বর্তমানে রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবন হল হাওড়ার নবান্ন। কিন্তু বামফ্রন্টের আমলে রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবন ছিল রাইটার্স বিল্ডিং। যা কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন। বেশ কয়েকবার তিনি রাইটার্স অভিযান করেছিলেন। এরমধ্যে ২১শে জুলাই ঘটেছিল সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা। সেই অভিযানে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী। বলা হয় ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাই থেকেই বঙ্গ রাজনীতিতে উত্থান শুরু অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যদিও সেদিন পুলিশ নেত্রী মমতা বা যুব কংগ্রেস কর্মীদের রাইটার্স বিল্ডিংয়ের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেয়নি। কিন্তু সেই বছরের ৭ জানুয়ারি আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল সেই রাইটার্স বিল্ডিংয়ের ভিতরে। যা আজকের নবান্ন অভিযানের সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে। ১৯৯৩ সালের ৭ জানুয়ারি তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নদিয়ার এক মূক ও বধীর মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে সোজা হাজির হয়েছিলেন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। তাঁর দাবি ছিল, সিপিএমের হার্মাদবাহিনী ওই মূক ও বধীর তরুণীকে গণধর্ষণ করেছে। সেই বিচার চাইতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাইটার্সের ভিতর সরাসরি পৌঁছে গিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ঘরের সামনে। সেদিনও পুলিশ মমতাকে টেনে হিঁচড়ে রাইটার্সের বাইরে করে দিয়েছিল। এর ঠিক ছয়মাসের মাথায় ২১শে জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব কংগ্রেস রাইটার্স অভিযান করে।
২৭ আগস্ট, ২০২৪। এবার কাঠগড়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ।
কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভিতরই এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগে উত্তাল গোটা বাংলা। রাজপথে রোজই প্রতিবাদ মিছিল করছে নাগরিক সমাজ। কোনও রকম রাজনৈতিক পতাকা ছাড়াই দিকে দিকে প্রতিবাদ কর্মসূচি করে চলেছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনেরা। সেরকমই ছাত্র সমাজ নামে এক অরাজনৈতিক সংগঠন নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল। আর সেই নবান্ন অভিযান বাতিল করতে উঠেপড়ে লাগল রাজ্য পুলিশ। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাফ, বা অন্যান্য বাহিনী মোতায়েন করেছে রাজ্য পুলিশের কর্তারা। জানা যাচ্ছে প্রায় ৫০০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে এদিনের নবান্ন অভিযান ঠেকাতে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, একই দাবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিন্নমুখী অবস্থান নিয়ে। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন ১৯৯৩ সালের ৭ জানুয়ারি মূক ও বধীর ধর্ষিতা মহিলার বিচার চাইতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির হয়েগিয়েছিলেন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। আর ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট এক তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিচার চাইতে নবান্ন অভিযান ব্যর্থ করতে সবরকম ব্যবস্থাই করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তখন তিনি ছিলেন বিরোধী নেত্রী, আর এখন তিনি রাজ্যের মূখ্য প্রশাসক বা মুখ্যমন্ত্রী। বদলে যাওয়া মমতার এই বিপরীতমুখী চিত্রই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সমাজ মাধ্যমে। তৃণমূল নেত্রী বিরোধী হিসেবে যা যা করেছেন, আজ প্রশাসক হয়ে তারই বিরোধীতা করছেন অনায়াসে। এখানেই উঠছে প্রশ্ন, তৃণমূল নেত্রী কি পুরোপুরি বিপন্মুক্ত? সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে তাঁর দল বিপুল সাফল্য পেলেও সুক্ষ্মতর বিচারে রয়েছে বিপদের গন্ধ। লোকসভায় মানুষ বিজেপি বা কংগ্রেসকে মেনে না নিয়ে তৃণমূলকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে যে সেটা হবে তা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। একই যুক্তিতে মানুষ যদি তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে কী হবে? আর জি কর কাণ্ডের গতিপ্রকৃতি দেখে ঠারেঠরে এই আশঙ্কাই করছেন তৃমমূলের নীচুতলার নেতৃত্ব।
Discussion about this post