আরজি কর, জয়নগরের পরে এবার কৃষ্ণনগর। আবারো পাশবিক নির্যাতনের খবর শিরোনামে। একদিকে পুলিশ সুপারের দপ্তর অন্যদিকে ডিএসপি ট্রাফিক এর অফিস। তার খুব কাছেই জেলা প্রশাসন আধিকারিকদের আবাসন। নিরাপত্তার দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হওয়ার সত্বেও সেই জায়গার পাশের পূজা মন্ডপ থেকে উদ্ধার হল এক তরুণীর অর্ধনগ্ন-আধা পোড়া দেহ। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মৃতা তরুনীর পুরুষ বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ এবং পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ-সহ আরও বেশ কয়েকটি ধারায় মামলাও রুজু করেছে পুলিশ। এই বিষয়ে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার কে অমরনাথ বলেন, “পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এবং মান্যতা দিয়েই এই সমস্ত ধারাগুলি লাগু করা হয়েছে। অভিযুক্ত রাহুল বসুকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাহুলের মা, বাবা এবং তাঁর দুই বন্ধুকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরিবারের দাবির ভিত্তিতেই রাহুল বসুর সঙ্গে অন্য কেউ ঘটনাস্থলে ছিল কি না, সে বিষয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।” পাশাপাশি পরিবারের দাবি, আরজি কর কাণ্ডের পর পুলিশের উপর ভরসা নেই তাদের। ফলে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানাচ্ছে তারা। সেই মর্মে আজ, বৃহস্পতিবার তাঁরা কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন বলে খবর। এনিয়ে ছাত্রীর মায়ের বক্তব্য, “নিরপেক্ষ তদন্ত এবং যথোপযুক্ত সাজার জন্য আমকরা চাই, মেয়ের খুনের তদন্ত করুক সিবিআই। প্রয়োজনে বাড়ি বিক্রি করে এই লড়াই চালাব।” জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নির্যাতিতা ছাত্রীর ময়নাতদন্ত হবে। তার জন্য কৃষ্ণনগর থেকে সাড়ে ১১টা নাগাদ মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে কল্যাণীর উদ্দেশে। এই ময়নাতদন্ত ঘিরে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে পুলিশ মর্গে কড়া পুলিশ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কৃষ্ণনগর ঘটনাকে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলতে রাজি নয় পুলিশ। বুধবার সকালে কৃষ্ণনগরে ওই তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয়েরাই দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ, পুলিশ-কুকুর। ঘটনাস্থল পরীক্ষা করা হয়। সংশ্লিষ্ট মামলায় অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযুক্তের মা ও বাবা সহ সবার বয়ান মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সুপারের দাবি, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃত যুবককে মূল অভিযুক্ত হিসাবে ধরে প্রাথমিক ভাবে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণও মিলেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সে সব নিয়ে এখনই কিছু জানাতে চাইছে না পুলিশ। অন্য দিকে, মৃতার শেষ ফেসবুক পোস্ট ঘিরেও রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। ওই পোস্টে লেখা, ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, আমি নিজেই দায়ী। তোমরা ভাল থেকো।’’
মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। মৃতার মা তাঁর কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘‘দিদি, মেয়ের ধর্ষণ হয়েছে। কিছু করুন।’’ লকেট জানান, সুবিচারের দাবি জানাবেন তাঁরা। পরিবারের পাশে থাকার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।
কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র অবশ্য ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন এই ঘটনায় তিনি মর্মাহত। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
Discussion about this post