নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বৈঠকে যোগ দেওয়ার মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে বৈঠক বয়কট। কার্যত এই বৈঠকে নেত্রীর উপস্থিতি নিয়ে জলঘোলা হয় বিস্তর। ইন্ডিয়া জোটের বিপক্ষে গিয়ে এমন সিদ্ধান্তগ্রহণে জোটের মধ্যে নীতিগত পার্থক্য দেখছেন অনেকেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন? বেশ কিছুদিন ধরে জল্পনা ছিল এমনটাই। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধোঁয়াশা থাকলেও শুক্রবার বিকেলে সব জল্পনা ও ধোঁয়াশা কাটিয়ে অভিষেক ব্যানার্জিকে নিয়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন নেত্রী। বাংলার স্বার্থেই বৈঠকে যোগদান। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ সর্ব সম্মুখে তুলে ধরতেই বৈঠকে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত। কলকাতা ছাড়ার আগে সেদিকে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে যান মমতা।
শুধু বাংলা নয় গোটা বাজেট জুড়ে বিভিন্ন রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা করেছে কেন্দ্র। বললেন মমতা। পাশাপাশি বাজেট ঘোষণার আগেই যে তিনি নীতি আয়োগের বৈঠকে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন, সেই কথাও জানাতে ভুললেন না । অর্থাৎ বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনাকে সামনে রেখে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগদানে যুক্তির কথা তুলে ধরলেন । বলাবাহুল্য বঞ্চনার প্রশ্নেই কংগ্রেস ও আপ, ডিএমকে সহ বেশ কয়েকটি দলের মুখ্যমন্ত্রীরা নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করছেন। তাহলে একই পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিলেন না কেন মমতা। বৈঠক বয়কট করেও তো বঞ্চনার কথা সম্মিলিতভাবে তুলে ধরা যেত। জোটে থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে পৃথক সিদ্ধান্তের পথে হেঁটে কি জোটের নীতিগত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেওয়া হল না?
মঙ্গলবার সংসদে বাজেট পেশের দিনই কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছিল, তাদের তিন মুখ্যমন্ত্রী কর্নাটকের সিদ্দারামাইয়া, তেলঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি এবং হিমাচলপ্রদেশের সুখবিন্দর সিংহ সুখু নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন না। এর পর একে একে বৈঠকে যোগ না-দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন আপ নেতা তথা পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবত মান, ডিএমকে-র নেতা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিনও। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি দিয়ে বৈঠকে না-থাকার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাসভবনে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক বসেছিল। বৈঠক শুরু হতেই সেখানে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তৃণমূলের দুই প্রতিনিধি ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হয়, কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠক বয়কট করবেন। সেই সময় তৃণমূলের প্রতিনিধিরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, মমতা বৈঠকে যোগ দেবেন। নীতি আয়োগের মঞ্চটিকে তিনি ব্যবহার করবেন বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদের সুযোগ হিসাবে। তৃণমূলের একটি সূত্রের মতে, ‘ইন্ডিয়া’র অভ্যন্তরে কংগ্রেস কার্যত ‘একতরফা’ ভাবে নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈঠক বয়কটের সিদ্ধান্ত সম্মিলিত ভাবে নিলে গোটা বিষয়টা অনেক মসৃণ ভাবে হতে পারত।বঙ্গ কংগ্রেস ও সিপিআইএম মমতা নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগদানের সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। দুই শিবির থেকে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল তুষ্ঠ করার প্রয়াস ওঠে নেত্রী মমতার বিরুদ্ধে।
এদিকে শনিবার সকালে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই নেত্রীকে বৈঠক ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে দেখা যায়। বৈঠকেও বৈষম্যের অভিযোগ তুলে মমতা জানান, তাঁকে বলতেই দেওয়া হয়নি। কার্যত মাত্র ৫ মিনিট সময় ধার্য ছিল তাঁর জন্য। যেখানে চন্দ্রবাবু নাইডু ২০ মিনিট সময় পেয়েছেন। বঞ্চনার কথা তুলতেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৈঠক বয়কট করার পরপরই সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন মমতা।
নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগও দিলেন। আবার বৈঠক বয়কট করে বেড়িয়েও আসলেন। রাজনীতি কারবারিদের একাংশ মমতার এমন অবস্থান দেখে বলছে এতে সাপও মরল অথচ লাঠিও ভাঙল না। অর্থাৎ একদিকে যেমন বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার বিষয়টি আরও প্রকট করে তুলে ধরা হল আবার অন্যদিকে জোটে থেকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে আলাদা স্ট্র্যাটেজি আছে সেই কথাও বিরোধী জোটে তুলে ধরা গেল।
Discussion about this post