না থিমের পুজো নয়, বরং নিয়মনিষ্ঠা মেনেই হচ্ছে মায়ের পুজো। অথচ এবারের দুর্গামূর্তি নজর কাঁড়ছে গোটা জেলার। ইতিমধ্যেই দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন সহস্রভূজা দুর্গা দেখতে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন, দশভূজা দুর্গা নয়, এবার বাঁকুড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামে হচ্ছে সহস্রভূজা দুর্গার আরাধনা।
বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের সারেঙ্গা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম খামানির জগদানন্দ আশ্রমে বিগত ৩৫ বছর ধরে দুর্গাপুজো হচ্ছে। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রামে আগে কোনও পুজো হতো না। সেই সময় জঙ্গলমহল মানেই ছিল আতঙ্কের আরেক নাম। মাওবাদীদের দাপাদাপি, সেই সঙ্গে আধা সেনার ভারী বুট ও বেয়োনেটের আনাগোনা। সেই সময় খামানি-সহ আশেপাশের গ্রামে কোনও দুর্গাপুজো হতো না। ফলে এখানকার মানুষজন পুজো বা অঞ্জলি দিতে পারতেন না। তখনই জগদানন্দ আশ্রমের প্রধান গুরুদেব দুর্গাপুজোর আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেন। আর তাতে সকলের সমান অংশগ্রহনের সুযোগ করে দেন। বর্তমান আশ্রম প্রধান অধ্যক্ষ মহেশ্বরানন্দ গিরি জানালেন, মায়ের নির্দেশেই তিনি এবারের দুর্গামূর্তি গড়েছেন। তাই এবার মায়ের এক হাজার হাত।
সাধারণত আমরা দশভূজা দুর্গার পুজো করি। তবে কলকাতা বা রাজ্যের বড় শহরে থিমের পুজোয় নানান নান্দনিক মূর্তি দেখা যায়। কিন্তু মা দুর্গার মূর্তিতে এক হাজার হাত খুব কমই শোনা গিয়েছে। বাঁকুড়ার খামানি গ্রামের জগদানন্দ আশ্রমে এই সহস্রভূজা দুর্গার আরাধনা দেখতে ভক্তদের ঢল নেমেছে। এখানকার পুজোর এক উদ্যোক্তা জানালেন, সমস্ত নিয়ম মেনেই মায়ের পুজো হয়। আর এই আশ্রমে সকলেরই প্রবেশাধিকার রয়েছে। ফলে আশেপাশের অনেক গ্রামের মহিলারা পুজোয় উপাচারে অংশ নিতে পারেন। শুধু রাজ্যই দেশ বিদেশের বহু ভক্ত আসেন জগদানন্দ আশ্রমের পুজো দেখতে।
এখানকার পূজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য পাঁচ দিন ধরে হরিনাম সংকীর্তন চলে। পাশাপাশি গীতাপাঠ, চণ্ডীপাঠ, হোমযজ্ঞ হয় নিয়মনিষ্ঠা মেনেই। নবমীর দিন কুমারীপূজা এবং একাদশিতে নরনারায়ন সেবা হয়। তবে খামানি গ্রামের জগদানন্দ আশ্রমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট হল প্রতি বছরই এখানে দুর্গাপ্রতিমার রূপ বদলে যায়। এবারও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। এবার যেমন সহস্রভূজা দুর্গার আরাধনায় মেতেছেন জগদানন্দ আশ্রমের আবাশিক ও ভক্তরা। উদ্যোক্তাদের আশা, এবারও লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে পুজোর কয়েকটা দিন।
Discussion about this post