মাঝে মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু ভাইরাল হয় যা আমাদের সত্যিই অনুপ্রেরণা দেয়। প্রায় হেরে যাওয়া জীবনে আবার নতুন করে লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখায়। এই যেমন রাজস্থানের এক অখ্যাত গ্রামের অতি সাধারণ গৃহবধূর গল্পটি। মাত্র ৮ বছর বয়সে বিয়ে, দুটি সন্তানের পরও লড়াই করে হলেন ডাক্তার। ভারত চাঁদে পৌঁছে গেল, এবার মঙ্গলে অবতরণের চেষ্টা চলছে। কিন্তু তার পরও আকছাড় বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটছে আমাদের ভারতে। মাত্র আট বছর বয়েসেই বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর একটি শিশুর জীবনে কি হতে পারে? বয়স বাড়তেই দুই সন্তানের জননী হওয়া, সন্তানদের লালনপালন করা এবং সংসারের ঘানি টানা, এই তো? রাজস্থানের অখ্যাত এক গ্রামের আট বছরের বাল্য বধূ রুপার জীবন বৃত্তান্তও তাই হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নি, কারণ রুপারা ক্ষণজন্মা, তাঁরা গতানুগতিক জীবনে আটকে থাকতে জানে না। তাই তাঁর গল্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। কি সেই গল্প, আসুন শোনা যাক।
রাজস্থানের বুকে ছোট্ট একটা গ্রাম কারিনি। এই গ্রামের ছোট্ট একটি মেয়ে রূপার বিয়ে হয়ে যায় মাত্র ৮ বছর বয়েসেই। তখন তাঁর স্বামীর বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। বাল্যবিবাহ আইনত দণ্ডনীয় হলেও রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে এটা খুবই স্বাভাবিক। তাই রূপার জীবনও বাড়ির বড়দের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিল অচিরেই। তবে আট বছ বয়সে বিয়ে হলেও কয়েক বছর পর শ্বশুরবাড়িতে যায় রূপা। তার আগে রূপা ৮৬ শতাংশ নম্বর সহ দশম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সেবার রূপাই তাঁর গ্রামে প্রথম দশম মান উত্তীর্ণ হয়েছিল। এরপরই তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে চলে যেতে হয়। এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন, রূপা শ্বশুরবাড়িতেও যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, এই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই তাঁকে সেখানে পাঠায় তাঁর বাবা। ফলে উচ্চ মাধ্যমিকেও আরও ভালো ফল করে সে। এরপর স্বামী এবং শ্বশুরের পূর্ণ সমর্থনে রূপা যাদব NEET UG পরীক্ষায় বসেন। প্রথমবারের প্রচেষ্টায় তাঁর র্যাঙ্ক হয় ২২ হাজার। তবুও ভেঙে পড়েননি রূপা এবং তাঁর পরিবার। চরম আর্থিক সমস্যা থাকা সত্বেও তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন রূপাকে কোটা শহরে পাঠায় আরও ভালো কোচিংয়ের জন্য। হতাশ করেনি রূপাও, ২০১৭ সালের NEET UG পরীক্ষায় দুর্দান্ত র্যাঙ্ক করে সে। এরপর বিকানের সর্দার প্যাটেল মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন।
রূপার জীবনে লড়াই এখানেই শেষ হয়নি। ডাক্তারি কোর্সের প্রাক ফাইনাল পরীক্ষার ঠিক আগেই গর্ভবতী হন রূপা। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষার আগে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ এসে যায় তাঁর জীবনে। কিন্তু অদম্য রূপা, কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরও নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। এবং শেষ পর্যন্ত ২৬ বছর বয়সে সে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে। বর্তমানে রাজস্থানের নাগৌড় জেলার খারিয়া গ্রামের এক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত রূপা যাদব। দুই সন্তানের জননী রূপার জীবন কাহিনী আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে রূপা এখন লড়াই করছেন নিজের গ্রাম কারিনিতে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলতে চেয়ে।
Discussion about this post