চিন নিয়ে একটা প্রবাদ আছে, কুসংস্কারও বলা যায়। এশিয়া মহাদেশের যে যে দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধানরা চিন সফর করেছেন, তাঁরা ফিরে এসে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। ঘটনাগুলি কাকতালীয় হতে পারে, কিন্তু এর বাস্তবতা আছে, তথ্য প্রমান আছে। মুহাম্মদ ইউনুষকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়তো বলা যাবে না, কিন্তু তিনি একটা অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তো বটেই। ফলে তাঁর এই চিন সফর নিয়ে এখন থেকেই আশংকা ঘনাতে শুরু করেছে। বিষয়টা একটু খুলে বলি। ২০১৪ সালের ৮ থেকে ১০ জুলাই, চিনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং-এর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিন সফর করেছিলেন। কিন্তু নানা কারণে সেই সফর অসমাপ্ত রেখেই ঢাকা ফেরেন শেখ হাসিনা। তারপরের ইতিহাস আপনাদের জানা। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। ভাবছেন এর সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের চিন সফরের সম্পর্ক কি? আসুন তাহলে আরও কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ১৯৮১ সালের ১৫ এপ্রিল চিন সফর সেরে ঢাকায় ফিরেছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন শাসক জিয়ায়ূর রহমান। তার কয়েকদিনের মধ্যেই এক সামরিক অভ্যেয়ুত্থানে জিয়ায়ূর রহমানের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশের আরেক সামরিক শাসক এরশাদও শেষ বিদেশ সফর করেছিলেন চিনে। ১৯৯০ সালের ৫ নভেম্বর তিনি চিন সফর শেষ করে দেশে ফিরেছিলেন। এর একমাসের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হন এরশাদ। এই ঘটনাবলী দেখলে মনে হতেই পারে চিন দেশটার সঙ্গে বাংলাদেশী রাষ্ট্র নেতাদের একটা ফাঁড়া লুকিয়ে আছে। তবে শুধু বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানের সর্বশেষ ক্ষমতাচ্যুত নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও চিন সফর করেই ইসলামবাদ ফিরেছিলেন। আবার শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষেও বেজিং থেকে ফিরলেন আর কয়েকদিনের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হলেন। মায়ানমারের সামরিক শাসক জুন্টা চিনের প্রতি প্রবল অনুগত্য দেখিয়ে ঘনঘন চিন সফর করছেন, তাঁরও অস্তিত্ব এখন সংকটে। তাহলে কি এবার মুহাম্মদ ইউনূসের পালা?
ইউনূস এমন একটা সময়ে বেজিং যাচ্ছেন যখন ঢাকার আকাশ কার্যত কালো মেঘে ছেয়ে আছে। কেউ বলছেন গৃহযুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, আবার কেউ দাবি করছে যে কোনও সময় সামরিক শাসন জারি হতে পারে ভারতের পড়শি দেশে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যত আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক। ইউনূসের ধামাধারী ছাত্র নেতারা সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। সবদিক দেখেও ইউনূস সাহেব নীরব। আমরা জানি, ইতিমধ্যেই উচ্চপদস্থ এক মার্কিন সামরিক কর্তা দলবল নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি কি কি কাজে বাংলাদেশে এসেছেন তা নিয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মুহাম্মদ ইউনুস চিন প্রশাসনের সঙ্গে যাতে কোনও সামরিক চুক্তি না করে সেটা নিয়ে চাপ দিতেই তড়িঘড়ি ওই সেনা কর্তাকে পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। অপরদিকে শোনা যাচ্ছে, ইউনূস বেজিংয়ের সঙ্গে তিস্তা নদী মহাপ্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষর করতে ইচ্ছুক। যা ভারতের স্বার্থ ও নিরাপত্তা বিষয়ে সংঘাত তৈরি করবে। ফলে ভারতও নিজের মতো করে চাপ বাড়াচ্ছে ঢাকার ওপর। যদিও কূটনৈতিক মহল বলছে, চিন কোনও মতেই একটা অস্থায়ী সরকারের সঙ্গে এই ধরনের চুক্তি করবে না। সেই কারণে বেজিং জামাত বা বিএনপি নেতাদের চিনে ডেকে আগেভাগে এই বিষয়ে কথা বলে রেখেছে। যাতে নির্বাচনে বিএনপি বা জামাত জোট যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন তখন তিস্তা নদী প্রকল্প স্বাক্ষরিত করতে তাদের সুবিধা হয়। সবদিক বিবেচনা করলে বোঝা যায় মুহাম্মদ ইউনূসের এই চিন সফর খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেবলমাত্র ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যাওয়া ছাড়া। এখন দেখার, ইউনূস আদৌ চিন থেকে দেশে ফেরেন কিনা, নাকি বেজিং থেকেই সরাসরি প্যারিসের ফ্লাইট ধরবেন। যেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন একান্ত অনুগত পিনাকী ভট্টাচার্য। আর যদি তিনি ঢাকায় ফেরেনও, তারপরেই তাঁকে বিদায় নিতে হবে লাঞ্ছনা ও অপমানকে সঙ্গী করে।
Discussion about this post