এতদিন দেখেছেন পরীক্ষায় জালিয়াতি, নির্বাচনে জালিয়াতি, ইভিএম জালিয়াতি, চাকরিতে জালিয়াতি এখন দেখুন গাড়ি জালিয়াতি। তাও আবার যে সে গাড়ি নয়, একেবারে সরকারি গাড়ি। ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিডিও অফিসের। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য সরিয়েছে এলাকায়। সরকারি স্টিকার লাগানো একটি বোলেরো গাড়ি, যার সামনে ও পেছনে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা গভারমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল। গাড়ির নম্বর প্লেট WGJ 2585, যা প্রশাসনিক কাজে জেলায় জেলায় ঘুরছে। তবে গাড়িটিকে দেখে বোঝারই উপায় নেই তার সর্বাংশ জালিয়াতিতে ভরা ।
যে চারচাকা গাড়িটি নিয়ে এত হইচই সেটি পূর্ব বর্ধমানের ‘জামালপুর ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসের’। জানা গিয়েছে, গাড়িটির সরকারি চালক অনিল মুর্মু। বিডিও অফিসের সরকারি আমলারা সরকারি তেল খরচে চলা ওই গাড়িতে চেপেই প্রশাসনিক কাজ মেটান। এছাড়াও জেলাশাসকের অফিস, মহকুমা শাসকের অফিস সহ জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও আমলাদের একমাত্র ভরসা ওই গাড়িটি। এমনকি লোকসভা নির্বাচনের সময়ও নির্বাচনী কাজে নিযুক্ত সরকারি আমলারা ওই গাড়িটি চড়েই সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়েছেন। সেই সময়ই গাড়িটির পিছনের দুর্নীতির বিষয়টি নজরে আসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানের। তারপর থেকেই গাড়িটি চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মূলত, এক সময়ে জামালপুর বিডিও অফিসের জন্য বরাদ্দ ছিল ২টি জিপ গাড়ি। তার মধ্যে একটি জিপ বিকল হয়ে যাওয়ায়, আরেকটি গাড়ি ব্যবহারের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই জিপটির বিষয়ে এখন শুধুমাত্র বিডিও অফিসের পুরনো নথিতেই আছে।
অন্য বিকল ১টি জিপ গাড়ি নম্বর প্লেট সহ এখনও বিডিও অফিসের গ্যারেজে রয়েছে। এই নম্বরের গাড়িটি দীনবন্ধু দে নামে বিডিও অফিসেরই আর এক সরকারি চালক চালাতেন। তবে জামালপুর বিডিও অফিসে এখন অনিল মুর্মু নামে একজনই সরকারি চালক রয়েছেন। যে গাড়িটি নিয়ে এত হইচই সেই গাড়িটিতে লাগানো নম্বর প্লেটে উল্লিখিত নম্বরটি আসলে হল জিপ গাড়ির নম্বর। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে সরকারি অর্থ খরচ করে ওই জিপ গাড়িটির রূপ বদলে দিয়ে সেটিকে বোলেরো গাড়ির রূপ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানতে চেয়ে এক সংবাদমাধ্যমের তরফ থেকে অনিল বাবুকে ফোনে ধরা হলে তিনি জানান, “হ্যাঁ, WGJ 2585 নম্বরের গাড়িটি আসলে জিপ গাড়ি। জেলার আউসগ্রাম ১ ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করে গাড়িটি সেখান থেকে জামালপুর বিডিও অফিসে আনা হয়েছিল। তারপর ওই জিপ গাড়িটি গ্যারেজে পাঠিয়ে তার ইঞ্জিন, চেসিস সহ অনেক কিছু বদলে দিয়ে গাড়িটিকে ডিজেল চালিত বোলেরো গাড়ির মডেলে করানো হয়।
তবে গাড়ির মডেল চেঞ্জ করা হলেও গাড়িতে জিপ গাড়িটারই নম্বর প্লেট লাগানো হয়”। কিন্তু যে গাড়িকে সরকারি খরচে তার ভোল পাল্টে বোলেরো গাড়িতে রূপান্তরিত করা হলো তার কোনও তথ্য পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে না কেন? পরিবহণ দফতরকে কি আগে ওই গাড়ির বিষয় কিছু জানেন? প্রশ্নের উত্তরে অনিল মুর্মু বলেন, “গাড়িটির ইঞ্জিন, চেসিস এবং মডেল বদলে দেওয়া হয়েছে বলেই হয়তো পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে গাড়িটির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না”। যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ বিরোধীরা।
Discussion about this post