“লাপাতা লেডিজ”, সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় ব্লকব্লাস্টার সিনেমা। শুধু হিট করার জন্যই নয়, সুন্দর ও সাবলীল ভঙ্গিমায় এক কঠিন বাস্তব সামাজিক বার্তা দিয়েছে। যাইহোক, আমরা লাপাতা লেডিজ সিনেমার রিভিউ দিচ্ছি না। আসলে ইদানিং সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে “লাপাতা লেডিজ” তকমা দিয়ে বসেছেন নেটিজেনদের একাংশ। কারণ আর জি কর হাসপাতালের ভিতর মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ নিয়ে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, তাতে মুখে কুলুপ ওই জনপ্রতিনিধিদের। তাঁরাও মহিলা, কেউ সাংসদ, কেউ বিধায়ক। কিন্তু খাস কলকাতার বুকে এক সরকারি হাসপাতালের ভিতর এক মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনা নিয়ে তাঁরা আশ্চর্যজনকভাবে নিশ্চুপ। এরা হলেন, যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষ, হুগলীর সাংসদ রচনা বন্দোপাধ্যায়, বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়, মেদিনীপুরের সাংসদ জুন মালিয়া এবং বরাহনগরের বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই শাসকদল তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি। তাঁরা এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি আর জি কর কাণ্ডে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় এঁদের “লাপাতা লেডিজ” বলে কটাক্ষ করছেন।
হুগলির নব নির্বাচিত সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় টেলিভিশনে একটি জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো সঞ্চালনা করেন। সেখানে তিনি বাংলার মহিলাদের নিয়ে এসে তাঁদের বঞ্চনা, অত্যাচার ও অবহেলার কাহিনী শোনান। কিন্তু আর জি কর হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসক, যিনি ওই হাসপাতালে কাজ করার পাশাপাশি পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সও করছিলেন। তাঁকেই নৃশংসভাবে মরতে হল। কেন, সেই প্রশ্নে উত্তাল গোটা বাংলা। ১৪ আগস্ট রাত গোটা দেশ দেখলো এক অন্যরকম প্রতিবাদ। মহিলারা স্বতপ্রনোদিতভাবে নেমে এলেন রাস্তায়। নিজের মতো করে কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা ছাড়াই লক্ষ লক্ষ মানুষ বাংলার রাস্তা দখল নিলেন স্বাধীনতার মধ্যরাতে। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন মহিলারা। কেউ নিজের মেয়ের হাত ধরে এসেছিলেন, কেঊ আবার মেয়েকে হাতে ধরে নিয়ে এসেছিলেন। এতকিছুর পরও চোখে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা জনপ্রতিনিধিদের চুপ থাকার বিষয়টা। যা নজর এড়ায়নি নেটিযেনদের। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র ট্রোলের মুখে পড়ছেন তৃণমূলের মহিলা সাংসদরা।
যাদবপুরের নবনির্বাচিত সাংসদ সায়নী ঘোষও টলিউডের জনপ্রিয় নাম। যিনি ছোট-বড় নানা ঘটনায় মন্তব্য করতে ভোলেন না, আর জি কর কাণ্ড নিয়ে তিনিও নিশ্চুপ। বিশেষ করে সায়নী এর আগে যতবার প্রতিবাদী মন্তব্য করেছেন, তা হয় কেন্দ্রীয় সরকারকে নিয়ে, না হয় বিরোধী রাজনৈতিক দল সম্পর্কে। সেখানে তাঁর নিরাবতা অন্য মাত্রা দিচ্ছে বলেই মনে করছেন নেটিজেনরা। অপরদিকে, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে টেলিভিশন চ্যানেলে একটা জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো সঞ্চালনা করেন, সেখানে অংশ নিতে আসা মহিলাদের দুঃখ যন্ত্রণার কথা শুনে তাঁকে দেখতে পাওয়া যায় কান্নায় ভেঙে পড়তে। সেই রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন এই বিষয়ে একটিও প্রতিবাদমূলক মন্তব্য করলেন না? নিদেন পক্ষে সমবেদনাও জানালেন না মৃতা চিকিৎসকের জন্য। দেখা গেল না মহিলাদের রাস্তা দখল কর্মসূচিতেও। এই প্রশ্নই এখন ঘুরেফিরে উঠছে। টেলিভিশন চ্যানেলে তিনি নারী স্বাধীনতা নিয়ে লম্বা চওড়া কথা বলে থাকেন, আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের রঙিণ রিলও শেয়ার করেন হামেশাই। সেখানে আর জি কর হাসপাতালের মতো ঘটনায় মুখে কুলুপ বাংলার দিদি নম্বর ওয়ান রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠছে। সবশেষে এটাই মনে হচ্ছে নব্য তৃণমূলী সাংসদ দিদি হয় রাজনীতিটা বোঝেন না না হলে হয়তো একটু বেশিই বুঝে মেপে ঝেপে পা ফেলছেন।
Discussion about this post