সালটা ১৯৪৮, ভারত সদ্য স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে। দেশ তো বটেই ,বাংলার বুকেও তখন ধিকি ধিকি স্বপ্নের নয়া মোড় তৈরি হচ্ছে। একদল যুবক যুবতীর চোখে উচ্ছ্বাসের আলো। তারা স্বাধীন। ঠিক এই সময় খেলার মাঠেও নতুন হাওয়া আনলেন বাংলার নীলিমা ।তৈরি হল নারী স্বাধীনতার নতুন যুগ। নীলিমার বয়স তখন ১৭। রক্ষণশীল পুরুষশাসিত বাঙালি সমাজকে তুড়ি মেরে নীলিমা পৌঁছে গেলেন অলিম্পিক্সের স্প্রিন্টে । দেশের মহিলা ট্রাক ইভেন্টে অংশ নেওয়া প্রথম অলিম্পিয়ন ।১৯৫২ সালে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে বসেছিল গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আসর। তিমিমা ঘোষের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৫ই জুন বাঙালি মনের তখন শুধুই ফুটবলার ফুটবল মেয়েদের ইচ্ছা করলে উপায় ছিল না খেলার মাঠে পা রাখার। ছোট পোশাকও আপত্তি ছিল প্রায় সকলের।
সার্কাস জিমন্যাস্টিক সে স্কুটি কয়েক মেয়েদের দেখা গেলেও অন্যান্য খেলায় একেবারেই নয় ৪৭ এর দেশ ভাগ যুবকদের স্বপ্ন ভেঙেচুরে দিল বিশেষ করে মেয়েদের জীবন গ্রাস করলো অন্ধকার দেশ স্বাধীন এর ঠিক পাঁচ বছর পর ১৯৫২ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্সের হেলসিঙ্কিতে ডাক করল নীলিমার। নীলিমা অংশ নিয়েছিলেন দুটি ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ও ৮০ মিটার হার্ডল। ১০০ মিটারের প্রথম রাউন্ডে প্রথম হিটেই ট্রাকে প্রথম স্বাধীন ভারতীয় মহিলা হিসেবে পা রাখেন নীলিমা। তৃতীয় স্হানাধিকারী আর্জেন্টিনার লিলিয়ান হেইনজের থেকে ০.১ সেকেন্ডের পরে শেষ করলেন নীলিমা। ১৩. ৬ সেকেন্ড। অন্যদিকে ৮০ মিটার হার্ডলে তিনি শেষ করলেন হিটের বিজয়িনীর চেয়ে ২ সেকেন্ড পরে । চ্যাম্পিয়ন হয় তো সেদিন হতে পারেনি নীলিমা কিন্তু তার মত অসংখ্য মহিলা স্বপ্ন তিনি পূরণ করতে পেরেছিলেন ।
ভারতের প্রথম মহিলা অলিম্পিয়ান তাও আবার বাঙালি। অলিম্পিক্সে তারপর ইতিহাস গড়েছেন বহু ভারতীয় মহিলা। পি টি ঊষা থেকে চিত্রা সোমান, পিভি সিন্ধু থেকে লাভলীনা কিংবা মীরা বাই চানু অনেকেই ভারতকে গর্বিত করেছেন। কিন্তু যিনি এই পথ দেখালেন সেই নীলিমা ঘোষ থেকে যাবে তাদের অন্তরে। ভারত তথা বাঙালি নারী সমাজ নীলিমাকে সেদিন বসিয়েছিলেন ‘আইকন’এর আসনে ।এক নিমিষে ঘুচে গিয়েছিল ‘মেয়ে’ হবার জ্বালা। পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষরা সেদিন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাঙালি সেই মেয়েকে আজ কদিনই বা মনে রেখেছেন।!
Discussion about this post