আচমকা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্লান হয়েছে, নাকি জরুরি কাজের জন্য অন্য কোনও শহরে যেতে হবে। এর জন্য ট্রেনের তৎকাল টিকিটের উপরেই ভরসা। কিন্তু তার থেকেও বড় সমস্যা ট্রেনের টিকিট পাওয়া। এবার ভারতীয় রেল বেশ কয়েকটি বড় পদক্ষেপ নিল। তৎকাল টিকিট বিক্রির সময় পরিবর্তন করল। সেই সঙ্গে ধাপে ধাপে ওয়েটিং লিস্ট তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল। ফলে আগামীদিনে আপনি কনফার্ম টিকিট পাবেন বলেই দাবি রেলের।
চলতি বছরে ভারতীয় রেল বেশ কয়েকটি বড় পরিবর্তন এনেছে বা আনতে চলেছে। যা রেল যাত্রীদের আরও স্বাচ্ছন্দ্য এবং আরামদায়ক পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। প্রথমেই জানিয়ে রাখি, ১ জুলাই থেকে তৎকাল টিকিটের নিয়মে বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন থেকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বা এসি কামরার তৎকাল টিকিট বিক্রি শুরু হবে সকাল ১০টা থেকে। অর্থাৎ যদি আপনি এসি থ্রি টিয়ার, টু টিয়ার, থ্রি এসি ইকোনমি, এসি ফার্স্ট ক্লাস, এসি চেয়ার কারের জন্য তৎকাল টিকিট কাটতে চান তবে অনলাইন বা অফলাইন প্ল্যাটফর্মে সকাল ১০টা থেকে টিকিট কাটতে হবে। আবার নন এসি ক্লাসগুলি যেমন, স্লিপার ও চেয়ার কারের জন্য তৎকাল টিকিট বিক্রি শুরু হবে সকাল ১১টা থেকে। যদিও এবার থেকে তৎকাল এবং সুবিধা স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বাতিল করলে টিকিটেক দামের ৫০ শতাংশ টাকা কেটে নিয়ে ফেরত দেবে রেল।
রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্তর মতো প্রিমিয়াম ট্রেনে এবার পেপারলেস টিকিট দেওয়া শুরু করতে চায় ভারতীয় রেল। ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামীদিনে রাজধানী, দুরন্ত বা শতাব্দীর মতো ট্রেনে আর কাগজের টিকিট পাওয়া যাবে না। আপনার মোবাইলে টিকিট পাঠিয়ে দেবে আইআরসিটিসি। এরজন্য অবশ্যই যাত্রীদের একটি স্মার্টফোন থাকতে হবে। রেলের টিকিট এতদিন হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষাতেই ছাপা হতো। টিকিটের রিকুইজিশন ফর্মও এই দুই ভাষাতেই পুরণ করতে হতো। শীঘ্রই আপনি আপনার মাতৃভাষায় টিকিট কাটতে পারবেন। রেলের নতুন ওয়েবসাইটে এবার বিভিন্ন ভাষায় টিকিট কাটার সুবিধা পাওয়া যাবে।
তবে যে খবরটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল ভারতীয় রেল আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ওয়েটিং লিস্টের ঝামেলা তুলে দিতে চায়। ২০৩০ সালের মধ্যেই যাতে সবাই নিশ্চিত টিকিট হাতে পান সেই দিকেই জোর দিতে চলেছে তৃতীয় মোদি সরকার। বর্তমানে জনপ্রিয় রুটগুলিতে টিকিটের লম্বা লাইন একটা অন্যতম চিন্তার কারণ। টিকিট বিক্রির শুরুর দিনেই বহু ট্রেনে সব আসন বা বার্থ শেষ হয়ে যায়। ফলে যত দিন এগোয় ততই অপেক্ষামান টিকিটের তালিকা ভারী হতে থাকে। অর্থাৎ ওয়েটিং লিস্ট আকাশছুঁতে শুরু করে। রেলমন্ত্রক চাইছে, ধাপে ধাপে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে ওয়েটিং লিস্ট তুলে দিতে। যাতে সকলেই নিশ্চিতে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন। এরজন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে চলেছে রেল মন্ত্রক।
রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্ত বা জনপ্রিয় ট্রেনগুলির জন্য ক্লোন বা বিকল্প ট্রেন চালাবে রেল। অর্থাৎ, ওয়েটিং লিস্টে থাকা যাত্রীরা নিশ্চিত টিকিট পাবেন, আবার যারা টিকিট পাননি, তাঁরাও সেই ট্রেনে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। এছাড়া ভারতীয় রেল বেশ কয়েকটি রুটে সুবিধা স্পেশাল ট্রেন চালু করেছে। ফলে যাত্রীদের চাপ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেই রুটগুলিতে। ক্লোন ট্রেনগুলি মূল ট্রেনের কিছুটা পরেই ছাড়বে, যাতে প্রায় একই সময় গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যায়। অপরদিকে, চাহিদা মতো রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্তের মতো জনপ্রিয় ট্রেনে কামরার সংখ্যাও বাড়িয়ে ওয়েটিং লিস্টের যাত্রীদের নিশ্চিত টিকিট দিতে চাইছে রেল।
এরজন্য আরও বেশি সংখ্যায় কামরা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেলের নতুন কামরা এবং ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। সূত্রের খবর, পুরোনো আইসিএফ উৎকৃষ্ট রেক বা কামরা পুরোপুরি বাতিল করে নতুন এলএইচবি কামরা আনা হচ্ছে। ফলে আগামী কয়েক বছরে ৭০০০ থেকে ৮০০০ হাজার নতুন রেকের বরাত দিতে চলেছে রেল মন্ত্রক।
Discussion about this post