বিশ্বজুড়ে বাজার করতে বেরিয়ে বাংলাদেশের ব্যাগ এখনও খালি। কেন এই কথা বলছি, সেটাই জানাব এই প্রতিবেদনে। গত সপ্তাহেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা তাঁর মন্ত্রককে একটা তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। কোন কোন দেশ বাংলাদেশকে চাল, ডাল, আলু, পিঁয়াজ, সবজি, তেল, চিনি রফতানি করতে পারবে সেই তালিকাই করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই তালিকা তৈরি করতে কার্যত কালঘাম ছুঁটেছে বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রকের কর্তাদের। সূত্রের খবর, শুধু চালের হিসেব দেখেই কার্যত ভিরমি খেতে হয়েছিল খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে। কারণ, ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ড, পাকিস্তান, মায়ানমার – কোনও দেশই বাংলাদেশের চাহিদা মতো চাল দিতে নারাজ অথবা দেওয়ার মতো ক্ষমতাই নেই। একমাত্র তুরস্কই রাজি হয়েছিল বাংলাদেশকে চাহিদামতো চাল রফতানি করার। কিন্তু তাঁদের দেওয়া চালের রেট শুনেই চোখ কপালে উঠেছিল খাদ্য উপদেষ্টার। শেষ পর্যন্ত ভারতকেই ১০০ টন চালের বরাত দিতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ২৫ হাজার টন চিনি কিনেছে। রিপোর্ট বলছে, ভারতের চিনিই পাকিস্তান বেশি দামে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে।
সবমিলিয়ে চরম আর্থিক সমস্যায় ভোগা বাংলাদেশ, ভারত বয়কটের ডাক দিয়ে এথন চরম বিপাকে পড়েছে। বাংলাদেশ যে সমস্ত দেশগুলির কাছে চাল কিনতে চেয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ভিয়েতনাম দর দিয়েছিল ৮৬ টাকা, থাইল্যান্ড দর দিয়েছিল ৭৮ টাকা করে। কিন্তু তাঁরা চাহিদার সবটা পুরণ করতে পারবে না সেটাও বলে দিয়েছিল। অপরদিকে তুরস্ক বাংলাদেশের চাহিদামতো চাল সরবরাহ করতে রাজি হলেও তাঁদের দরে চাল কিনলে দাম পড়ে যেত কেজি প্রতি ১৪৫ টাকা। পিঁয়াজ ও ডিমের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি। সে দিক থেকে ভারত থেকে চাল আমদানি করলে বাংলাদেশের বাজারে চালের দাম হয় ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। ফলে বিভিন্ন দেশের দেওয়া কটেশন দেখে শেষ পর্যন্ত ভারতকেই ১০০ টন চালের বরাত দিতে বাধ্য হয় ইউনূস প্রশাসন। গত রবিবার থেকে ভারত থেকে ওই ১০০ টন চাল বাংলাদেশে ঢুকতেও শুরু করেছে। তিনমাসের মধ্যেই এই চাল বাংলাদেশে পৌঁছে যাবে বলেই জানাচ্ছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ২৫ হাজার টন চিনি আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে খবর। কিন্তু আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থা জানাচ্ছে, পাকিস্তানই দুবাই বা আরব আমিরশাহী এবং মালয়েশিয়া থেকে বিপুল পরিমান সাদা চিনি আমদানি করে। যা মূলত ভারত থেকেই দুবাইয়ের মার্কেটে যায়।
ফলে পাকিস্তান যে চিনি বাংলাদেশে রফতানি করবে, সেটা ভারতেরই চিনি। মাঝখান থেকে সুযোগ বুঝে পাকিস্তান কিছু বাড়তি ডলার কামিয়ে নেবে বাংলাদেশকে চিনি রফতানি করে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ভোলজা দাবি করছে, পাকিস্তানের আমদানি তথ্য অনুযায়ী, ভারতের পড়শি দেশটি ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৪৪৪ বার ভারতীয় সাদা চিনি আমদানি করেছে। এরমধ্যে চলতি বছরের জুন মাসেই ৪০টি চালান রয়েছে। যা ৫ শতাংশ বেশি। মনে করা হচ্ছে, এই বাড়তি চিনিই তাঁরা বাংলাদেশে রফতানি করছে। অর্থাৎ, বাড়তি দাম দিয়েই বাংলাদেশ ভারতীয় সাদা চিনি আমদানি করছে পাকিস্তান থেকে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ভোলজা আরও দাবি করেছে, ভারতীয় সাদা চিনি আমদানিকৃত দেশগুলির মধ্যে উপরের দিকে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। এবার ঘুরপথে বাংলাদেশও ঢুকে পড়ছে সেই তালিকায়। বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন সোমবারই জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ভারতের বাণিজ্য বিভিন্ন কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, এজন্য আলুর দাম মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা দুঃখজনক।
বর্তমানে বাংলাদেশে পেঁয়াজ, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কমেছে তবে চালের দাম ও তেলের দাম বেড়েছে। এরপরই তিনি দাবি করেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আলু আমদানি করা ছাড়া উপায় ছিল না। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবারই ভারত থেকে রেলপথে ৪৬৮ মেট্রিক টন আলু আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ যদি, ক্রমাগত ভারত বিরোধীতায় মেতে থাকে, এবং ভারতের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করে, তবে অচিরেই তাঁদের হাল পাকিস্তানের মতো হবে। কারণ, ভৌগলিক দিক থেকে ভারত থেকে চাল, সবজি, আলু-পিঁয়াজ আমদানি করতে খরচ অনেকটাই কম হয় বাংলাদেশের। ফলে বাজারে দামও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তান বা অন্য কোনও দেশ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হবে জলপথে অনেকটা পথ পার করতে হয়। যা সময়সাপেক্ষ আবার খরচসাপেক্ষ।
Discussion about this post