ছোট বেলায় ভীষন দুষ্টু ছিলেন, আর পাঁচ জন শিশু যেমন হয়ে থাকে। কিন্তু অল্প বয়সেই তিনি বুঝে যান তার জন্য তার বাবা কি অপরিসীম কষ্ট এবং ত্যাগ বহন করে চলেছেন। যেদিন তিনি দেখলেন অর্থ কষ্টের কারণে বাবার চোখে জল, সেদিন তিনি ঠিক করলেন তাকে নিজেকে এমন কিছু হতে হবে, যা তার বাবাকে গর্বিত করবে। তখন থেকেই বদলাতে শুরু করেন নিজেকে। আজ সারা দেশবাসীর সঙ্গে নীতীশ কুমার রেড্ডির সাফল্যে গর্বিত তার বোনও। বক্সিং ডে টেস্টে মেলবোর্নে শতরান করেন ভারতীয় অলরাউন্ডার। তাঁর পরিবার মাঠে বসে সেই খেলা দেখেছে। বাবা মুতিয়ালা রেড্ডিকে দেখা গিয়েছিল প্রার্থনা করতে। সঙ্গে ছিলেন বোন তেজস্বীও। রবিবার মধ্যাহ্নভোজের সময় তাঁদের দেখা হয় সুনীল গাওস্কর এবং রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে। সেই সময় তেজস্বী বলছিলেন তাঁর সঙ্গে নীতীশের সম্পর্কের কথা।
মেলবোর্নে এর আগে কোনও ক্রিকেটার আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শতরান করেননি। নীতীশই প্রথম। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে মাত্র ২১ বছর বয়সে শতরান করার নজিরও গড়েছেন তিনি। তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে বোন নাম নিলেন জোসেফ বারবেরা এবং উইলিয়াম হ্যানার তৈরি বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র টম এবং জেরির। সেখানে একটি বেড়াল এবং ইঁদুরের মধ্যে রসায়ন দেখানো হয়। তারা একে অপরের সঙ্গে যেমন লড়াই করে, তেমনই আবার একে অপরকে ছাড়া থাকতেও পারে না। তেজস্বী বলেন, “আমাদের সম্পর্ক অনেকটা টম এবং জেরির মতো। তবে আমরা একে অপরকে খুব ভালবাসি। সেটা হয়তো আমরা প্রকাশ করি না। আমি খুবই গর্বিত। নীতীশ বার বার বলত, এক দিন দাদার জন্য আমি গর্ব করব। শনিবার ছিল সেই দিন।”
ভারতের জার্সিতে খেলার স্বপ্ন সত্যি হয়ে গিয়েছে। টেস্টে শতরান করার স্বপ্নও সত্যি হয়ে গিয়েছে। আর এই সবের মাঝে নীতীশ কুমার রেড্ডির আরও একটি স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। বিরাট কোহলির থেকে প্রশংসা পেয়েছেন তিনি।
মেলবোর্নে বক্সিং ডে-র তৃতীয় দিনে শতরান করেন নীতীশ। ১৮৯ বলে ১১৪ রানের সেই ইনিংস ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। যে ইনিংসের পর বিরাট তাঁর প্রশংসা করেছেন। নীতীশ বলেন, “ছোটবেলা থেকে বিরাট ভাইয়ের খেলা দেখছি। আমি ওর বিরাট ভক্ত। বড় হয়ে ওর সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি। প্রথম টেস্টে বিরাট যখন শতরান করে, নন-স্ট্রাইকার ছিলাম আমি। দারুণ লাগছিল। আমি শতরান করার পর বিরাট আমার প্রশংসা করে। ও আমার কাছে এসে বলে, ‘খুব ভাল খেলেছ। দলকে তুমি ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছ।’ সেই সময় দারুণ আনন্দ হচ্ছিল। আমার কাছে খুব স্মরণীয় মুহূর্ত ওটা।”
শনিবার নীতীশ যখন ৯৯ রান করে নন-স্ট্রাইকারের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেই সময় ব্যাট করছিলেন মহম্মদ সিরাজ। পর পর ওয়াশিংটন সুন্দর এবং জসপ্রীত বুমরাহ আউট হয়ে যাওয়ায় নীতীশ আর শতরান করতে পারবেন কি না তা নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। ব্যাটার হিসাবে তেমন ভরসা করা যায় না সিরাজের উপর। কিন্তু প্যাট কামিন্সের ওভারের তিনটি বল তখনও বাকি। ওই তিন বল সিরাজ খেলতে না পারলে নীতীশের শতরান করা হত না। শতরানকারী ব্যাটার বলেন, “শেষ বলে সিরাজ ডিফেন্স করার পর দর্শক চিৎকার করছিল। আমার শতরানের পরেও অত চিৎকার শুনিনি, যতটা সিরাজের ওই ডিফেন্সের পর শুনেছিলাম। তবে সিরাজ যে ভাবে ওই তিনটে বল খেলেছিল, সেটা আমার ভাল লেগেছে। শতরান করার পর আমি ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম সিরাজকে।” আর সব থেকে খুশি হয়েছেন নীতীশের বাবা, ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর জন্য চাকরি ছেড়েছেন আত্মীয়দের সমালোচনা শুনেছেন আজ তিনি নিজেকে সঠিক প্রমান করতে পেরেছেন। শুধু একটা সেঞ্চুরি দিয়ে সব কিছুর জবাব দেওয়া সম্বব নয়। এখনও অনেক পথ বাকি। তবে প্রথম আন্তর্জাতিক সিরিজেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি অনেক দুর যাবেন। তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া।
Discussion about this post