ভোট আসে ভোট যায়, কিন্তু ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে থাকে না নেতাদের। আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের ভগবন্তপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষকিরা এলাকা বুধবার ভোট বয়কটের পোস্টারে পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে গেল। নো রোড নো ভোট, নো ব্রিজ নো ভোট এমনই অসংখ্য পোস্টার গ্রামবাসীরা সাঁটিয়ে দিলেন এলাকাজুড়ে।
ঘোষকিরা এলাকায় আশেপাশের ৮-১০টি গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, বিগত ৪০ বছর ধরে অত্যন্ত বেহাল দশায় রয়েছে ঘোষকিরা থেকে শীর্ষা পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তা। আজও পিচের প্রলেপ পড়েনি। ফলে কাঁচা রাস্তাটি একটু বৃষ্টি হলেই যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে ওঠে। চরম সমস্যায় পড়েন স্কুল পড়ুয়া থেকে গ্রামের সকলে। বিগত লোকসভা, বিধানসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোট মিটতেই তা পালন করার প্রয়োজন মনে করেননি কোনও জয়ী প্রার্থী। আাগমী ২০ মে এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহন। তার আগেই গ্রামবাসীরা ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে একাধিক পোস্টার সাঁটিয়ে দিয়েছেন এলাকাজুড়ে।
স্থানীয়দের দাবি, ঘোষকিরা, শীর্ষা, খুড়শী, কোল্লা, ধরমপোতা, বারাসাত, রঘুনাথপুর-সহ একাধিক গ্রামের মানুষের যাতায়াত ওই গ্রামীণ রাস্তার উপর দিয়ে। বর্ষার সময় ওই রাস্তায় রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বিগত ভোটেও শাসকদলের নেতারা এলাকায় এসে পাকা রাস্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছরেও তা পালন করেনি পঞ্চায়েত বা জেলা প্রশাসন। শুধু রাস্তা নয়, সমস্যার দোসর একটি কাঠের ব্রিজও। গ্রামবাসীদের দাবি, ঘোষকিরা থেকে কেশডাল হয়ে ভগবন্তপুর বা কৃষ্ণপুর যাওয়ার পথে শিলাবতী নদীর উপর একটি কাঠের সেতু রয়েছে। জানা যাচ্ছে, কয়েক বছর আগে ভগবন্তপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত শিলাবতী এবং কেঠিয়া নদীর উপর চারটি কাঠের সেতু নির্মান করে দিয়েছিল। তিন বছর আগের বন্যায় তিনটি সেতু ভেসে যায়। দাবি, একটিমাত্র সেতু গ্রামবাসীরা নিজেদের পয়সায় মেরামতি করে টিকিয়ে রেখেছেন। সেটিও এখন ভগ্নপ্রায় দশা। ফলে প্রাণ হাতে করেই যাতায়াত করতে হচ্ছে ওই কাঠের সেতু দিয়ে। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। গত লোকসভায় আরামবাগ থেকে মাত্র ১,১৪২ ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূলের অপরূপা পোদ্দার ওরফে আফরিন আলি। এবার সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কথা মাথায় রেখে প্রার্থী বদল করেছে শাসকদল। এবার তাঁরা প্রার্খী করেছে মাতালি বাগকে। তবুও মাধারণ মানুষের ক্ষোভ কমছে না বলেই দাবি বিরোধীদের। স্থানীয় বিজেপি নেতার বক্তব্য, শুধু ভোট বয়কট নয়, ঘোষকিরা-সহ আশেপাশের সমস্ত গ্রামের মানুষ এবার তৃণমূলকেই বয়কট করছেন।
আরামবাগ লোকসভা জুড়েই বিজেপি জোরদার প্রচার শুরু করেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল জিতে এলাকার কোনও উন্নয়ন করেনি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পূরণ করেননি তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ। এবার বিজেপির প্রতিশ্রুতি আরামবাগে বিজেপির প্রার্থী অনুপ কান্তি দিগারকে ভোট দিয়ে লোকসভায় পাঠালে এলাকাবাসীর সমস্ত দাবি তিনি পূরণ করবেন।
লোকসভা ভোটের ঠিক মুখেই আরামবাগের বিস্তৃর্ণ এলাকায় ভোট বয়কটের ডাক দেওয়ায় কার্যত অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল তৃণমূল। বিদায়ী সংসদকে টিকিট না দিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ কিছুটা প্রসমনের চেষ্টা করলেও তৃণমূল যে খুব একটা লাভবান হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। চন্দ্রকোনার ঘোষকিরা-সহ আশেপাশের গ্রামগুলিতে ভোট বয়কটের পোস্টার বিজেপির চক্রান্ত বলেই দায় এড়াতে ব্যস্ত শাসকদল।
Discussion about this post