সোমবার সকালে ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর প্রথম ট্রেন চলল রাঙাপানি স্টেশনের ওপর দিয়ে। মঙ্গলবার সকালে অভিসপ্ত ডাউন লাইনে কামাখ্যা-গান্ধিধাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুব থীরে ধীরে পার করে সফলভাবে। রবিবার সকালে ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ির মধ্যে সংঘর্ষের পর ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনদিকে তিনটি কামরা একদম ডুমড়ে মুছে যায়। একটি কামরা মাল গাড়ির ইঞ্জিনের উপরে উঠে যায়। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে ইতিমধ্যে এই ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে শিশুও। প্রায় ৫০ জনের বেশি এই ঘটনায় আহত রয়েছে যাদের উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এবং ফাঁসি দেওয়া হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই রেলমন্ত্রী তিনি নিজে ঘটনা এসে দুর্ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করেছেন এবং তিনি নির্দেশ দিয়েছেন দ্রুততার সাথে ঘটনার তদন্ত করার।
পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন এবং যারা আহত রয়েছে তাদের সাথে দেখা করেন। এরপর একে একে রাজ্যপাল এবং বালুরঘাটের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার তিনিও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যান এবং আহতদের সাথে কথা বলেন পাশাপাশি ডাক্তারদের সাথেও তারা কথা বলেছেন যাতে দ্রুততার সাথে তাদের চিকিৎসা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।। সোমবার সকাল থেকেই আপ লাইনে রেল চলাচল শুরু হয়েছে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে হাওড়া গামী শতাব্দী এক্সপ্রেস তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে এছাড়াও বেশ কয়েকটি মালগাড়ি ও আপলাইন দিয়ে চলাচল করেছে।
চিপ সেফটি কমিশনার জেঙ্ক কুমার গর্গের তত্ত্বাবধানে এই তদন্ত চলছে বলে জানা গিয়েছে। রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে রবিবার রাতেই ঘটনাস্থলে রেলের সেফটি কমিশনের বেশ কিছু আধিকারিক এসে পৌঁছোয়। মূলত কি কারনে এই দুর্ঘটনা তা নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। জানা যাচ্ছে রবিবার সকাল ৫.৫০ মিনিট থেকে রেলের অটোমেটিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা কাজ করছিল না। সেই কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস এবং মালগাড়ির লোকো পাইলটকে TA 912 ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। এবং নিয়ম মেনেই কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস এর লোকো পাইলট রেলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু রেল সূত্রে যা জানা যাচ্ছে মাল গাড়ির লোকো পাইলট অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি নিয়ে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘার পেছনে সজরে ধাক্কা মারে, যার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেই প্রাথমিক সূত্রে জানাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার বিষয় আরো তথ্য উঠে এসেছে এনজিপি থেকে মালগাড়ি আগে বেরিয়ে এসেছিল, পরবর্তীতে পেছন থেকে আসে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। কিন্তু রাঙ্গাপানি স্টেশনে মালগাড়িকে লুপ লাইনে দিয়ে দেওয়া হয় সেই সময় মেন লাইন দিয়ে কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেসকে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস রাঙ্গাপানি স্টেশন ছাড়ার প্রায় আধাঘন্টা পর সেখান থেকে মালগাড়ি ছাড়ে বলে জানা গিয়েছে মালগাড়িতে থাকা কর্মরত গার্ডের মারফত। এরপরই রাঙ্গাপানি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল ৮ টা বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ ঘটে গোটা ঘটনাটি। দেশলাইয়ের বাক্সের মতো উলটে গিয়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। একটি কামরা উঠে গিয়েছিল মালগাড়ির উপর। তড়িঘড়ি শুরু হয় উদ্ধার কাজ। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া কামরায় আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করার কাজ শুরু করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সেই সঙ্গে চলে লাইন পরিষ্কারের কাজ। সোমবার দুপুরের মধ্যেই ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তবে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১১।
Discussion about this post