ভারতে একই লাইনে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলে। ফলে রেললাইনের ওপর যেমন চাপ বাড়ে, তেমনই যানজট তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই একই লাইনে মালবাহী ট্রেন থাকায় যাত্রীবাহী দূরপাল্লার ট্রেন লেট করে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকার দুটি ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর তৈরি করেছে। একটি ওয়েস্টর্ন ও অন্যটি ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর। দুটিই সিংহভাগ চালু হয়ে গিয়েছে। সামান্য কিছু অংশের কাজ বাকি। এরমধ্যে ইস্টার্ন ডেডিতেটেড ফ্রেইট করিডর পঞ্জাবের লুধিয়ানা থেকে পশ্চিমবঙ্গের ডানকুনি পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে। এই ফ্রেইট করিডরগুলিতে শুধুমাত্র মালগাড়ি চলাচল করবে। ফলে মেইন লাইনে ট্রেনের চাপ কমেছে, গতি বেড়েছে যাত্রীবাহী ট্রেনের। এই প্রকল্পের সফলতায় উৎসাহিত হয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আরও তিনটি ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনটি মিলিয়ে প্রায় ৪, ৩০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। বাজেট ধরা হয়েছে আনুমানিক প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা। মূলত জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেটিভ এজেনসি এবং বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় নতুন তিনটি ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর তৈরির পরিকল্পনা পাকা। আনন্দের খবর হল, এর মধ্যে দুটি করিডর বাংলা থেকে শুরু হবে।
সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম স্বরাজ্য এবং হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিকল্পিত তিনটি ফ্রেইট করিডরের বিস্তারিত।
ইস্ট কোস্ট ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর
প্রস্তাবিত পূর্ব উপকূলীয় ফ্রেইট করিডরটি পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুর থেকে শুরু হবে। এরপর ওড়িশার কটক, ভুবনেশ্বর হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম ছুঁয়ে তেনালি জংশন পর্যন্ত যাবে। প্রায় ১, ২০০ কিমি বিস্তৃত এই করিডরের মূল লক্ষ্য হল বাংলা এবং ওড়িশার মতো খনিজ সমৃদ্ধ রাজ্যগুলির রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। প্রস্তাবিত পূর্ব উপকূলীয় ফ্রেইট করিডরটি পশ্চিমবঙ্গের কয়লা, সার এবং ওড়িশার লৌহ আকরিকের সাথে কাজ করে এমন শিল্পগুলিকে উপকৃত করবে।
উত্তর-দক্ষিণ ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর
প্রস্তাবিত এই ফ্রেইট করিডরটি মধ্য প্রদেশের ইটারসি থেকে বিজয়ওয়াড়া হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের তেনালি জংশন পর্যন্ত প্রসারিত হবে। ১, ০০০ থেকে ১, ২০০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই উত্তর দক্ষিণ ফ্রেইট করিডর মূলত চারটি রাজ্য – মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশকে জুড়বে। এই করিডরটি মূলত কয়লা, সিমেন্ট, সার এবং পেট্রোলিয়াম-সহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনের সুবিধা দেবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এটি প্রস্তাবিত পূর্ব উপকূলীয় ফ্রেইট করিডরের সঙ্গে মিশবে তেনালি জংশনে। ফলে এর সুবিধা হল মালগাড়ি অন্য করিডরেও সহজে পৌঁছে যাবে।
পূর্ব-পশ্চিম ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর
এটিও পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু হতে চলেছে। এই রাজ্যের অন্ডাল থেকে শুরু হবে পূর্ব-পশ্চিম ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর। যা মহারাষ্ট্রের পালঘর পর্যন্ত প্রসারিত হবে। রেলের শীর্ষ আধিকারিকদের মতে, এই পূর্ব পশ্চিম করিডর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কারণ, এই রুটে বর্তমান মেন লাইনে সবচেয়ে বেশি মালগাড়ি চলাচল করে। সেই কারণে প্রায়ই যাত্রীবাহী ট্রেনগুলি গড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা লেট হয়ে যায়। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ব পশ্চিম ফ্রেইট করিডর পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্র-সহ পাঁচটি রাজ্যকে সংযুক্ত করবে। আনুমানিক ২, ১০০ কিলোমিটার এই পণ্যবাহী করিডরের মাধ্যমে মূলত কয়লা, লৌহ আকরিক, ইস্পাত সিমেন্ট এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যক পণ্য পরিবহন করে এই পাঁচ রাজ্যের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করতে সাহায্য করবে।
Discussion about this post