শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রবল জনমতের জেরে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল বাংলাদেশে, তাতেই গদিচ্যুত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। তিনি দেশও ছাড়েন সেই গণরোষের মুখে পড়ে। এখন বাংলাদেশ শাসন করছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এক অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকার। তাও এক মাসের বেশি সময় অতিবাহীত হয়ে গেল। কিন্তু এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জনপ্রিয়তা কেমন? তাঁদের উপর কেমন আস্থা দেখাচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষজন? এসব জানতে এক চমকপ্রদ সমীক্ষা চালিয়েছিল বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদপত্র প্রথম আলো। বিগত এক মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও কার্যক্রম নিয়ে মানুষের মতামত জানতে চাওয়া হয় ফেসবুক পেজে। ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা থেকে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশের নাগরিকরা এই সমীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছেন। আর তাতে মোট ১ লক্ষ ৩ হাজার ৬৫৬ জন নিজের মতামত জানিয়েছেন। আর তাতেই উঠে এল চমকে দেওয়ার মতো তথ্য। বাংলাদেশের প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষই খুশি নন নতুন তদারকি সরকারের কাজে। অন্যদিকে ইউনূসের উপদেষ্টামণ্ডলীর কাজে খুশি প্রায় ৪৩ শতাংশ।
ফেসবুকে চলা এই সমীক্ষার প্রশ্ন ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এক মাসে নেওয়া উদ্যোগ ও কার্যক্রমে আপনি কি সন্তুষ্ট? হ্যাঁ, না এবং মন্তব্য নেই বোতাম টিপে মতামত দিতে পারবেন বলা হয়েছিল। এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মোট ১ লক্ষ ৩ হাজার ৬৫৬ জন। এর মধ্যে হ্যাঁ বলেছেন ৪৫ হাজার ২৭৩ জন অর্থাৎ ৪৫ শতাংশ মানুষ। আর না বলেছেন, ৫৩ হাজার ৭২২ জন অর্থাৎ ৫১ শতাংশ মানুষ। আর মন্তব্য নেই বোতাম টিপেছেন, ৪ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ ৩ হাজার ৬৬১ জন নিজের মতামত জানাতে পারেননি। প্রথম আলোর এই সমীক্ষা রিপোর্ট সামনে আসতেই বাংলাদেশে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। কেন এত জলদি মানুষ অসন্তুষ্ট হয়ে পড়লেন সেটাও নিয়েও চলছে জল্পনা কল্পনা। এই বিষয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, মুহম্মদ ইউনূস ও তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলী মানুষের যে দাবি নিয়ে সরকারে এসেছিল তা অনেকাংশেই পূরণ করতে পারেননি। বাংলাদেশী নাগরিকদের একাংশের অভিযোগ, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এখনও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে চলেছে।
অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ প্রশাসন তা নিয়ে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করছে না। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায় বড় ধরণের প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমে গিয়েছেন তাঁদের উপর হয়ে চলা লাগাতার হামলার ঘটনায়। মন্দির বা গির্জা ভাঙচুর চলছে নির্বিচারে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর সেনা ও পুলিশের অত্যাচার ঘিরেও তৈরি হয়েছে অসন্তোষ। পাশাপাশি আওয়ামী লিগ ও ছাত্র লিগের নেতা ও কর্মী সমর্থকদের উপরও লাগাতার অত্যাচার, হামলা চলছে। বাংলাদেশের জাতীয় নাগরিক কমিটি ইতিমধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলন করে এই ধরণের হিংসা নিয়ে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। নাগরিক কমিটির দাবি, বাংলাদেশের মানুষ যে সমস্ত আকাঙ্ক্ষা থেকে আন্দোলনে নেমে এসেছিলেন, সে সব আকাঙ্ক্ষা এখনও অধরা। আবার কোনও কোনও ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ এবং তৎপরতা খুবই ধীরগতির। গণ আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র এবং যুবরা যদি বুঝতে পারে তাঁদের আশা এবং আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে ইউনূসের তদারকি সরকার। তাহলে তা দেশের জন্য আবারও ক্ষতিকর হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। আবার কেউ কেউ দাবি করছেন, ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া এই জনমত এবার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে তৎপর হবে বিএনপি এবং জামাতের মতো দলগুলি। যাতে তাঁরা ফের বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফিরতে পারে, তার ভিত্তি তৈরি করতে উঠেপড়ে লাগবে বিএনপি।
Discussion about this post