শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের বাড়ির ঘর এবং মন্দিরে ২০৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হল ডেইলি স্টার সংবাদপত্র। এদিকে একাধিক রিপোর্ট ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত এই হিংসায় ১২ জন হিন্দুকে খুন করার ঘটনা সামনে এসেছে সেদেশে। এদিকে গত ৯ অগস্ট থেকে পালটা আন্দোলনে নামেন সেদেশের হিন্দুরা। স্লোগান ওঠে ‘কথায় কথায় ভারত যা! দেশটা কারও বাপের না’। উল্লেখ্য, হিন্দুরা ঐতিহাসিক ভাবে আওয়ামি লিগকে সমর্থন করে এসেছে সেই দেশে। এই পরিস্থিতিতে যখনও দেশে কোনও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা গিয়েছে, হামলা হয়েছে সেই হিন্দুদের ওপরেই। সঙ্গে কথায় কথায় হিন্দুদের বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বলা হয় সেখানে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশে গ্রেপ্তার নিপীড়িত হিন্দুদের মুখ চিন্ময় প্রভু। সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে। তিনি বর্তমানে ইসকন পুণ্ডরিক ধামের সভাপতি। জানা গেছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ডিবি হেফাজতে রয়েছেন এখন। তাকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে জাতীয় পতাকা অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে মামলা রয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। মো: ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি এই মামলাটি করেন। সম্প্রতি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবি নিয়ে কয়েকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি চিন্ময় প্রভু নামে পরিচিত। এছাড়া তিনি পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবি করেছে বঙ্গ বিজেপি। তাকে মুক্তি না দিলে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে বিক্ষোভ করা হবে এবং সীমান্তে সনাতনীরা অবরোধ করবে বলে হুমকি দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই বিষয়ে বলেন বলেন, ‘চিন্ময় দাস আটক হয়েছেন বলে আমরা জানি। ওনার নামে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আপনাদের জানাবেন।’ প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের কট্টরপন্থী মুসলিমরা সেদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। এমনকি এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যায়িত করে চরম হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল। না হলে ইসকন ভক্তদের ধরে ধরে হত্যা করারও হুমকি দেয় তারা। বিষয়টি নিয়ে ভারত ও আমেরিকার সাহায্যের আবেদন জানান ইসকনের এক সদস্য। কট্টরপন্থী মুসলিমদের সামাজিক মাধ্যমে হুমকির পরই আতঙ্কিত হয়ে এই আবেদন জানান তাঁরা। এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় মিডিয়া সহ শুরু করে আন্তর্জাতিক স্তরে তীব্র নিন্দা হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারি নিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা বলেন, ‘বাংলাদেশে এক সন্ন্যাসীকে গ্রেফতার ও সেই দেশে হিন্দুদের ওপর যে ধারাবাহিক আক্রমণের খবর সামনে আসছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’ এরপর তিনি কেন্দ্রের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘আমি এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আবেদন জানাতে চাই, বাংলাদেশে সরকারের কাছে যাতে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। জোরালো ভাবে যাতে বাংলাদেশের হিন্দুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়।’ এর আগে এই নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল এই নিয়ে সংসদ চত্বরে টিভি৯ বাংলা চ্যানেলকে অভিষেক বলেছিলেন, ‘অন্য দেশের বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক না। তবে যে ঘটনাটা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুর্ভগ্যজনক।’ সেই ভিডিয়ো ক্লিপিং আবার তৃণমূল কংগ্রেস তাদের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে পরে তা ডিলিটও করে দেয়। সেই পোস্টে তৃণমূল লিখেছিল, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেন।’ মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন বাতিলের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাক্তন ইস্কন নেতাকে আটকের পর বাংলাদেশের চরমপন্থী গ্রুপগুলো হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর এবং মন্দিরে হামলার মতো ঘটনাও ঘটছে বাংলাদেশে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় অপরাধীরা যেখানে ধরাছোঁয়ার বাইরে, সেখানে একজন ধর্মীয় নেতা এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে যখন কথা বলেছে, তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়েছে। শেষে হিন্দু এবং সব সংখ্যালঘুদের সমাবেশ করার ও মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করাসহ তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বা বিএমজেপি। যার পতাকার রং ও নকশা অবিকল...
Read more
Discussion about this post