বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের এক প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মহাপরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের এই মন্তব্যগুলি নিয়ে উত্তাল বাংলাদেশ। গত সোমবার সন্ধ্যা তুলসী এহেন মন্তব্য করেছিলেন, লম্বা বিবৃতি দিয়ে যার জবাব বাংলাদেশ দিয়েছে সোমবার গভীর রাতে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার দফতর এক ফেসবুক পোস্টে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে এবং বলে বাংলাদেশ নিয়ে তুলসীর বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক, গভীর উদ্বেগজনক ও হতাশাব্যাঞ্জক। এমনকি তুলসীর এই বক্তব্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তির উপর আঘাত বলেও উল্লেখ করে ইউনূসের দফতর। ওই বিবৃতিতে ইউনুস সরকারের দাবি, বাংলাদেশ ইসলামিক খিলাফতের ধারণাকে কখনও গ্রহণ করেনি। সকলের উচিত বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনও প্রচচিত ধারণার বসে মন্তব্য না করা। বাংলাদেশের এ হেন প্রতিক্রিয়া দেখে চোখ কপালে উঠেছিল অনেকের। যদিও একটি অংশ খুবই উৎফুল্ল হন, তাঁদের দাবি বাংলাদেশ এখন সাবালক হয়েছে তাই যে কোনও দেশের চোখে চোখে রেখে কথা বলতে পারে।
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যারা বুঝছেন, তাঁরা কার্যত অসহায়। কিন্তু কেন ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাবিনেট সদস্যের বিরুদ্ধে কড়া বিবৃতি জারি করা হল? সূত্রের খবর ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বিবাদ এড়াতে প্রতিক্রিয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রাথমিকভাবে। কিন্তু বেঁকে বসে কট্টর ইসলামিক দলগুলি। বিশেষ করে জামায়তে ইসলামী। তাঁদের প্রবল চাপের মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দিতে বাধ্য হন মুহাম্মদ ইউনূস। এও জানা যাচ্ছে, ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজেই এই বিবৃতি লিখেছেন। যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রও এবার কড়া বিবৃতি দিল বাংলাদেশকে। হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখপাত্র ট্যাম্মি ব্রুশ এক সাংবাদিক সম্মেলনে তুলসীর সুরেই বাংলাদেশকে হুঁশিয়ারি দিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার হামলা বন্ধে কী পদক্ষেপ করে সে দিকে নজর রাখছে মার্কিন প্রশাসন। তিনি বলেছেন,পৃথিবীর যে কোনও দেশেই সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করা হলে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকি।
এ তো গেল বাংলাদেশ ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে গরমা-গরমির বিষয়। কিন্তু এখনও ট্যুইস্ট অনেক বাকি। সূত্রের খবর, জামাত নেতাদের চাপে ইউনূস প্রশাসন তো মার্কিন গোয়েন্দা মহাপরিচালককে মিথ্যাবাদীও বানিয়ে দিয়েছে। ফলে এবার আরও বড় চাপ এসে পড়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের ঘাড়ে। সেটা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ। জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের থেকে হুঁশিয়ারি এসে গিয়েছে ঢাকার যমুনায়। দ্রুত ব্যবস্থা না নিয়ে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন। সম্ভবত সেই কথাই জানাতে সেনাপ্রধান দেখা করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসও বড় খেলোয়াড়। সম্প্রতি তিনি নিজেই দাবি করেছিলেন যে তিনি বড় মাঠের খেলোয়াড়। জানা যাচ্ছে তিনি একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছেন নিজের মাথা বাঁচাতে। ইউনূসের পরিকল্পনা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশ এবং নিজের ভাবমূর্তি ফেরানো। সেই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রোষানল থেকেও রেহাই পাওয়া। সূত্রের খবর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাফ জানিয়েছে বাংলাদেশে জঙ্গি এবং জঙ্গিদের মদতদাতাদের যে কোনও মূল্যে দমন করতে হবে। এও জানা যাচ্ছে, যখন জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সফর করছিলেন তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে ট্রাম্পের এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন। মনে করা হচ্ছে তুলসী গ্যাবার্ড যে বলেছিলেন ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সবে মাত্র যোগাযোগ শুরু করেছে। তিনি আসলে এটাই বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় যেহেতু জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনীয় গুতারেস সফর করছিলেন, তাই বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।
জানা যাচ্ছে, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী মুহাম্মদ ইউনূস একটি তালিকা তৈরি করেছে। তাঁতে ১০০-র সামান্য বেশি কয়েকজনের নাম রয়েছে। আসন্ন ঈদের পরই এই তালিকা ধরে ধরে গ্রেফতার করা হবে। এই তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজনের নাম একেবারেই চমকে দেওয়ার মতো। এই তালিকায় ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির মাথা যেমন আছে, তেমনই ইসলামী জিহাদের মদতদাতা হিসেবে কয়েকজনের নাম রয়েছে। তালিকায় চমকে দেওয়ার মতো নাম হলেন, জামায়তে ইসলামির আমির ডঃ শফিকুর রহমান এবং জামাত নেতা মামুনুল হক। তালিকায় নাম আছে ফরহাদ মাজহারের। বাংলাদেশের তদারকি সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার নামও আছে এই তালিকায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মাহফুজ আলম। জানা যাচ্ছে আরও দুই-তিন জন উপদেষ্টার নাম আছে এই তালিকায়। পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই তরুণ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলমের নামও রয়েছে এই তালিকায়।
বাংলাদেশের সদ্য গজিয়ে ওঠা আরেকটি প্রতিবাদী সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তালিকা ধরে ধরে অ্যাকশন শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। যার নমুনা সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গা জঙ্গিনেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি-সহ মোট সাতজনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা এজেন্সি র্যাব। বাংলাদেশের কয়েকজন সাংবাদিক দাবি করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে প্রথমে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ইউনূস প্রশাসন তাঁদের জানায় সামনে ঈদ রয়েছে, এই সময় এই ধরণের পদক্ষেপ নিলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র জানায় ঈদের একসপ্তাহের মধ্যেই এটা কার্যকর করতে হবে। অর্থাৎ ধরপাকড় শুরু করতে হবে।
আর এই খবরটি লিক হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের উপদেষ্টা মণ্ডলী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের মধ্যে একটা উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেরই রাতের ঘুম উড়েছে আবার অনেকে রাতে নিজের বাড়িতেই থাকছেন না। যদিও ওই সূত্র দাবি করছে, মুহাম্মদ ইউনূসের পরিকল্পনা এই গ্রেফতারি হবে লোক দেখানো। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের বদনাম ঘোঁচানোর জন্য। কিন্তু আদৌ জামাত, হিজবুতের মতো অন্যন্য ইসলামিক কট্টরপন্থী সংগঠনগুলি এটা কতটা মেনে নেবেন, সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়ে যাচ্ছে। ফলে বলাই যায় শাখের করাতের মতো অবস্থায় রয়েছেন নোবেলজয়ী ইউনূস।
Discussion about this post