বর্তমানে বাংলাদেশের দখলদারী সরকার বাংলাদেশকে নিজেদের দেশ মনে করে কি? কারণ গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে,যাতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে এটা বোঝানো যেতে পারে যে ভারত বাংলাদেশকে সব দিকে দিয়ে ধ্বংশ করে দিচ্ছে। তাই ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করতেই হবে। কিন্তু এটা বুঝতে হবে যে এই যুদ্ধ কারা চাইছে? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষজন,যারা তাদের সংসার চালাতে গিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে নাভিশ্বাস তুলছে, যাদের ভুল বুঝিয়ে ভারত বিদ্বেষী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে, তাদের মতামত শুনে তো তাদের বোকা মনে হচ্ছে না। সেই যুক্তিবাদীরা কি যুদ্ধ চাইছে, তা তো নয়।আর বাংলাদেশের মুল যে দুটি দল, বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ-তারা কি যুদ্ধ চাইছে? তাদের বক্তব্যে যুদ্ধে যাওয়ার ঘোষনা আছে কি? না তারা কেউ যুদ্ধ চাইছে না, তারা চাইছে ভোট।
আর গন্ডগোলটা এখানেই। বাংলাদেশের দখলকারী সরকার সেই ভোটটাই চাইছে না। আর ভোট আটকাতে গেলে বাংলাদেশকে একটা যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিতে হবে। কিন্তু যুদ্ধ তো করা উচিৎ আরাকান আর্মির সঙ্গে, তাহলে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ কেন করতে চাইছে দখলকারী ইউনূস সরকার? যদি শেখ হাসিনাকে ফেরানোর প্রশ্ন ওঠে তবে ভারত দু-ই দেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পাঠাবে না। কারণ এখন হাসিনাকে দেশে পাঠানোর অর্থ তাকে হত্যা করানো শুধু নয়, বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ লাগানো। আর আগামীদিনে ভোট হলে যদি আওয়ামীলীগ জেতে, তখন সেই সরকার হাসিনাকে নিয়ে ভারতের কাছে প্রশ্ন করে, ভারত কি সেই সরকারকে উত্তর দিতে পারবে। তাই কোন দখলদারী সরকারের কাছে কেন হাসিনাকে পাঠানো হবে? এই প্রশ্ন তো থাকবেই।আসলে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করলে এক ঢিলে অনেক পাখি মারা যাবে। এখন দেখে নেওয়া যাক সেগুলি কি কি। প্রথমে আসি বাংলাদেশ জানে ভারত ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশ তাদেরকে ভোটের জন্য চাপ দিতে পারবে না। এখন প্রশ্ন ভারত কেন অন্য একটি দেশে ভোটের জন্য চাপ দেবে? তাদের কি সেই অধিকার আছে? সেটা কি উচিৎ? এটা সত্যি হলে তো বাংলাদেশের এই দখলদারী সরকারের কথাই ঠিক প্রমানিত হয় যে, ভারত বাংলাদেশে তাদের প্রভুত্ব বিস্তার করে রেখেছে। কিন্তু যুক্তি সংগত উত্তর হল, হ্যাঁ ভারতের সেই অধিকার আছে, তবে সেটা ক্ষমতার জোর নয়, সেটা হল কুটনৈতিক জোর বা কূটনৈতিক কারণ। বিশ্লেষন করে বলতে গেলে বলতে হয় যে, এই মহুর্তে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ দুটি, মায়ানমার এবং ভারত। এবং ভারতের সঙ্গে সবথেকে বেশী সীমান্ত এলাকা।এখন ভারত চাইবে বাংলাদেশে একটি স্থায়ী নির্বাচিত সরকার।
স্থায়ী এবং নির্বাচিত সরকার থাকলে তবেই দেশে স্থিরতা বজায় থাকবে। ভারতের প্রয়োজন বাংলাদেশে স্থিতিশীল সরকার, এবং স্থিরতা। কারণ ভারত বাংলাদেশে যে বিনোয়োগ করে রেখেছে সেটা শুধু ব্যবসায়িক বিনিয়োগ নয়, সামাজিক রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক বিনিয়োগ। যা রক্ষা করতে পারে একটি স্থায়ী সরকার। তাছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে যে কোন চুক্তি করতে গেলে তা একটি অস্থায়ী সরকারের সঙ্গে করলে, তার ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যায়। এছাড়া বর্তমান জিও পলিটিক্সে প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের প্রভাব তার সীমান্ত এলাকার স্থিরতা নিশ্চিত করে। এছাড়াও কিছু অপ্রকাশ্য কুটনীতির বিষয় থাকে। এবার আসি দ্বিতীয় কারণে, যে কেন ইউনূস ভোট চাইছেন না। সেটি হল অনেক চেষ্টা করে একটি নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে ইউনূস বাহিনী। তারা চাইছে কিছু দিন ক্ষমতা ভোগ করতে। আর তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা হয়তো স্থায়ীভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখার। ভোট করালে সেটা সম্ভব নয়। কারণ তারা তিন মাসের মধ্যে ভোট করানোর কথা বলে আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সামিল করেছিল। আর তাদের সেই ক্ষমতা নেই, যে তারা এখন ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে যাবে।
আর তৃতীয় কারণ হল, এখন দখলদারী সরকারে যারা মুখ-তারা আসলে কারা? তারা হল পাকিস্তানের দালাল-যারা প্রকাশ্যে মুক্তি যুদ্ধে রাজাকারদের সমর্থনকারী, আর রাজাকার কারা ছিল তা বাংলাদেশের মানুষ ভালো করে জানে। ভালো করে জানে তাদের অত্যাচার। আর পাকিস্তানের সেই অত্যাচারকে ভুলাতে গেলে মুক্তিযুদ্ধকেই ভুলিয়ে দিতে হবে।ভুলিয়ে দিতে হবে মুক্তি যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। আর সেই কারনেই বারাবার বাংলাদেশের মানুষকে বোঝানো হচ্ছে ভারত তাদের স্বার্থে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে, পাকিস্তানকে আলাদা করেছে। আর এক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থ হল তাদের সেভেন সিস্টারসকে রক্ষা করা। ভারত যদি স্বার্থপরই হত, তাহলে ৭১ এর যুদ্ধের পর, ভারতের মানচিত্র কিছুটা বদল করে, দেশের সীমানা বাড়িয়ে নিতে পারত। তো ইউনূস বাহিনী এটা বুঝেছে,যে এত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বোকা বানানো যাবে না। এখন ভোট না করাতে হলে যেটা করতে হবে, সেটা হল যুদ্ধ করা, এবং সেটা করতে হবে ভারতের সঙ্গে। কারণ ভারত ছাড়া আর কোন দেশ বাংলাদেশে ভোট করানো নিয়ে কোন চাপ দেবে না। তাই দেশের ক্ষতি করে হলেও ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে।যদিও এই দখলদারী সরকার বাংলাদেশকে নিজেদের দেশ মনে করে কিনা সেটা বড় প্রশ্ন? এরাতো পাকিস্তানকে নিজেদের দেশ মনে করে। তাই ৭১ এর যুদ্ধকে অন্যায় বলে মনে করে। পাকিস্তানের সঙ্গে আবার এক হয়ে যেতে চায়।
Discussion about this post