হঠাৎই তিনি ফিরে এসেছেন জনমানসে। বিনোদ গণপতি কাম্বলি। একসময়ের স্টাইলিস্ট ব্যাটিংয়ে যিনি মন কাড়তেন সকলের, খোঁজ ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড স্পর্শ করে গড়েছিলেন অনন্যা নজির। সেই সুপারস্টার আজ অতীতের ক্ষীণ ছায়া মাত্র। বিশ্বাসই হয় না টাকমাথা, একমুখ পাকা গোঁফদাড়ির প্রবীর মানুষটি একই লোক! যারা সেই পুরনো দিনে বাইশ গজের কাম্বলির ‘ধু৺য়াধার বল্লেবাজি’ দেখেছেন তাদের কাছে আচমকাই কাম্বলিকে দেখতে পাওয়া যেন অতীতের দরজা হুট করে খুলে যাওয়া। অথচ হিসাব মিলছে না। কাম্বলি বলতেই চলে আসে তার বাল্যবন্ধু সচিন তেন্ডুলকারের নাম ।যার ঝকঝকে শরীরী ভাষা দেখলে বোঝা দুষ্কর বয়স পেরিয়েছে ৫০ ।সেখানে কাম্বলি বয়সের উপরে জমেছে আরো বয়সের আস্তরণ। মনে হয় না সবে মাত্র পঞ্চাশের কোঠায় প্রবেশ করেছেন! আসলে বয়সের ভারের চেয়েও কাম্বলির অসুস্থতা অনেক বেশি ভারী হয়ে তাঁকে ঘিরে ফেলেছে। ২১ বছর ৫৪ দিন বয়সে পরপর দুটি টেস্টে হাকিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। প্রথমে ইংল্যান্ড ২২৪ তারপর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২২৭। ১৯৯৩ সাল সেটা ।সবে অর্থনৈতিক উদারতা পথে হাঁটা শুরু করেছে আমাদের দেশ ।চারপাশে পরিবর্তনের হাওয়া। দূরদর্শনের পর্দা থেকে ইএসপিএন এর মত বেসরকারি চ্যানেলের এরপর শুরু হবে ক্রিকেটের দুরন্ত সম্প্রচার। সেই নতুন যুগের মশাল যার হাতে তিনি সচিন টেন্ডুলকার ।কিন্তু কাম্বলি সাফল্য দেখে অনেকেই বলতে শুরু করলেন এই ছেলেটা সচিন কেও ছাপিয়ে যাবে। কাম্বলির টেস্ট অভিষেক ১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ।আর জীবনে তৃতীয় টেস্টের ব্যাট থেকে এসেছিল সেই ২২৪ ।পরের টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ২২৭। এরপর শ্রীলংকার সঙ্গে একটি জোড়া শতরান ,১২৫ ও ১২০ ।তিনটি ভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে পরপর তিনটি শতরান করার সেই নজির আর কেউ ছুঁতে পারেনি আজ ও ।এখানেই শেষ নয় ১৪ টেস্ট ইনিংসে হাজার রান। সেটাও ভারতীয় হিসেবে রেকর্ড। সেই সময় কামড়ি এক ঝলমলে তরুন যদি বিখ্যাত বন্ধু কেউ চায়ের জন্য করতে শুরু করেছে এর পরেই শুরু ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’ প্রবাদটি মিথ্যা হতে থাকা। কেউ ভাবি নি এরকম ঝকঝকে কেরিয়ার শুরুর পরেও মাত্র ২৩ বছর বয়সে জীবনের শেষ টেস্ট খেলে ফেলবেন কাম্বলি। মাঠের বাইরের ডিস্কোর নৈশ জীবন এবং হইহুল্লোড়এর ভিতরে শরীরটার ক্ষতি হতে থেকেছে ।নষ্ট হয়ে গিয়েছে ফিটনেস। ধ্বংস হয়েছে ফোকাসের নিবিড়তা। সারাজীবন জড়িয়েছেন অজস্র আইনি ঝামেলায়। নিজের আবাসনে গুন্ডামি, মদ খেয়ে গাড়ি চালানো, এমনকি পরিচারিকাকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে গ্রেপ্তার হতে হয়েছিল। বিয়ে টিকিনি, দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন। ক্রিকেট তাকে দুহাত ভরে দিয়েছিল তিনি ধরে রাখতে পারেননি। কেরিয়ারের ১৭ টি টেস্টে ৫৪.২ গড় কাম্বলির। হ্যাঁ শচীনের থেকেও বেশি। দারিদ্র দেখেছিলেন শৈশবে। বড় হয়ে স্বাচ্ছন্দ পেয়ে হয়তো ফোকাস নড়ে গিয়েছিল ।তাই আজকের প্রজন্মের কাছে তিনি এক অসুস্থ বুড়োটে মানুষ মাত্র। পৃথিবীর অনেক কিছুর মতোই কাম্বলির ছোটবেলায় খাতায় লাগানো এখন জলছবি আজ ।জলের মতো বয়ে গিয়েছে যে হারানো পৃথিবী ।যে পৃথিবীর গান আজ ভেসে আছে হারানো সময়ের অন্দরে।
ভারতের এই অবস্থার জন্য কাকে দায়ী করা উচিৎ হবে তা বলা মুশকিল। যদি বলা হয় ঘরোয়া ক্রিকেটে ভারতীয় সিনিয়র ক্রিকেটাররা...
Read more
Discussion about this post