গম্ভীরকে কোচ করা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল ভারতীয় বোর্ড এবং সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি। তাদের মধ্যে প্রথম নাম ছিল সৌরভ গাঙ্গুলির। তিনি সরাসরি বিরোধ না করলেও আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, যে কোচের কাজ সহজ নয়, তাই ভেবে চিন্তে ঠিক লোককে কোচ বাছা উচিৎ। কিন্তু গম্ভীরের ভারতীয় দলে চাহিদা, এবং উপর মহল পর্যন্ত তার সরাসরি যোগাযোগ থাকার কারনে, সৌরভ তার মন্তব্যের সঙ্গে গম্ভীরের কোন সম্পর্ক নেই বলে, বিতর্ক থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখেন। কিন্তু যারা বোঝার, তারা বুঝে যান সৌরভ কি বলতে চেয়েছেন। ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার পর গৌতম গম্ভীরের প্রথম পরীক্ষা ছিল শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি সিরিজ়। সেই পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন না গম্ভীর। সেখানেও ভারতীয় দল টি-টোয়েন্টি সিরিজ় খেলবে। কিন্তু ভিভিএস লক্ষ্মন কোচ হয়ে যাচ্ছেন সূর্যকুমার যাদবদের সঙ্গে।
আসলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পরেই ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফর রয়েছে। দুই সিরিজ়ে আলাদা দল খেলবে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ় চলাকালীনই ভারতের টেস্ট দল অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে। সেই দলের সঙ্গে যাবেন গম্ভীর। সেই কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাবেন না তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটে এই ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। এর আগে রাহুল দ্রাবিড় যখন দলের কোচ ছিলেন তখনও কিছু সিরিজ়ে তিনি দলের সঙ্গে যাননি। তখনও লক্ষ্মণই ভারতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। আবার সেই ঘটনা দেখা যাবে। তবে গম্ভীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম কোনও সিরিজ়ে দলের সঙ্গে যাবেন না তিনি।এখন ভীষন চাপে ভারতীয় দল। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে পর পর দু’টি টেস্টে হেরেছে তারা। ১২ বছর পর দেশের মাটিতে সিরিজ় হারতে হয়েছে। জোড়া হারের পরেই নিয়ম বদলেছে ভারতীয় দলে। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন গৌতম গম্ভীর।ওয়াংখেড়েতে ১ নভেম্বর থেকে টেস্ট শুরু হওয়ার আগে দু’টি অনুশীলন হবে। সেই দু’টি অনুশীলনে প্রত্যেক ক্রিকেটারকে থাকতে হবে। ৩০ ও ৩১ অক্টোবর সেই দু’টি অনুশীলন হবে। কোনও ক্রিকেটার চাইলেও তা এড়াতে পারবেন না। জানা গিয়েছে, দু’দিনই পুরো অনুশীলন হবে। সেখানে প্রত্যেককে ঘাম ঝরাতে হবে। কার কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা দেখে নেবেন কোচেরা। পুরো প্রস্তুতি নিয়েই ওয়াংখেড়েতে নামতে চাইছে ভারত।এই বিশেষ নির্দেশের নেপথ্যে একমাত্র কারণ ভারতের সাম্প্রতিক ফর্ম। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে পর পর দু’টি টেস্টে হার বড় ধাক্কা দিয়েছে রোহিতদের। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকায় এখনও সকলের উপরে রয়েছে ভারত। কিন্তু দ্বিতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তাদের ফারাক অনেক কমেছে। সামনেই অস্ট্রেলিয়া সফর। সেখানে দু’দল পাঁচটি টেস্ট খেলবে। তার আগে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট কোনও ভাবেই হারতে চাইছে না ভারত। কারণ, মুম্বইয়ে হারলে টেস্ট বিশ্বকাপের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়বে তারা। সে ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে দলের মনোবল অনেকটাই কমে যাবে। সেই কারণেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রোহিত, কোহলিদের।অন্যদিকে নিউজ়িল্যান্ডের কাছে জোড়া টেস্টে হারের পর প্রশ্ন উঠেছে ভারতের আগ্রাসী ক্রিকেট নিয়ে। একই প্রশ্ন উঠছে ইংল্যান্ডের ‘বাজ়বল’ নিয়েও। হারলেও তাঁরা খেলার ধরন বদলাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তবে ভারতের এই খেলার ধরন পছন্দ মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। যে ভাবে ক্রিকেট খেলার ধরনে বদল এসেছে তা ভাল লেগেছে তাঁর। ধোনি জানিয়েছে, পাঁচদিন খেলে ড্রয়ের মতো বিরক্তিকর আর কিছু নেই।স্টেট ক্রিকেট খেলার ধরনে এই বদল নিয়ে ধোনি বলেন, “এই ধরনের ক্রিকেটকে যে কোনও নামে ডাকা যেতে পারে। কিন্তু আসল কথা হল, ক্রিকেটে বদল এসেছে। ক্রিকেট খেলার ধরনে বদল এসেছে। আগে এক দিনের ক্রিকেটে যে রান করে দল জিতত, এখন টি-টোয়েন্টিতেও সেই রান তাড়া হয়ে যাচ্ছে। দিনের শেষে এটা খেলা একটা ধরন। এই আগ্রাসী ক্রিকেট আমার পছন্দ।” যদিও অনেকে মনে করছেন টেস্ট ক্রিকেটকে টি-টোয়েন্টির মত করে খেলার ফলে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাঁচদিনের ক্রিকেট।
Discussion about this post