শচিন তেন্ডুলকর নামটা শুনলেই যে মুখটা মনে ভাসে তা হল সদা হাস্য শান্ত সৌম্য চেহারা, যাকে আপনি শ্রদ্ধা না করে পারবেন না। মাঠে যারা শচিনের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী তারাই মাঠের বাইরে শচিনকে শ্রদ্ধা করে তার খেলার প্রতি সম্মান এবং ব্যবহারের জন্য। শচিনের খেলায় মোহিত হয়ে সারা বিশ্ব তাকে ক্রিকেটের ভগবান বলে ডাকে। যাকে দেখে অনেকে ক্রিকেটার হতে চেয়েছে এবং সাফল্যও পেয়েছে। তার ছবি যাদের ঘরে ভগবানের মত শ্রদ্ধায় স্থান পেয়েছে, তাদের অনেকেই শচিনের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছেন এবং শচিনের অধিনায়কও হয়েছেন। কিন্তু এই শচিনকেই ভুল বশত অসম্মান করে চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন যিনি, তিনি হলেন জিম্বাবুয়ের হেনরি ওলোঙ্গা। ভুল বশত এই কথাটা,এই জন্য বললাম যে ওলোঙ্গা যখন ক্রিকেট শুরু করে তখন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট দলে তিনিই একমাত্র কালো চামড়ার ক্রিকেটার। দারুন শুরু করলেও, তার ওপর থ্রোয়িং এর চার্জ আসে। তাকে বলা হয় তার বোলিং-এ পরিবর্তন আনতে হবে আর সেটাও অন্য কোন দেশ থেকে।
অনেক দেশ থাকলেও ওলোঙ্গা বেছে নিয়েছিল ভারতকে, চেন্নাইয়ের এম আর এস স্পেস ফাউন্ডেশনকে। আর এটা হল সেই জায়গা, যেখানে শুধু এক জনের নামই শোনা যেত, তিনি হলেন শচিন। তখন শচিনের ক্যারিয়ারের গ্রাফ ছিল সাংঘাতিক, দু-বছরের স্টেট ক্যারিয়ারে ৮০ দশমিক ৭৪ এভারেজ এবং ১৩৪০ রান। আর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এক বছরে ৪৭.৩ এভারেজ এবং ১০৯০ রান করেছিলেন সেটাও মাত্র ১৬ বছর বয়সে।তার পরতো শচিনের গ্রাফ উপরদিকে উঠতেই থাকে। এরপর আসে শচিনের জিম্বাবুয়ে সফর ১৯৯৮ সালে। যেখানে ত্রিদেশীয় সিরিজে মুখোমুখি ভারত শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়ে। যার ফাইনালে ভারত এবং জিম্বাবুয়ে উঠে গিয়েছিল আগেই, তবুও একটি নিয়ম রক্ষার ম্যাচ ছিল ভারত বনাম জিম্বাবুয়ের মধ্যে,যেখানে ওলোঙ্গা প্রথম ওভারে সৌরভ দ্বিতীয় ওভারে রহুল এবং তৃতিয় ওভারে শচিনকে দু-বার আউট করেন, কারণ প্রথমবার আউট করে সেলিব্রেশন করতে যাবেন এমন সময়ে আম্পায়ার নো বল কল করেন। কিন্তু পরের বার আবার শট বল করেন এবং শচিন ক্যাচ আউট হন। যখন শচিন সাজ ঘরের দিকে ফিরে যাচ্ছেন তখন ওলোঙ্গা যে ধরনের উত্তেজনা প্রকাশ করেছিলেন শচিনকে দেখিয়ে, তা শচিনের মত শান্ত স্বভাবের মানুষকে শুধু আঘাত করেনি আহত বাঘে পরিনত করেছিল।
যখন জাডেজা শচিনকে বলেন কি পাজি, এভাবে আউট হয়ে গেলে,তখন শচিন একবার ওলোঙ্গার দিকে তাকিয়ে নিয়ে জাডেজাকে বলেন, ফাইনালের জন্য অপেক্ষা কর। সাজঘরে ফিরে শচিন নেট প্যাক্টিসে চলে যান, এবং শুধু শটবল খেলার অভ্যাস করেন, পরের দিনও তাই, শুধু শটবল অভ্যাস করেন আর ফাইনালে ওলোঙ্গার মুখো-মুখি হওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকেন, বদলা না নেওয়া পর্যন্ত ঠিক করে ঘুমাতে পর্যন্ত পারেন নি। এর পর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষন। জিম্বাবুয়ে রননীতি তৈরী করে রেখেছিল যে শচিন নামলেই ওলোঙ্গাকে বল করতে পাঠাবে। শচিন আর সৌরভ নামল ওপেন করতে। ওলোঙ্গা শুরু করল শট বল দিয়ে আর শচিন-চার,ছয়ের বন্যায় ধুয়ে দিতে থাকল সমস্ত অপমান। ম্যাচ শেষে সৌরভের ৯০ বলে ৬০ রান আর একই বল খেলে-১২ টা চার আর ৬টা ছয়ের সহযোগে শচিনের ১২৪ রান। আর ৫০ রান করেন মাত্র ২৪ বলে। কোন উইকেট না হারিয়েই ভারত ম্যাচ জিতে যায়।ওলোঙ্গার ভিতরে হাহাকার পড়ে গিয়েছিল চুপচাপ একটি কোন বসেছিল।
Discussion about this post