যদি সময়েই বিধানসভা নির্বাচন হয়, তাহলে আর দশ মাসের বেশি সময় বাকি পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের মনোভাব দেখে মনে হচ্ছে, এবার ভোট এগিয়ে আসলেও আসতে পারে। এর অনেকগুলি লক্ষন দেখা যাচ্ছে। তবে প্রথমেই যেটা উল্লেথ করা যায় সেটা গত বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনসভা। যে সভায় তিনি সকলকে আশ্চর্য করেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রবল আক্রমণ করলেন। যতটা অপারেশন সিঁদূর নিয়ে বলেছিলেন, তার তিনগুণ বেশি সময় ব্যয় করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে। পাশাপাশি তিনি আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপি কর্মীদের জন্য লড়াইয়ের রূপরেখা হিসেবে পাঁচটি পয়েন্ট চিহ্নিত করে গিয়েছিলেন। তখনই বোঝা গিয়েছিল ভোটের বাদ্যি বাজিয়ে দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিন দিনের মাথায় কলকাতায় এলেন বিজেপির নম্বর-টু তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি এক দলীয় সভায় বক্তব্য রাখলেন। সেখান থেকেই বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে আসন্ন লড়াইয়ের জন্য চাঙ্গা করে গেলেন। তাঁর ভোকাল টনিক, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ভোট শতাংশে আর বিশেষ ফারাক নেই। মাত্র কয়েক শতাংশ ফারাক রয়েছে। যে ফারাক ছাব্বিশেই মুছে যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ।
কিভাবে এই ফারাক মোছা যাবে? বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে তিনি স্পষ্ট করে গেলেন সেটাও। অর্থাৎ তৃণমূলের সঙ্গে সেই ফারাক মুছতে উগ্র মেরুকরণের পথেই হাঁটবে বিজেপি। সেই উগ্র মেরুকরণের রাজনীতিতে থাকবে তৃণমূলের সংখ্যালঘু তোষণ, অবৈধ অনুপ্রবেশ, হিন্দুদের উপর হামলা ইত্যাদির প্রশ্নে তীব্র তৃণমূল বিরোধিতা। পাশাপাশি বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার বিষয়গুলি, যেমন দুর্নীতি, অরাজকতার মতো বিষয়ও বিজেপির প্রচারে থাকবে বলে জানিয়ে গেলেন অমিত শাহ। রবিবার নেতাজি ইনডোরের সভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বললেন, “দিদি আমার কথা শুনে নিন, আপনার সময় ঘনিয়ে এসেছে। ছাব্বিশেই বিদায়। সেই সঙ্গে অমিত শাহ বলেন, টিএন সেশন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পর থেকে সর্বভারতীয় স্তরে ভোটে হিংসা বন্ধ হয়ে গেছে। একমাত্র বাংলাতেই তা বন্ধ হয়নি। “দিদি হিম্মত থাকলে হিংসা, রিগিং বাদ দিয়ে ভোট করে দেখুন। আপনারও জমানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে”।
ছাব্বিশ যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাখির চোখ, এ কথা মানছেন বঙ্গ বিজেপির বহু নেতাই। একুশের ভোটের সময় দেখা গিয়েছিল, সংগঠন মজবুত করতে এবং প্রার্থী বাছাই করতে অনেকটাই বেশি সময় নিয়ে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। চব্বিশের লোকসভা ভোটেও একই সমস্যা ছিল। এবার যাতে না হয় তার জন্য আগেভাগেই কোমর বেঁধে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের তোড়জোরও শুরু হয়েছে বঙ্গ বিজেপিতে। তারই অঙ্গ হিসেবে অমিত শাহর সফর। তিনি এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক নেতৃত্ব যেমন বার্তা দিয়ে গেলেন, একেবারে নীচু তলা থেকে সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে জুন মাসের মধ্যে বুথ কমিটি গড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও বিজেপি সূত্রে খবর। ফলে এবার ৯-১০ মাস আগে থেকেই বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিল বিজেপি। মেরুকরণের লক্ষ্যে বিজেপি যে ইতিমধ্যেই অনেকটা সফল তা তৃণমূলের রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তী পালনের বহর দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ফলে এবারই সফল তোলার সময় বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব। আর এই কাজে যে শুভেন্দু অধিকারীকে বড় দায়িত্ব নিতে হবে, সেটাও রবিবার নেতাজী ইনডোরের মঞ্চ থেকে বুঝিয়ে গেলেন অমিত শাহ।
Discussion about this post