সারা রাজ্য যখন দুর্গোৎসবে মত্ত, তখন মহাপীঠ তারাপীঠ মন্দিরে আলাদা করে দেবী দুর্গার পুজো হয় কী? এই প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়। আসুন এই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক। আসলে তারাপীঠ হল সিদ্ধপীঠ, পাশাপাশি এটি অন্যতম তন্ত্রপীঠও বটে। তাই এখানে আলাদা কোনও দেবীমূর্তির পুজো হয় না। মা তারাকেই দুর্গারূপে পুজো করা হয় তারাপীঠে।
তারাপীঠের সেবায়েতদের বক্তব্য, এই তীর্থভূমি সতীর ৫১ পীঠের মধ্যে না পড়লেও ১০৮ পীঠের মধ্যে অন্যতম। আসলে তারাপীঠ হল তন্ত্রমহাপীঠ। বশিষ্ঠ্য দেব মাতৃ আরাধনা করে মায়ের ব্রক্ষ্ণশীলা উদ্ধার করে তারাপীঠ মন্দিরে স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সাধক বামাক্ষাপাও এখানে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। আর যে হেতু তারাপীঠ অত্যন্ত জাগ্রত এক সিদ্ধভূমি, তাই এখানে একমাত্র মা তারা ব্যতীত অন্য কোনও মাতৃমূর্তির পুজো হয় না। সেই ব্রক্ষ্ণ শিলার মধ্যেই সমস্ত দেবীর পুজো করাই নিয়ম।
তারাপীঠে দুর্গাপুজোর অষ্টমী তিথিতে হয় মহাষজ্ঞ। মূল মন্দিরের সামনে নাটমন্দিরে সেই যজ্ঞ হয়। মা দুর্গার নয়টি রূপের উদ্দেশ্যে নয়টি ঘট প্রতিষ্ঠা করে চলে পুজা। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চারটি তিথিতেই মা তারাকে দুর্গা রূপেই পুজো করা হয়। আর মহাষজ্ঞে ব্যবহার করা হয়, ১ হাজার ৮টি বেলপাতা, ৫০ কেজি বেলকাঠ এবং ১০ কেজি ঘি। অষ্টমীর দিন মা তারাকে সাজানো হয় রাজরাজেশ্বরী বেশে। সন্ধ্যেবেলা মায়ের বিশেষ আরতি হয়। রাতে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। তাতে থাকে লুচি, সুজি, বিভিন্ন মিস্টি ও ফল। তবে শুধু দুর্গাপুজোই নয়, তারাপীঠ মন্দিরে মা তারার শিলামূর্তিকে অন্যান্য দেবীরূপেই পুজো করার রীতি। যেমন, কালীপুজোর সময় কালী রূপে, লক্ষ্ণীপুজোর সময় লক্ষ্ণী রূপে এবং সরস্বতীপুজোর সময় সরস্বতী রূপে পুজো পান মা তারা। আবার আরেকটি মতে বিশ্বাস করা হয়, দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় মা তারাই হলেন দুর্গা। দেবী ভগবতী আদিশক্তি জগজ্জননী মা দুর্গা হলেন পরম দেবী। তিনিই তারা রূপে প্রতিষ্ঠিত।
Discussion about this post