শিলিগুড়ি করিডোরের কাছে বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ ক্যাম্পে হামলার ঘটনা। গুলির লড়াইয়ে প্রাণ গেল এক অনুপ্রবেশকারীর। এই ঘটনা নিয়ে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ এবং বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি-র মধ্যে চলে দিনভর চাপানউতোর। এমনিতেই শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন নেক নিয়ে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা লাগাতার হুমকি দিয়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে এই এলাকার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ভারতীয় সেনা, বিএসএফ ও আইএনএ-কে নিয়ে এক বিশেষ দল তৈরি করেছে। বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। কারণ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বহু জায়গায় কাঁটাতার নেই।
তার ওপর এই শীতকালের সময় উত্তরবঙ্গের বহু এলাকা ঘণ কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যায়। অভিযোগ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফের অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলছিল। বিএসএফ টের পেয়ে তা বাঁধা দিতে গেলে সীমান্ত পেরিয়ে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী ভারতের এলাকায় ঢুকে বিএসএফ শিবিরে হামলা চালায়। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভারত-বাংলাদেশের এই উত্তেজনাপূর্ণ সময়ের আবহে এই ঘটনা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। জানা যাচ্ছে, শুক্রবার প্রায় ভোর রাতে শিলিগুড়ি করিডর লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার বেরুবাড়ির কাছে একটি গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আনোয়ার হক নামে এক দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছেন সাধন সাউরি নামে এক বিএসএফ জওয়ান। আনোয়ার বাংলাদেশের পঞ্চগড় এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। যা নিয়ে শুক্রবার দিনভর বিএসএফ এবং বিজিবি-র মধ্যে চাপানউতোর চলে।
এমনিতেই অস্থির বাংলাদেশ। তার উপর এই ঘটনা। নজরদারি আরও বাড়িয়েছে বিএসএফ। কাঁটাতার বিহীন ‘জিরো পয়েন্ট’ ও ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটসাঁট করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় জন সংযোগ এবং মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে বিএসএফের পক্ষ থেকে। যে কোনও অনুপ্রবেশ, গরু পাচারের চেষ্টা ও কোনও রকম হেরফেরের ঘটনা নজরে এলে গ্রামবাসীরা যাতে বিএসএফকে জানায়, সেটাও বলা হয়েছে। শুক্রবার ভোরের ঘটনা নিয়ে বিএসএফ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পাচারকারীদের ২০-২৫ জনের একটি দল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছিল। ভারতের সীমান্তের ১০০-১৫০ মিটার ভিতরে জলপাইগুড়ির সিংপাড়া গ্রামে চলে এসেছিল তারা। এই গ্রামটি একেবারে সীমান্তে অবস্থিত এবং এখানকার সীমান্ত ওপেন বর্ডার। অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে চেষ্টা করা হয় প্রথমে। কিন্তু অভিযোগ, বাধা দেওয়ার পরেও পিছু হঠেনি অপরাধীরা। লাঠি নিয়ে হামলা চালায়, তাদের হামলায় জখম হন সাধন বাউড়ি নামে এক জওয়ান। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্টান্ট গ্রেনেড ছোড়ে বিএসএফ জওয়ানরা। তাতেও অনুপ্রবেশকারীরা না দমে গেলে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায় বিএসএফ। পরে দেখা যায় ওপেন বর্ডারের ওই পাশে একটি দেহ পড়ে রয়েছে, যা অনুপ্রবেশ করতে আসা বাংলাদেশের নাগরিকের বলে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বাড়তি নজরদারি শুরু করেছে বিএসএফ। সীমান্তের খোলা অংশগুলিতে কাঁটাতার বসানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। সেই কারণে উত্তর ২৪ পরগণার স্বরুপনগর এলাকায় সোনাই নদীর তীরে কাঁটাতার দিতে গেলে শনিবার সকালে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। জানা যাচ্ছে, এই এলাকায় বিএসএফ-কে বাঁধা দেয় বিজিবি জওয়ানরা। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বাদানুবাদও হয়েছে। বিএসএফের ১৪৩ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের জওয়ানরা শনিবার সকালে নদী বরাবর জিরো পয়েন্টে কাঁটাতার দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। সেই সময় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অর্থাৎ বিজিবি তাতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। তারপর বিএসএফ ও বিজিবির আধিকারিকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। কাঁটাতার দেওয়ার সময় আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন মানা হয়নি বলে বিজিবি অভিযোগ নিয়ে গোলমাল। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে তুমুল উত্তেজনাকর পরিস্থিতি চলছে।
Discussion about this post