বছরে ২ ক্ষেপে মেলে এমপি ল্যাডের টাকা। জল, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট সহ একাধিক খাতে উন্নয়নের উদ্দেশে কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত এই টাকা খরচ করার কথা। শাসক ও বিরোধী দল মিলিয়ে ৫ এমপির কথা তুলে ধরা হল। কে কোন খাতে কত টাকা খরচ করেছেন একবার দেখে নেব।
২০১৯ এর লোকসভা ভোটের পর কেটে গিয়েছে পাঁচ পাঁচটা বছর। এবার শুরু হয়েছে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। লোকসভা ভোটের মাধ্যমে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সদস্যরা নির্বাচিত হন। যাদের পোশাকি নাম সাংসদ। সাংসদেরা প্রতি বছর এলাকা উন্নয়নে ৫ কোটি করে টাকা এমপি ল্যাডে পেয়ে থাকেন। ২০১৯ এর ভোটের কিছু সময় পর বিশ্ব জুড়ে শুরু হয় করোনা পর্ব। দেশে ১৯ মাস বন্ধ ছিল এমপি ল্যাডের টাকা। করোনা যেতেই ফেরে পুরনো নিয়ম। উন্নয়নের মাপকাঠিতে প্রাপ্ত এই টাকা কেউ পুরোটাই প্রায় খরচ করেন, কেউবা খরচ করতে না পেরে প্রশ্নের মুখে পড়েন। স্বাস্থ্য, রাস্তা, আলো, শিক্ষা, হাসপাতাল সহ বিভিন্ন খাতে এই টাকা খরচ হয়ে থাকে।
রাজ্যে ৪২ টা আসনে মোট ৪২ জন এমপি রয়েছেন।
এদের মধ্যে কয়েক জনের এমপি ল্যাডের টাকা কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে একনজরে দেখে নেব
সুকান্ত মজুমদার
বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। এই বছর আর একবার তাঁর ভোট রাজনীতিতে ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে। বালুরঘাট থেকে দাঁড়িয়েছেন তিনি। জেলা প্রশাসনের তরফে জানা যাচ্ছে গত ৫ বছরে 17 কোটি 38 লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ করে ফেলেছেন সুকান্ত ৷ তাঁর সংসদ কোটার টাকায় একাধিক এলাকায় সোলার লাইটের ইউনিট বসানো হয়েছে, তেমনই রয়েছে মার্ক 2 টিউবওয়েল, বিশেষভাবে সক্ষমদের তিন চাকার সাইকেল বিলি, দুঃস্থ মহিলাদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই মেশিন প্রদান, আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াদের ল্যাপটপ প্রদান ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অনেকেই সাংসদের কাজে খুশি নন। তাঁদের দাবি নিজের সাংসদ কোটার 35 শতাংশ অর্থও খরচ করতে পারেননি সুকান্ত। তবে সুকান্ত মজুমদার সাংসদ থাকাকালীন রেলের যে অনেক কাজ হয়েছে তা সুকান্তর অতি নিন্দুকরাও অস্বীকার করতে পারবেন না। যার অন্যতম বালুরঘাট স্টেশনকে অমৃত ভারত প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা। বালুরঘাট-হিলি রেল সম্প্রসারণ । হাওড়াগামী ট্রেন সপ্তাহে দু’দিন থেকে পাঁচদিন করা ৷
লকেট চ্যাটার্জি
হুগলি থেকে দাঁড়িয়েছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। গত লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন লকেট। এবারও লকেটের উপর ভরসা রেখে দল তাঁকে হুগলি থেকে টিকিট দিয়েছে। দলের তরফে প্রায় দুই লক্ষ হ্যান্ড বিল ছাপানো হয়েছে যাতে গত পাঁচ বছরে সাংসদ লকেটের কাজের খতিয়ান মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। হ্যান্ডবিল অনুসারে গত ৫ বছরে ১৭ কোটি টাকা তার সাংসদ তহবিলের খরচ হয়েছে । করোনার জন্য দু বছরে সাংসদ তহবিলের টাকা বরাদ্দ হয়নি । নেত্রীর প্রাপ্য টাকা থেকে জল ,স্বাস্থ্য, পথবাতি , স্কুলের উন্নয়ন, অ্যাম্বুলেন্স সহ বিভিন্ন কাজে খরচ করা হয়েছে।
অর্জুন সিং
