিনি যেন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন।’
বাংলাদেশের পূর্ব প্রান্তের দেশ মিয়ানমার। যেখানে এখন চলছে তীব্র গৃহযুদ্ধ। একদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অন্যদিকে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এমন মোট ৮টি...
Read more
Discussion about this post