জীবন কতটা অনিশ্চিত, সেটা আরও একবার বুঝিয়ে দিল এই ঘটনা। কে জানত, তাদের তোলা এই সেলফি জীবনের শেষ ছবি হবে। এতগুলো মানুষের জীবন এক সুতোয় বেঁধে ফেলবে মৃত্যু!
তিন সন্তান, স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার। স্বপ্ন ছিল একরাশ। দেশ থেকে লন্ডনে গিয়ে পাকাপাকিভাবে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রতীক যোশী এবং কোমি ব্যাস। কিন্তু এক লহমায় সব শেষ। বৃহস্পতিবার আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় সবটা অতীত হয়ে গেল। পরিজনদের কাছে এখন এই সেলফিই একমাত্র ভরসা। যেটি দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগের তোলা ছবি।
এই ছবি যেন কথা বলছে। লন্ডনে নতুন জীবন শুরু করার একরাশ আনন্দ ধরা পড়ছে কোমি এবং প্রতীকের মুখে। তিন সন্তানের মুখেও উজ্জ্বল হাসি। জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর বয়সী যমজ ছেলে নকুল এবং প্রদ্যুৎ আর তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান মিরায়া কে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন প্রতীক যোশী এবং তার স্ত্রী কোমি ব্যাস। বহু বছরের কষ্ট ও প্রতিক্ষার পর, কাগজপত্রের জটিলতা কাটিয়ে স্বপ্ন পূরণের সময় এসেছিল। ২০১৬ সালে প্রতীক লন্ডনে থাকতে শুরু করেন। এবার সপরিবারে থাকার বন্দোবস্ত করছিলেন। জানা গিয়েছে, মাত্র দুই দিন আগেই কোমি ভারতের চাকরি ছেড়ে দেন। ব্যাগ গুছিয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে এয়ার ইন্ডিয়া বিমান ১৭১-এ ওঠেন লন্ডনের উদ্দেশে। এমনকি পরিজনরা বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। বিমানে ওঠার পর প্রতীক সপরিবারে হাসিমুখে ছবি তুলে পরিজনদের পাঠান। সঙ্গে লেখেন, নতুন জীবন শুরু। কিন্তু নতুন জীবন শুরু অধরাই থেকে গেল।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা নাগাদ সর্দার বল্লভভাই পটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। উড়ানের কিছু পরই অদূরে ভেঙে পড়ে বিমানটি। মাত্র কয়েক মিনিটেই সব শেষ। পাঁচজনের কেউই বেঁচে নেই। শোকের ছায়া নিয়ে এসেছে বাঁশওয়ারা জুড়ে। বিমান পরিবহন সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, যাত্রী ও ক্রু সদস্য মিলিয়ে ২৪২ জনের মধ্যে মাত্র একজনই জীবিত রয়েছেন। তিনি ৩৮ বছর বয়সি ব্রিটিশ নাগরিক, ভারতীয় বংশোদ্ভূত। যিনি 11A আসনের যাত্রী ছিলেন। বিশ্বাস কুমার রমেশ। উল্লেখ্য, বিজে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসের উপর ভেঙে পড়ে বিমানটি। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত বহু ডাক্তারি পড়ুয়ার মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত আরও অনেকে।
এই ঘটনা আরও একবার বুঝিয়ে দিল, জীবন যেমন সুন্দর, তেমনই নিষ্ঠুর। যেটুকু যাপন করতে পারছি, ততটুকু প্রানভরে বেঁচে নিতে হবে। কে জানে কাল কি হবে!
Discussion about this post