টিকিট না কেটে লোকাল ট্রেনে ভ্রমণ করা অনেকেরই অভ্যাস। তাই দিন কয়েক আগেই পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আঘিকারিক জানিয়েছিলেন এবার কড়া অবস্থান নিতে চলেছে রেল। জানা যাচ্ছে, এবার দুই স্টেশনের মাঝপথে ট্রেন থামিয়েও টিকিট পরীক্ষা করতে পারেন টিকিট পরীক্ষকরা। এর জন্য ব্যবহার করা হবে প্রগতি নামে একটি বিশেষ ট্রেন।
একটি তিন কামরার বিশেষ ট্রেন। যা একসময় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল পূর্ব রেলের বিভিন্ন শাখায়। মূলত, শিয়ালদা মেইন, উত্তর এবং দক্ষিণ শাখায় চেতনা নামের ওই বিশেষ ট্রেন দেখলেই নিমেষে স্টেশন চত্বর ফাঁকা হয়ে যেত। এমনকি স্টেশনে ঢোকা ট্রেনের যাত্রীদেরও ভয়ে বুক শুকিয়ে যেত। কারণ, চেতনা মানেই বিশেষ টিকিট পরীক্ষা চলছে। আর বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা যাত্রীদের মোটা অঙ্কের জরিমানা গুণতে হবে, অথবা গন্তব্যের বদলে জেলযাত্রায় যেতে হবে। তিন কামরার ট্রেন চেতনা এখন অতীত। যাত্রীরাও অনেকে টিকিট কেটে ট্রেনে যাতায়াত করতে অভ্যস্ত। কিন্তু পূর্ব রেলের কর্তাদের বক্তব্য, ফের বিনা টিকিটে যাত্রা করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই আবারও শুরু হয়েছে টিকিট পরীক্ষার বিশেষ অভিযান। দিন কয়েক আগেই পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছিলেন, বিনা টিকিটের যাত্রী ধরতে এবার বিশেষ অভিযান শুরু হবে। এবং তা হবে আচমকা ও অভিনব পদ্ধতিতে। জানা যাচ্ছে, যেমন স্টেশনে স্টেশনে টিকিট পরীক্ষা হবে, তেমনই দুই স্টেশনের মাঝেও হতে পারে।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। প্রয়োজনে এবার দুই স্টেশনের মধ্যবর্তী কোনও জায়গায় ট্রেন থামিয়েও যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করবেন টিকিট পরীক্ষকরা। যাতে তাঁরা স্টেশনে নেমে পালিয়ে যেতে না পারেন। আর এর জন্যই ব্যবহার করা হবে তিন কামরার বিশেষ ট্রেন প্রগতির। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রেলের বিশেষ ট্রেন প্রগতি কাজ শুরু করে দিয়েছে। আসানসোল ডিভিশনে প্রগতির সাহায্যে ইতিমধ্যেই মাঝপথে ট্রেনে উঠে পড়ছেন বিপুল সংখ্যক টিকিট পরীক্ষক এবং আরপিএফ জওয়ানরা। ফলে পালানোর সুযোগ পাচ্ছেন না বিনা টিকিটের যাত্রীরা। পূর্ব রেলের পরিভাষায় প্রগতি হল মাল্টিপারপাস টিকিট চেকিং স্পেশাল ট্রেন। লাল ও সাদা রঙের তিন কামরার এই বিশেষ ট্রেনের মাঝের কামরাটিতে রয়েছে রেলের নানান যন্ত্রাংশ। যা দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে সাহায্য করে। আর সামনে এবং পিছনের দুটি কামরায় রেলের টিকিট পরীক্ষক, রেলের উচ্চপদস্থ কর্তা এবং নিরাপত্তাবাহিনীর জওয়ানরা চড়তে পারবেন। দেখতে ছোট হলে কি হবে, অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছুটতে পারে প্রগতি। ধরুন কোনও স্টেশন থেকে একটি লোকাল বা মেল-এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে গেল। আর পরের স্টেশনের মাঝে কোনও এক জায়গায় লাল সিগনালে আগের ট্রেনটিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হবে। ওই স্টেশনেই অন্য প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিল প্রগতি। আগের ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কিছু পরেই প্রগতি রওনা দেবে। এবং দ্রুততার সঙ্গে সেখানে পৌঁছে যাবে। এরপর দ্রুত সেই ট্রেনে উঠে পড়বেন টিকিট পরীক্ষকরা। ফলে আর পালানোর সুযোগই পাবেন না বিনা টিকিটের যাত্রীরা। পুর্ব রেল সূত্রে থবর, গত ১২ থেকে ২০ জুন আসানসোল ডিভিশনে এই বিশেষ টিকিট পরীক্ষা করে প্রায় ১৩ হাজার বিনা টিকিটের যাত্রী ধরা হয়েছে। এবং তাঁদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা বাবদ আদায় করেছে রেল। সূত্রের খবর, এবার হাওড়া এবং শিয়ালদা ডিভিশনেও আসতে পারে প্রগতি। তাই সাবধান, টিকিট কেটেই ট্রেনে চড়া অভ্যাস করুন। না হলে অর্থদণ্ড এবং মানসম্মান দুইই যাবে।
Discussion about this post