ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের জেরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি। তবে তা কিছুতেই মানতে চাননি শেখ হাসিনা। দেশও ছাড়তে চাননি কোনও মতেই। বরং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে, আরও রক্তপাতের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর পদ ধরে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। এমনটাই জানা গেছে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র থেকে। বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদ মাধ্যমে ‘প্রথম আলো’ সূত্রের খবর, পদত্যাগের পরিকল্পনা দূরের কথা, গণভবন দখলের দিন সকাল ১০টা থেকে শেখ হাসিনা উল্টে চাপ দিতে শুরু করেছিলেন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের। খানিক ধমকের সুরও ছিল তাঁর গলায়, যে কেন পুলিশ অথবা সেনা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। পরিবারের সদস্যরা অনেক বোঝানোর পরে, আমেরিকা থেকে তাঁর ছেলে জয় ফোন করে অনেকক্ষণ কথা বলার পরে, শেষমেশ পদত্যাগে রাজি হন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাবার পরে গণভবনের ভেতরে ঢুকে বহু মানুষ ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে, যেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। শেখ হাসিনা যখন ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি গণভবন বরাদ্দ নিয়ে সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়ার পরেও তিনি সেখানে বাস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের মুখে শেখ হাসিনা ২০০১ সালে গণভবন ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। গণভবনকে এখন ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে’ রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এই সিদ্ধান্ত নেবার কয়েকদিন আগেই লন্ডন থেকে এক ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান বলেছিলেন, গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে, যেখানে জুলাই-অগাস্ট মাসে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে যারা আহত-নিহত হয়েছেন তাদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু জানেন কি ক্ষমতাচ্যুত হলেও গণভবন ছাড়তে চান নি শেখ হাসিনা। কি রয়েছে গণভবনে? রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার হলেও বাসভবন হিসাবে শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ থাকেননি গণভবনে। কীভাবে-কতটা লড়াই করে এই গণভবনকে নিজের কব্জায় আনলেন শেখ হাসিনা? ২০০১ সালে শেখ মুজিবুর তখন বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন গণভবন অফিসের কাজে ব্যবহার করতেন। মূলত বিকেল ও সন্ধ্যাকালীন অফিস হিসাবে এটি ব্যবহার করা হত। শেখ মুজিবুর হত্যাকাণ্ডের পর গণভবন অনেকটাই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকত বলে জানা যায়। ১৯৮৫ সালে গণভবন সংস্কার করে সেটিকে রাষ্টীয় অতিথি ভবন করে ব্যবহার করা হত। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারি প্রধানদের জন্য এই অতিথি ভবন ব্যবহার করা হতো। এক সময়ে ঢাকা সফরে গিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বসবাস করেছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে জয়লাভ প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। আবার তিনি বসবাস শুরু করেন এই ভবনে। তখন নাম ফের দেওয়া হয় গণভবন। গণভবন সংস্কার শেষে ১৪ মাস পরে ২০১০ সালের মার্চ মাসে শেখ হাসিনা গণভবনে বসবাস করা শুরু করেন। তাঁর আমলে বেশিভাগ কাজ এই ভবন থেকেই করা হয়। গণভবনকে এখন জুলাই স্মৃতি যাদুঘর করার কথা ভাবছেন মহম্মদ ইউনুস। তবে কেন হাসিনাকে গন কখন বরাদ্দ করা হয়েছিল? জানা যাচ্ছে, ২০০১ সালের ২ জুলাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে গণভবন বরাদ্দ দেয়া হয়। এই আইনের ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনাকে গণভবন এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে ধানমন্ডির ছয় নম্বর সড়কে এক বিঘার একটি সরকারি বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়। তৎকালীন বিভিন্ন সংবাদপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে পূর্ত মন্ত্রণালয় বাড়ি বরাদ্দের প্রস্তাব উত্থাপন করে। সেখানে বলা হয় গণভবন তার ব্যক্তি মালিকানাধীন হবেনা, সরকারি মালিকানাধীনই থাকবে। শেখ হাসিনাকে গণভবন বরাদ্দ দেবার কারণ হিসেবে তার নিরাপত্তার বিষয়টিকে উল্লেখ করা হয়। প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার গণভবনে বসবাস নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বহুবার। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এই নিয়ে আপত্তিও জানিয়েছিলেন একাধিকবার। তিনি বলেছিলেন, শেখ হাসিনা যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তাহলে তাকে গণভবন ছাড়তে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি গণভবন বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানায়। পাল্টা কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ির ইজারা বাতিল করার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে।
পৌষেও বৃষ্টির ভ্রুকুটি! সপ্তাহান্তে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাংলায়। পার্বত্য এলাকায় তুষারপাতের সম্ভাবনাও জারি। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার পরোক্ষ প্রভাবে এই বৃষ্টি ও তুষারপাত।...
Read more
Discussion about this post