কেনই বা একই লাইনে দুটি ট্রেন চলে এল? একই লাইনে সামনে এক্সপ্রেস ট্রেন থাকাকালীন পিছনে মালগাড়ির সিগনাল কেন লাল হল না? এটা কোনও মানবঘটিত ভুল নাকি অন্তর্ঘাত, এরকম বহু প্রশ্ন উঠছে নিউ জলপাইগুড়ির কাছে রাঙাপানি স্টেশনে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পর।
সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ির অদূরে নীচবাড়ি এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে লাল সিগনালে দাঁড়িয়েছিল অসমের শিলচর থেকে পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদাগামী ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। তখনই ওই একই লাইনে পিছন থেকে আসা একটি মালবাহী ট্রেন সজোরে ধাক্কা মারে দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনে। ধাক্কার অভিঘাতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনের দুটি কামলা মালগাড়ির ইঞ্জিনের উপরে উঠে যায়। আর সামনের কয়েকটি কামরা বেলাইন হয়। মালগাড়িটিও বেলাইন হয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর এসেছে, আহতের সংখ্যা বহু। দূর্ঘটনার ফলে উত্তরবঙ্গ এবং কলকাতার মধ্যে ট্রেন চলাচল এখন প্রায় বন্ধ। বহু ট্রেন ঘুরপথে চালাচ্ছে রেল। ঘটনার খবর পেয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাস্থলে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
তবে এখন লাখ টাকার প্রশ্ন কেন ফের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল। যদিও রেলমন্ত্রক জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হবে, তবে আগে উদ্ধারকাজে মন দেওয়া উচিৎ। ২০২৩ সালের ২ জুন ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস, বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ির সংঘর্ষ হয়। তাতে মোট ১৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছিল। আর তাতেই মৃত্যু হয়েছিল ২৯৬ জনের, আহত হয়েছিলেন ১২০০ জনেরও বেশি। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার স্মৃতি পুরোপুরি মেটার আগেই পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় রাঙাপানি স্টেশনের কাছে ঘটল আরেক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সোমবার সকালে রাঙাপানি স্টেশনের কাছে শিয়ালদাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সেপ্রেসের পিছনে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। এখনও পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও মৃতের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
তবে দুর্ঘটনার পর থেকে একটাই প্রশ্ন বারবার ঘুরে ফিরে আসছে, কী ভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা। যেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক্সপ্রেস ট্রেনকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। রেলের একটি অংশ অবশ্য অন্তর্ঘাতের বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না। তবে প্রথমিকভাবে মালগাড়ির চালকের সিগনাল না মানার তত্ত্বেই জোর দিচ্ছে রেল। জানা যাচ্ছে, কয়েকদিন ধরেই উত্তরবঙ্গে টানা বৃষ্টি চলছে। সোমবার সকাল থেকেও বৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে মালগাড়ির চালক সম্ভবত লাল সিগনাল দেখতে পাননি বলেই মনে করছেন রেলের আধিকারিকদের একাংশ। উল্লেখ্য, মালবাহী ট্রেনটির চালকের মৃত্যু হয়েছে এই দুর্ঘটনায়। রেলের দাবি, একই লাইনে সামনে কোনও ট্রেন থাকলে, পিছনের সিগনাল কখনও সবুজ হয় না। সামনের ট্রেন অন্তত দুটি সিগনাল পয়েন্ট পার না করলে পিছনের সিগনাল লালই থাকবে। এ ক্ষেত্রেও তাই ছিল বলেই মনে করছেন রেলকর্তারা।
তবুও কিভাবে মালগাড়ির চালক ট্রেন নিয়ে এগিয়ে গেলেন সেটাই ধোঁয়াশা। দুর্ঘটনাগ্রস্থ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের কয়েকজন যাত্রী দাবি করেছেন। সামনে লাল সিগনার থাকায় ট্রেনটি অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছিল পুরোপুরি দাঁড়ানোর আগে। ঠিক তখনই তাঁরা ভীষণ জোরে শব্দ এবং তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করেন। রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সিইও জয়া বর্মা সিনহা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন, দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনারোধ করার প্রযুক্তি কবচ এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের কোথাও প্রতিস্থাপন করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনাগ্রস্থ ট্রেনের ইঞ্জিনেও কবচ প্রযুক্তি ছিল না। রেলমন্ত্রক ঘটনার পরই উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি রেলমন্ত্রী অশ্বিণী বৈষ্ণব ও পৌঁছেছেন দুর্ঘটনাস্থলে।
Discussion about this post