ভারতীয় রেল, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। কিন্তু ব্যস্ততা ও যাত্রী পরিবহণের নিরিখে ভারতীয় রেল বিশ্বের অন্যতম বড়, এ কথা হলফ করে বলাই যায়। ভারতের রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৬৭,৪১৫ কিলোমিটারেরও বেশি। আর ভারতে ৭,৩২১টি স্টেশন রয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন দেশ জুড়ে এমন অনেক স্টেশন আছে, যার নামের পাশে “রোড” শব্দটি জুড়ে রয়েছে। যেমন আমাদের শিয়ালদা ডিভিশনে বিখ্যাত স্টেশন বিধাননগর রোড। কিন্তু কেন স্টেশনের নামের সঙ্গে এই “রোড” জুড়ে দেওয়া হয়? এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে অনেকেই বলতে পারবেন না। আসুন, ভারতীয় রেলের স্টেশনের নামকরণ করার এই নিয়মগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
যত দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে ভারতীয় রেলের রুট। ফলে নতুন নতুন স্টেশনেরও জন্ম হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ রেল স্টেশনের নাম সেই ব্রিটিশ আমল থেকে একই আছে। আবার ইদানিং রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করার একটা চল দেখা যাচ্ছে। এবার আসি আসল কথায়। আমরা দেখি রেল স্টেশনে নামের সঙ্গে লেখা থাকে জংশন, কোনও স্টেশনের নামের পাশে থাকে হল্ট, আবার কোথাও রোড। ফলে যাতায়াতের পথে অনেক যাত্রীর মনেই প্রশ্ন জাগে, নামে পাশে এই শব্দগুলির অর্থ কী? আসলে সেই ব্রিটিশ ভারতে যখন রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু হয়, তখন পরিবেশ-পরিস্থিতি আলাদা ছিল। রেললাইন পাতার সময় অনেক সময়ই বড় বা মাঝারি শহরের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে রেললাইন চলে গিয়েছে ওই শহরের কিছুটা দূর দিয়ে। সেক্ষেত্রে সেই বড় শহরের কাছাকাছি কোনও স্থান চিহ্নিত করে রেল স্টেশন তৈরি হয়। আর সেই শহরকে চিহ্নিত করার জন্য সেই স্টেশনের নাম ওই শহরের নাম রেখে “রোড” শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়। যেমন বিধাননগর রোড, খুরদা রোড, নাসিক রোড, ডালহৌসি রোড, গঙ্গাপুর রোড ইত্যাদি। এতে যাত্রীরা সহজেই বুঝতে পারেন, ওই শহরে যেতে হলে এই স্টেশনে নামতে হবে।
আবার খেয়াল করে দেখেছেন, কোনও কোনও স্টেশনের নামের পাশে ‘হল্ট’ শব্দ লেখা থাকে। প্রশ্ন জাগতেই পারে একটি স্টেশনকে ‘হল্ট’ কেন বলে? এগুলি আসলে অপেক্ষাকৃত ছোট স্টেশন। অনেক ক্ষেত্রেই ট্রেন পরিচালনার জন্য লাইন ক্লিয়ার পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ট্রেনকে কোথাও কোথাও থামাতে হয়। ভারতীয় রেল অনেক জায়গায় এরকম ছোট ছোট স্টেশন তৈরি করেছে, যেগুলি হল্ট স্টেশন। যেখানে সব ট্রেন দাঁড়ায় না। কিন্তু সূচি তৈরির সময় লাইন ক্লিয়ার রাখতে কিছু কিছু ট্রেনকে ওই হল্ট স্টেশনে থামানো হয়। মূলত পার্শ্ববর্তী স্টেশনের নির্দেশ অনুযায়ী এই হল্ট স্টেশনগুলিতে ট্রেন যাতায়াত করে। এই স্টেশনগুলিতে আর পাঁচটা স্টেশনের মতো সবরকম ব্যবস্থা থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই লুপ লাইন ব্যবহার করার জন্য হল্ট স্টেশনের গুরুত্ব বাড়ে।
এবার আসি জংশন স্টেশনের কথায়। যদি একটি স্টেশন থেকে কমপক্ষে তিনটি লাইন আলাদা আলাদা দিকে চলে যায়, তবে ওই স্টেশনটিকে জংশন বলা হয়। অর্থাৎ এই স্টেশনে কোনও একটি লাইন থেকে যদি একটি ট্রেন আসে, তবে বেরোনোর পথে কমপক্ষে দুটি আলাদা দিকের লাইন থাকতে হবে। তবে ভারতে অনেক জংশন স্টেশনে তিনের অধিক লাইন যুক্ত হয়েছে। যেমন মথুরা জংশন, সালেম জংশন থেকে ছয়টি রুট, বিজয়ওয়াড়া থেকে পাঁচটি এবং বেরেলি জংশন থেকে পাঁচটি লাইন ইত্যাদি।
Discussion about this post