গত রবিবার ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় বর্মাকে তলব করেছিল বাংলাদেশের ইউনুস সরকার। এর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ভারতের বিদেশমন্ত্রকের তরফে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হল বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার নুরুল ইসলামকে। সূত্রের খবর, ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া লাগানো নিয়ে যে গোলমাল হচ্ছে জায়গায় জায়গায়, তা নিয়েই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে বিবাদ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগ বাড়িয়ে ঢাকায় অবস্থিত ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করে। এর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ভারত পাল্টা বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রদূতকে তলব করে বুঝিয়ে দিল, শান্তি বজায় রাখুন, না হলে সমস্যায় পড়তে হবে। অর্থাৎ ইটের জবাব পাটকেলে দিল ভারত।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বেশ কয়েকদিন ধরেই সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বাংলাদেশের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী ও চোরাচালানকারীরা। তাঁদের সঙ্গ দিচ্ছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বা বিজিবি-র জওয়ানরা। ফলে অরক্ষিত সীমান্তে কাঁটাতাঁর দেওয়ার কাজে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ-কে। জানা যাচ্ছে, ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তে কমপক্ষে পাঁচটি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া লাগানো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার কয়েকটি জায়গায় আক্রান্ত হয়েছে বিএসএফ। তাঁদের হাত থেকে রাইফেল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, এমনকি এক-দুই বার বিএসএফ জওয়ানদের শূন্যে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে।
বাংলাদেশের তদারকি সরকার উল্টো ভারতকেই চাপ দেওয়ার কৌশল নিয়েছে। সীমান্তে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলেই বিজিবি তাতে বাধা দিচ্ছে। আবার ঢাকায় অবস্থিত ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভর্মাকে ডেকে, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউনূস প্রশাসন। যা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিল। ভারত কেন কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে না সেই প্রশ্নও ওঠা শুরু করেছিল। এই পরিস্থিতিতে দিল্লি ডেকে পাঠায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার নুরুল ইসলামকে। তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই ধরণের উত্তেজনা সৃষ্টির প্রয়াস দুই দেশের পক্ষেই বিপজ্জনক। ফলে, প্রয়োজনে আলোচনার টেবিলে বসে বিবাদ মিটিয়ে নেওয়া উচিত। এর আগে গত রবিবার বাংলাদেশের ইউনুস সরকারের তলবের পর ঢাকায় সাক্ষাৎ শেষে প্রণয় বর্মাও একই সুরে বলেছিলেন, “নয়া দিল্লি ও ঢাকা ‘নিরাপত্তার কারণে সীমান্তে বেড়ার বিষয়ে একটি বোঝাপড়ার মধ্যে রয়েছে। এই বিষয়ে বিজিবি ও বিএসএফ কথা বলছে”।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের উস্কানিতে বাংলাদেশের তদারকি সরকার কার্যত পায়ে পা বাড়িয়ে ঝগড়া লাগানোর চেষ্টা করছে। এর আগে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নানা উস্কানিমূলক মন্তব্য করা হয়েছে। আবার হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমের মতো ছাত্র নেতারা ভারতকে নিয়মিত হুশিয়ারি দিতেন। এমনকি তদারকি সরকারের উপদেষ্টা মহাফুজ আলম একটি বিতর্কিত ম্যাপ-সহ ভারতের কয়েকটি প্রদেশ দখল নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। যদিও প্রতিটি বিষয়ে নীরব থেকে বাংলাদেশকে ভারত বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে, তাঁরা এসব পাত্তা দিচ্ছে না। ওই সমস্ত উস্কানিমূলক বার্তায় ভারত সাড়া না দেওয়ায় এবার বাংলাদেশ অন্য পন্থা অবলম্বন করল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারত অরক্ষিত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলেই বাঁধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। আর বিজিবি অনুপ্রবেশকারী বা চোরাচালনের সঙ্গে যারা যুক্ত তাঁদের এগিয়ে দিচ্ছে যাতে বিএসএফ কোনও বড় প্রতিক্রিয়া দেখায়। সীমান্তে যদি বিএসএফ গুলি-গোলা চালায়, তবে বাংলাদেশের সুবিধা হবে ভারতকে চাপে ফেলতে। যে ফাঁদে পা দেয়নি নরেন্দ্র মোদি সরকার।
দিন কয়েক আগেই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছিলেন, তিন বিঘা করিডর, লালমনির হাট, চাপাইনাওয়াবগঞ্জ-সহ ৫টি জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাঁর আরও দাবি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে সমঝোতায় ভারসাম্যহীনতার কারণে ‘ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তে বেশ কিছু ইস্যু উঠে আসছে। বোঝাই যাচ্ছে, তদারকি সরকার অন্তরদেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় গুলিয়ে ফেলছে। শেখ হাসিনার আমলে হওয়া আন্তর্জাতিক চুক্তি, সমঝোতাগুলিকেও অস্বীকার করতে চাইছে। যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সামিল। যে এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের নিয়ন্ত্রণে, সেই এলাকা নিজেদের বলে দাবি করছে বাংলাদেশ। এটা নিয়ে বিবাদ বাড়ানো যে বাংলাদেশের পক্ষে ভালো হবে না, সেটা দিল্লিতে ডেপুটি হাইকমিশনারকে ডেকে বুঝিয়ে দিল ভারত।
Discussion about this post