অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে, মাঠে বুক চিতিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে হার না মানা লড়াই করা নীতীশ কুমার রেড্ডিকে মনে রাখবে সারা বিশ্ব। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যখন ভারতীয় টিম বিপর্যস্ত তখন বীরের মত লড়াই করে গেল ২১ বছরের এই ছেলেটা। যখন সবাই ধরেই নিয়েছে ভারত হারছে, তখন তার অসাধারণ ব্যাটিং আশা জাগালো সমস্ত ভারতবাসীর মনে। যাকে ক্রিকেটার বানানোর জন্য চাকরি ছেড়েছিলেন তার বাবা। সেই নীতীশ কুমার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেঞ্চুরি করার পর হাঁটু মুড়ে ব্যাট হাতে বসে পড়ল, আর গোটা দুনিয়ে দেখল ক্রিকেটে আর এক নতুন নক্ষত্রের উদয়। নীতীশ কুমার জীবনের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে, যখন ভারতের নামী দামী ক্রিকেটাররা সাজঘরে ফিরে গেছে, তখন বীর বিক্রমে মিড-অন ফিল্ডারের উপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি করলেন।জীবনের প্রথম টেস্ট সিরিজ, আর সেই প্রথম সিরিজেই ভরসা হয়ে উঠলেন এই নবীন খেলোয়াড়।
উচ্ছ্বসিত ভারতীয় সমর্থকরা আর আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়লেন নীতীশের বাবা।নীতীশ কুমার রেড্ডির ছোটবেলার কোচ কুমার স্বামী ছয় বছর বয়স থেকেই অলরাউন্ডারকে চেনেন। এবং তার জন্য, নীতীশের সাফল্যের গল্পটি হল তার বাবা মুত্যালু রেড্ডি নিজেই নীতীশ রেড্ডিকে ক্রিকেটার বানানোর কাজটি করেছেন। “প্রত্যেকেই তাদের সিনেমায় নায়ক হতে চায় কিন্তু যখন নীতীশের গল্প আসে তখন মুত্যালুই নায়ক,” তিনি বলেছিলেন। “এটি তার বাবার কঠোর পরিশ্রম যা নীতীশকে জীবনে অনেক কিছু অর্জন করতে উৎসাহিত করে। তার বাবার যা কিছু হারিয়েছে তার সাক্ষী তিনি। বিশেষ করে তার ঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তার চাকরি না থাকা এবং তার সময় নষ্ট করা নিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছিল, কিন্তু বাবা কখনো হাল ছাড়েননি।”শনিবার আইকনিক মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, সেই সমস্ত কঠোর পরিশ্রম সার্থক হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সফরে ইতিমধ্যেই মুগ্ধ হয়ে, নীতীশ বক্সিং ডে টেস্টে একটি বিশেষ সেঞ্চুরি করে ভারতকে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান।21 বছর বয়সী নীতীশ ২০২৪ এর শুরুতে অক্টোবরে বাংলাদেশের বিপক্ষে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল, এবং পার্থে তার টেস্ট অভিষেক হয়েছিল।মুত্যালু রেড্ডি বলেন “যখন সে আমাকে বলেছিল যে সে ভারতের হয়ে একটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে তখন আমি জানতাম না কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব। তবে আমি বা নীতীশ কেউই তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে এই কলটি আশা করিনি। 10 মিনিটের জন্য আমি হতবাক অবস্থায় ছিলাম,” । ” নীতীশ সত্যি কথা বলছে কিনা তা আমাকে দ্বীতিয়বার নিশ্চিৎ করতে হয়েছিল “
BCCI.tv কে নীতীশ জানান “সত্যি বলতে, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমি সিরিয়াস ছিলাম না,” । “আমার বাবা আমার জন্য তার চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এবং আমার গল্পের পিছনে অনেক ত্যাগ রয়েছে। একদিন, আমি তাকে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখে কাঁদতে দেখেছিলাম, এবং আমার মনে হয়েছিল, আমি এইভাবে ছন্নছাড়া জীবন কাটাতে পারি না। তারপর সিরিয়াস হয়ে গেলাম। আমি বাবাকে আমার প্রথম জার্সি দিয়েছিলাম এবং তার মুখে আনন্দ দেখেছিলাম।ভারতের হয়ে খেলার পর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি এবং তার পর আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ থেকে 6 কোটি টাকার মোটা রিটেনশন ফি সত্ত্বেও , পরিবারটি মধুরাওয়াড়ার বিশাখাপত্তনমের উপকণ্ঠে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকা অব্যাহত রেখেছে। “কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নীতীশকে SRH থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছিল শুধু তাই নয় 15 কোটির বেশি অর্থের প্রস্তাব করেছিল,” মুত্যালু আরও বলেছিলেন। “আমি যখন তাকে প্রস্তাবের কথা বলেছিলাম তখন নীতীশ আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন ‘কে আমাদের জীবন দিয়েছে, আমি আমার নাম কোথা থেকে পেলাম?’ আমি উত্তর দিলাম SRH. তখন নীতীশ বলেন বললেন, ‘আমি তাদের ছেড়ে যাব কেন? যদি আমি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য চলে যাই যা আমাকে আরও অর্থ দিচ্ছে আমাকে আবারও নিজেকে প্রমাণ করতে হবে, এমনকি যদি আমি একবার ব্যর্থ হই তাহলেও আমাকে বেঞ্চ করা হবে। কিন্তু SRH এর সাথে আমার কয়েকটা খারাপ স্কোর থাকলেও তারা আমাকে সমর্থন করবে।’ নীতীশের বাবা বলেন, আমি তাকে এই চিন্তা ধারার সাথে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছি।”
নীতীশের জীবন শুরু হয়েছিল দুষ্টু শিশুদের মত করেই ।মুত্যালু বলেছিলেন “আমি শুধু চেয়েছিলাম যে তার মন সেই সময়ে কিছু দ্বারা আবিষ্ট হোক কিন্তু অবশেষে সে ক্রিকেটে তার মনের ডাক খুঁজে পেয়েছে,” । সেই নীতীশ কুমার জীবনের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে, ভারতের যখন নামী দামী ক্রিকেটাররা সাজঘরে ফিরে গেছে, তখন বীর বিক্রমে মিড-অন ফিল্ডারের উপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি করলেন।জীবনের প্রথম টেস্ট সিরিজ, আর সেই প্রথম সিরিজেই ভরসা হয়ে উঠলেন এই নবীন খেলোয়াড়। উচ্ছ্বসিত ভারতীয় সমর্থকরা আর আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়লেন নীতীশের বাবা। একদিন ছেলের ক্রিকেটের স্বপ্ন পূরন করবেন বলেই চাকরি ছেড়ে ছিলেন নীতীশের বাবা। একজন বাবা হয়ে সবটা উজার করে দিয়েছেন ছেলের জন্য। এমন একটা দিন দেখার জন্যই। তার ত্যাগ পরিশ্রম কোনটাই বিফলে যায়নি। বিরাট রোহিতরা যখন ব্যর্থ হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তখন ভারতীয় দলের ত্রাতা হয়ে ফিরেছেন এই তরুন। ভারতীয় দ্বিগজদের পিছনে ফেলে অস্ট্রেলিয়ায় তৃতিয় কনিষ্ঠ ভারতীয় হিসাবে সেঞ্চুরি করলেন নীতীশ।
Discussion about this post