পাননি মা-বাবার স্নেহ, যত্ন ও আদর। কারণ খুব ছোটবেলায় হারিয়েছিলেন মা-বাবাকে। কার্যত অনাথ সেই শিশুই আজ ইতিহাস গড়লেন প্যারিস অলিম্পিকে। ক্রিকেট-ফুটবলের মতো যে খেলার জনপ্রিয়তা ভারতে নেই বললেই চলে, সেই খেলাকেই আপন করে নিয়ে এক অসম লড়াই লড়েছিল ছোট্ট ছেলেটা।
অমন শেরওয়াত, প্যারিস অলিম্পিকে যখন ব্রোঞ্জ দিতে পোডিয়ামে জাতীয় পতাকা নিয়ে দাঁড়ালেন, তখন তাঁর বয়স ২১ বছর ২৪ দিন। তিনিই ভারতের হয়ে সর্বকনিষ্ঠ অ্যাথলিট, যিনি কোনও অলিম্পিক্সে পদক জিতলেন। এর আগে এই রেকর্ড ছিল ইতিহাস সৃষ্টিকারী শাটলার পি ভি সিন্ধুর। তিনি ২০১৬ রিও অলিম্পিকে রুপো জিতেছিলেন ২১ বছর ১ মাস ১৪ দিন বয়সে। ফলে অমনই ভারতের সর্বকনিষ্ঠ পদকজয়ী অলিম্পিয়ান হলেন। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ের বাইরেও অমনের লড়াই কম রূপকথার নয়। কারণ, বিপুলা এই পৃথিবীতে অমন সম্পূর্ণ একা। কারণ খুব ছোট বয়স থেকেই তাঁকে অনাথ জীবনযাপন করতে হয়েছে। আসুন এই অনাথ ছেলেটির অলিম্পিক্স পদক জয়ের সরণী সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। যা সত্যিই আপনাকে অনুপ্রেরিত করবে জীবনের পথচলায়।
২০০৩ সালের ১৬ জুলাই হরিয়ানার বিরোহার গ্রামে জন্ম অমন শেরওয়াতের। তাঁর যখন মাত্র ১০ বছর বয়স তখনই কঠিন রোগে অমৃতলোকে চলে যান অমনের মা। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই রোগভোগে মারা যায় অমনের বাবা। ফলে বিপুলা এই পৃথিবীতে মাত্র ১১ বছর বয়েসেই অনাথ হয়ে যায় ছোট্ট ছেলাটা। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া সেই ছেলেটাকে তাঁর কাকা ভর্তি করে দিলেন দিল্লির বিখ্যাত গুরুকূল ছত্রশালে। যে ছত্রশাল বারবার ভারতকে অলিম্পিক্সে পদক দিয়ে এসেছে। অমনের কাকা ভেবেছিলেন, অনাথ অমন যদি ছত্রশালের শৃঙ্খলায় থেকে মানসিকভাবে চাঙ্গা হতে পারে। অমনের স্থানীয় অভিবাবক তাঁর কাকার সেদিনের ভাবনাটা কতটা ফলপ্রসু ছিল, সেটার প্রমান ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট। প্যারিস অলিম্পিক্স থেকে ব্রোঞ্জ জিতে নিলেন ২১ বছরের অমন। ২০১২ থেকে ২০২৪, এই ১২ বছরে অনাথ অমনের লড়াইটা কম রূপকথার ছিল না। শুক্রবার রাতে প্যারিস অলিম্পিকের পুরুষদের ফ্রি স্টাইল কুস্তিতে ৫৭ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতলেন অমন শেরওয়াত। বিনেশ ফোগতের মতো তাঁরও ওজন বেশি ছিল। কিন্তু খুব অল্প সময়ে ওজন কমিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী পুয়ের্তো রিকোর ডিরায়ান ক্রুজকে হারিয়ে পদক তালিকায় নাম তুলে নিলেন। সেই সঙ্গে নিজের নাম ইতিহাসের পাতায় তুলে ফেললেন হরিয়ানার এই অনাথ কুস্তিগির।
মাত্র ১১ বছর বয়সে বাবা-মাকে হারানোর পর দিল্লির ছত্রশাল স্টেডিয়ামই তাঁর ঘরবাড়ি হয়ে গিয়েছিল। প্রচন্ড মানসিক অবসাদ গ্রাস করা ছোট্ট ছেলেটাকে আগলেছিলেন ছত্রশালের কোচিং স্টাফ এবং অন্যান্য কর্মীরা। আর অমনও কুস্তিকে আগলে ধরে বাবা-মায়ের অভাব মেটানোর আপ্রাণ লড়াই চালিয়ে যায়। যে ছত্রশাল ভারতকে একের পর এক অলিলম্পিক পদকজয়ী উপহার দিয়েছে। সেই ছত্রশালে অমন ব্রোঞ্জ পদক জেতার পর উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙে যায়। কারণটা অবশ্যই ভিন্ন। ২০০৮ সাল থেকে একের পর এক অলিম্পিক্সে সুসীল কুমার, বজরং পুনিয়া, রবি দাহিয়ার পর এবার অমন শেরওয়াত। ছত্রশালের গুরুকূল থেকেই এসেছে সব পদক। কিন্তু প্রচন্ড মানসিক অবসাদে ভোগা ছোট্ট অনাথ অমনকে আগলে এক বজ্রকঠিন কুস্তিগির তৈরি করার পিছনেও রয়ে গেল অনেক রূপকথা। সেই গল্প না হয় অন্যদিন হবে।
Discussion about this post