বার বার দল বদল করে দলবদলুর তকমা লেগেছে ভাটপাড়ার নেতা অর্জুন সিং এর গায়ে। তৃণমূল থেকে বিজেপি, ফের বিজেপি থেকে তৃণমূল। এখন তাঁর ঠিকানা পদ্মশিবির। তবে দলবদলুর তকমা লাগলেও অর্জুন জনদরদী নেতা। মানুষের হয়ে কাজ করেন। এমনটাই মনে করেন ভাটপাড়া তথা ব্যারাকপুর লোকসভার অধিকাংশ মানুষ। এমপি ল্যাডের টাকা গত ৫ বছরে ঠিক কতটা খরচ করতে পেরেছেন অর্জুন সিং একবার জেনে নেওয়ার চেষ্টা করব। অর্জুনের এমপি ল্যাডের টাকায় টিটাগড় পৌরসভার 14 নম্বর ওয়ার্ডে কবরস্থানের উন্নয়নে 46 লক্ষ টাকা ব্যরয় করে নতুন রাস্তা, পানীয় জল ও পর্যাপ্ত আলোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে ।হালিশহর পৌরসভার 22 নম্বর ওয়ার্ডের নয়াবাজার কবরস্থানের উন্নয়ন হয়েছে সাংসদ তহবিলের 35 লক্ষ টাকায় ।নৈহাটি বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছ’টি ঢালাই রাস্তা নির্মাণ হয়েছে সাংসদ তহবিলের টাকায় । হয়েছে আরও অনেক কাজ। তবে নিন্দুকরা দাবি করে থাকেন, ব্যা রাকপুর শিল্পাঞ্চলে অনেক রাস্তা এখনও বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে । ব্যা রাকপুর শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এখানে বহু কলকারখানা এখনও বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে । কিছু কারখানার ঝাঁপ আবার বন্ধ হওয়ার মুখে । ব্যা রাকপুর মহকুমার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবস্থা আজও বেহাল ।
কল্যাণ ব্যানার্জি
তিনবারের সাংসদ তৃণমূলের কল্যাণ ব্যানার্জি। শ্রীরামপুর তাঁর লোকসভা কেন্দ্র। চলতি বছরের নির্বাচনে নিজের প্রাক্তন জামাই কবীর শঙ্কর বসুর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। গত ৫ বছরে বিদায়ী সাংসদ ঠিক কত টাকা এমপি ল্যাড থেকে খরচ করেছেন দেখে নেব। শ্রীরামপুর লোকসভা এলাকায় মোট 17 কোটি 85 লক্ষ 21 হাজার 428 টাকা তাঁর উন্নয়ন তহবিল থেকে খরচ করেছেন ।রিষড়া মাতৃসদনে ব্যবহারের জন্য ইউজিজি কালার ডপলার মেশিন বসানো হয়েছে। খরচ হয়েছে ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।চাঁপদানি লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্সের জন্য খরচ ২৭ লক্ষ ৮৫ হাজার ২০০ টাকা। জাঙ্গিপাড়ায় রশিদপুরে উদয়চাঁদ বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য খরচ ৯ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯২২ টাকা। ডোমজুরে ঝাড়ধাধা রাজাপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নির্মাণের জন্য ১০ লক্ষ ৯ হাজার ৯৯৮ টাকা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অভিযোগও রয়েছে একাধিক। নিন্দুকরা বলছেন গত 15 বছরের সাংসদ শিল্প আনতে পারেননি। চাঁপদানি থেকে রিষড়া পর্যন্ত একাধিক জুটমিল ও কটনমিল ধুঁকছে। যুবক-যুবতীর জন্য কর্মসংস্থান হয়নি।
সৌগত রায়
গত ১৫ বছর ধরে দমদম লোকসভা এলাকার মানুষ আস্থা রেখেছেন সৌগত রায়ের উপরে। এমপি ল্যাডের হিসেব বলছে, দমদম কেন্দ্রে এই 17 কোটির মধ্যে থেকে 9.50 কোটি টাকা এসেছে সৌগত রায়ের হাতে ৷ তবে সেই টাকা থেকেও 2.42 কোটি টাকা খরচ হয়নি ৷ যদিও বিদায়ী সাংসদের দাবি, পুরো টাকাই তিনি এলাকার উন্নয়নে খরচ করেছেন ৷ পাশাপাশি বিদায়ী সাংসদের প্রতিশ্রুতি এই বার তিনি জিতলে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেসওয়েকে যোগ করবেন। তাঁর সঙ্গে দমদম স্টেশনের অন্তর্গত যে ওভারব্রিজ রয়েছে তাও সারাই করা হবে ।
কল্যান ও সৌগত রায়ের মত পোড় খাওয়া সাংসদদের এমপি ল্যাডের টাকা খরচ নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠছে তখন অভিষেক ব্যানার্জির ডায়মণ্ড হারবার উন্নয়নের নিরিখে মডেল হয়ে উঠেছে। এমনটাই দাবি করে থাকে রাজ্যের শাসকদল। তবে এই তো গেল বিরোধী ও শাসকদলের খাতায় কলমে হিসেব। আদৌ কাজ হয়েছে কিনা কটটাই বা হয়েছে তার প্রকৃত মার্কশিট পাওয়া যাবে ব্যালট বক্সে।
Discussion about this post