চলতি বছর দুর্গাপুজোয় রাজ্য সরকার ক্লাবগুলিকে অনুদানের পরিমান বাড়িয়ে ৮৫ হাজার টাকা করেছে। পাশাপাশি লাইসেন্স ফি এবং বিদ্যুৎ মাশুনেও ব্যাপক ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বভাবতই খুশি পুজো উদ্যোক্তারা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই টাকা পুজো উদ্যোক্তারা কোথায় খরচ করবেন? কারণ এই টাকা সরাসরি পুজোর আয়োজনে খরচ করা যায় না। ব্যয় করতে হয় সামাজিক কাজে।
২০২৪ সালে রাজ্য সরকার দুর্গাপুজোর অনুদানের অঙ্ক বাড়িয়ে ৮৫ হাজার করেছে। রাজ্যের প্রায় ৪৩ হাজার পুজো কমিটি অনুদান পাবে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী দূর্গাপুজোয় রাজ্য সরকার থেকে পাওয়া অনুদানের টাকা প্রতিমা, মণ্ডপ বা পুরোহিতের পিছনে খরচ করা যায় না। এমনকি দশকর্মার দোকানের বিল, ঢাকির বেতনও এই টাকায় দেওয়া যাবে না। ফলে কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়ছে পুজো উদ্যোক্তাদের। তাহলে ক্লাবগুলি কোথায় খরচ করতে পারবেন এই টাকা? আসুন এক ঝলকে জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে পাবেন এই অনুদান। নিয়ম অনুযায়ী এখন পুলিশের ‘আসান’ অ্যাপের মাধ্যমে পুজোর অনুদানের জন্য আবেদন করতে হয়। সেখানে একসঙ্গে সব রকম প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাওয়া যায়। প্রধান শর্ত হল, কমপক্ষে ১০ বছরের পুরোনো পুজো হতে হবে। এবার আসি আসল কথায়।
রাজ্য সরকার দুর্গাপুজোর অনুদান দেওয়া শুরু করেছিল ২০১৮ সালে। প্রথমবার পুজো উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে অনুদানের পরিমাণ বেড়ে হয় ২৫ হাজার টাকা। পরের বছর, অর্থাৎ করোনাকালে এই অঙ্ক এক লাফে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে ৬০ হাজার, এবং চলতি বছর অনুদান বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছেন, আগামী বছর থেকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে দুর্গাপুজোয়। স্বভাবতই খুশি পূজা কমিটিগুলি। কিন্তু এর মধ্যেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে কিভাবে এই টাকা খরচ করবেন তাঁরা।
প্রথমদিকে পূজোর অনুদান নিয়ে এত কড়াকড়ি ছিল না। আবেদন করলে সহজেই মিলত অনুদান, এবং খুব একটা হিসেব নিকেশ জমা দিতে হতো না। কিন্তু রাজ্যবাসীর করের টাকায় পুজো উদ্যোক্তাদের অনুদান দেওয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়। সেই সময়ে রাজ্যে সরকার আদালতকে জানিয়েছিল, পুজো উদ্যোক্তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্পের মতো একাধিক জনকল্যানমূলক প্রকল্পের প্রচারের জন্য। ফলে হাইকোর্ট কয়েকটি শর্ত চাপিয়ে পুজোর অনুদান বজায় রাখে। যেমন, পুজো উদ্যোক্তাদের অনুদানে পাওয়া অর্থের ব্যয় সংক্রান্ত নথি হাই কোর্টে জমা দিতে হবে এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনেই এই টাকা খরচ করতে হবে। তাই পুজো কমিটিগুলি রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান নিয়ে আর মণ্ডপ, প্রতিমা কেনার জন্য টাকা ব্যয় করতে পারে না। এমনকি ঢাকির টাকাও দিতে পারে না। পুজো অনুদানের অন্যতম শর্ত হল, হিসেব মিলিয়ে সমস্ত নথি জমা করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। না হলে পরের বছর পাওয়া যাবে না অনুদান, এমনকি কালো তালিকাভুক্তও করা হতে পারে ওই পুজো কমিটিকে।
এখানেই চিন্তায় পড়েছেন পুজো উদ্যোক্তা অর্থাৎ ক্লাবগুলি। রাজ্য সরকার যত টাকার পরিমান বাড়াচ্ছে, ততই তাঁদের চিন্তা বাড়ছে। একাধিক পুজো কর্মকর্তার বক্তব্য, কোথায় এতো টাকা খরচ করবো সেটা নিয়েই ভেবে অস্থির হতে হচ্ছে। কারণ বস্ত্রদান, বা চিকিৎসা সরঞ্জাম করে অথবা কাউকে অর্থ সাহায্য করলেও ৮৫ হাজার টাকা খরচ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আবার ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষ পুজোর চাঁদা দিতে চায় না এই যুক্তিতে যে সরকার আমাদের অনুদান দিচ্ছে। সবমিলিয়ে পুজোর অনুদান বাড়ায় বিপাকে পুজো কমিটিগুলি।
Discussion about this post