বাংলাদেশ সীমান্তে আরাকান অগ্রাসন এবং মিয়ানমারের জুন্টা বাহিনীর পশ্চাৎধাবন নিয়ে এখন কূটনৈতিক মহলে জোরদার চর্চা চলছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, চিনের মতো শক্তিশালী দেশের হাত যে জুন্টা বাহিনীর মাথায় রয়েছে তাঁরা কিভাবে আরাকান আর্মির মতো সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে পরাজয় স্বীকার করছে? আর এই প্রশ্নের মধ্যেই ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টার চিন সফর কৌতুহল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রীর বদলে অজিত ডোভাল আচমকা কেন চিনে গেলেন? এর পিছনে আসল উদ্দেশ্য কি মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন? কূটনৈতিক মহলে জল্পনা, অজিত ডোভালের বিষাক্ত চালে মিয়ানমারে জুন্টা বাহিনীর হাল বেহাল হয়েছে। সেখানে আরাকান আর্মির মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি একের পর এক এলাকা দখল করে জুন্টা সামরিক শাসককে পিছু হঠতে বাধ্য করছে। আর চিনও বাধ্য হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের মাথা থেকে হাত তুলে নিতে। ডোভালের চিন সফরের পর খুব শীঘ্রই হয়তো মিয়ানমারে ক্ষমতা বদল হয়ে যাবে। এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক মহলের একাংশ।
২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখের ভারত-চিন সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক একপ্রকার তলানিতে এসে ঠেকেছিল। বিশেষ করে ভারত চিনের প্রতি অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করেছিল। ভারতে বয়কট চিনা পণ্যের প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছিল। যাতে চিনের অর্থনীতি প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই মধ্যেকার সময়ে ভারত ও চিনের মধ্যে বহুবার সীমান্ত বিবাদ হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে। অক্টোবরে রাশিয়ায় বসেছিল ব্রিকস সম্মেলন। জানা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লদামির পুতিনের মধ্যস্থতায় এই ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
আর ওই বৈঠকের পর থেকেই ভারতের সম্পর্কে সুর নরম করতে শুরু করে চিন। সেবার ভারতের বিদেশমন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছিল, দু-দেশের সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু কূটনৈতিক মহলের অভিমত, পুতিন যুযুধান দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, বিশ্বের দুই সুপার পাওয়ার দেশের মধ্যে এই বিবাদের ফায়দা তুলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি আমেরিকা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দিকে হাত বাড়িয়ে আন্দামান সাগর ও দক্ষিণ চিন সাগরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। যা ভারত ও চিন, দুই দেশের কাছেই বিপজ্জনক হতে পারে। এখানে অজিত ডোভালেরও উর্বর মস্তিস্ক চিনকে চাপে ফেলতে সাহায্য করেছিল। কারণ, ওই সময়কালেই নয়া দিল্লিতে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির নেতাদের ডেকে এনে বৈঠক করেছিল ভারতের বিদেশমন্ত্রক। যা অনেকটাই ভারতকে সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে আসে।
কূটনৈতিক মহলের মতে, পুতিন যেভাবে ভারত ও চিনেরম মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপনের একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন, অজিত ডোভালের উর্বর মস্তিস্ক সেটাকেই আরও বড় মাত্রা দিয়ে দিয়েছে। জানা যায়, অজিত ডোভাল মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন কিছুদিন আগে। তার পরই আরাকান আর্মি ও তাঁদের সহযোগী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি অলআউট ঝাঁপিয়েছে মিয়ানমারের জুন্টাবাহিনীর ওপর। কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অজিত ডোভাল নিশ্চই এমন কিছু সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে যাতে চিনও খানিকটা পিছিয়ে আসে জুন্টাবাহিনীকে সাহায্য করতে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর, চিনের কমিউনিস্ট পার্টির এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সম্প্রতি মিয়ানমারের আরেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইনডিপেন্ডেন্ট আর্মির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন কুংমিন শহরে।
সেখানেও তাঁরা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চিনের প্রকল্পগুলির সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, চিন জুন্টাবাহিনীকে সাহায্য করা থেকে সরে আসছে। ডোভালের এই চালে সবচেয়ে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশের তদারকি সরকার। কারণ আরাকান আর্মি এখন তাঁদের সীমান্ত দখল নিয়েছে। এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উপর নিঃশ্বাস নিচ্ছে। যে সেন্ট মার্টিন নিজেদের দখলে নেওয়ার জন্য আমেরিকা শেখ হাসিনা সরকারকে ফেলতে সাহায্য করেছিল এবং তাঁর হাতের পুতুল মুহাম্মদ ইউনূসকে ঢাকার মসনদে বসিয়েছিল। কিন্তু অজিত ডোভালের একটা চালে বেকায়দায় পড়ল আমেরিকা। অন্যদিকে ভারত ও চিন কাছাকাছি চলে আসায়, বাংলাদেশও খানিকটা বিপদে পড়ল। এখআনে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, বেজিং কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে একটাও শব্দ উচ্চারণ করেনি। এমনকি বাংলাদেশকে খুব একটা সাহায্যের ঘোযণাও করেনি। উল্টে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আরাকান আর্মিকে সামলাতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনকে।
Discussion about this post