প্রথমে ফলাও করে জানানো হল ডোনাল্ড ট্রাম্পের তরফে এসেছে আমন্ত্রণ। যা নিয়ে বাংলাদেশের ঘরোয়া রাজনীতি তোলপাড় হল। এরপর সেই প্রচার যে বিভ্রান্তিকর, সেটা জানিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে বিতর্কে জল ঢালা হল। এর মাঝে খামোখা মুখ পুড়লো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি-র। ঘটনার সূত্রপাত গত ১১ জানুয়ারি, বিএনপি-র মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
আগামী ৫-৬ ফেব্রুয়ারি এটি অনুষ্ঠিত হবে। ওই ফেসবুক পোস্টে এও দাবি করা হয়, বিএনপি-র চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং-এর সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছেন। ওই ফেসবুক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিএনপি-র তিন নেতার ছবিও দেওয়া হয়েছিল। এই ফেসবুক পোস্ট ঘিরে শুরু হয়ে যায় তুমুল বিতর্ক। বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিএনপি নেতারা। যা নিয়ে বিব্রত হয় বাংলাদেশের তদারকি সরকার। কারণ, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, সেখানে বিএনপি-র তারেক রহমান-সহ তিন নেতার আমন্ত্রণ অন্যমাত্রা পেয়ে যায়। এরপরই আসরে নামে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস।
উল্লেখ্য ১১ জানুয়ারিতেই ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে যোগ দিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মার্কিন দূতাবাস থেকে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের কোনও যোগ নেই। এটা সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে হয়ে থাকে। ফলে চরম বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায় বিএনপি নেতৃত্ব। এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে ১২ জানুয়ারি এক প্রেস বিবৃতি জারি করে বিএনপি জানায়, ৬ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিতব্য ‘জাতীয় প্রার্থনা প্রাতরাশ’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আমন্ত্রণ সম্পর্কে কিছু সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে, বিএনপি মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে আমরা জানাতে চাই যে, অনুষ্ঠানটি মার্কিন সরকার আয়োজন করে না। জাতীয় প্রার্থনা প্রাতরাশ ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং এতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি, সিনেটর, কংগ্রেস সদস্য, ব্যবসায়ী এবং ১০০টিরও বেশি দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি ‘জাতীয় প্রার্থনা প্রাতরাশ ফাউন্ডেশন’ আয়োজন করে থাকে; যা একটি নির্দলীয় সংস্থা এবং রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ব্যবসায়িক অভিজাতদের একত্র হওয়ার, দেখা করার, আলোচনা করার এবং একসঙ্গে প্রার্থনা করার জন্য একটি বিশেষ ফোরাম।
এই ফাউন্ডেশন মার্কিন নীতিনির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্ব শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত। পাশাপাশি এও জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানের সহসভাপতি, মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্য বেন ক্লাইন এবং ডেমোক্র্যাট সদস্য থমাস আর. সুজি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণটি জানিয়েছেন। এ সত্ত্বেও যদি কোনও ব্যক্তি, মিডিয়া সূত্রে প্রকাশিত সংবাদের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়ে থাকে, তবে আমরা বিএনপি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বিএনপি-র মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতি আসার পর বিতর্কের অবসান হয়। প্রসঙ্গত, আগামী ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারই প্রথম প্রথা ভেঙে তিনি বিশ্বের বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান বা তাঁদের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেই আমন্ত্রণপত্র এসে পৌঁছেছে নয়া দিল্লিতেও। ভারতের তরফে ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। চিনের প্রেসিডেন্টের কাছেও গিয়েছে আমন্ত্রণপত্র, তবে চিন থেকে কে যাবেন সেটা এখনও ঠিক হয়নি। উল্টোদিকে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানানো হয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে।
Discussion about this post