সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস স্বয়ং তার প্রতিটা বক্তব্যের মাধ্যমে বারংবার যুদ্ধের কথা তুলে ধরছেন। স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ তৈরি হচ্ছে তার প্রতিটি বক্তব্যের মাধ্যমে কেন তিনি যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন? বিষয়টি ঠিক কী?
বাংলাদেশের ক্ষমতায় রয়েছে মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে মঞ্চে উঠে ডঃ মোঃ ইউনুস বলেছেন, “দেশবাসীকে আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম পর্ব সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। প্রথম পর্বের সমাপ্তির মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হলো। সব সময় মনে রাখতে হবে, আমরা কিন্তু যুদ্ধাবস্থায় আছি। ‘গুজব’ হলো এই জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পরাজিত শক্তির মস্ত বড় হাতিয়ার।
আরও বলেন,গুজব দেখলেই সূত্রের সন্ধান করতে থাকবেন। বহু অভিজ্ঞ সমরবিশারদ এই গুজবের পেছনে দিনরাত কাজ করছেন, সীমাহীন অর্থ এর পেছনে নিয়োজিত আছে। এর মূল লক্ষ্য জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করা। আমরা তাকে ব্যর্থ হতে দেব না। কারণ, ইউনূসের দাবি, বাংলাদেশ নিয়ে যা খবর ছড়িয়ে পড়ছে তা সবটাই গুজব ও রটনা। এই গুজব ছড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং ভারতীয় মিডিয়া। যদিও তিনি কারও নাম উচ্চারণ না করে সবটাই আকারে ইঙ্গিতে বলেছেন। তবে তাঁর কথায় কে বা কারা টার্গেট, সেটা বুঝতে কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যেমন প্রাক স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে ইউনূস আবারও বললেন, আপনারা জানেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের যেন এক মহোৎসব চলছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একের পর এক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে।
এর আগে বহুবার তাঁর নেতৃত্বাধীন তদারকি সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা এবং তাঁর ছাত্র নেতারা বহুবার ভারতীয় মিডিয়াকূলের ওপর এই অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন। তবে এতকিছু করেও মুহাম্মদ ইউনূস লুকোতে পারলেন না দেশের প্রকৃত চিত্রটি। দেশ যে অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে, দেশে অরাজক পরিস্থিতি রয়েছে সেটা বলেই ফেললেন। তাঁর মুখেই শোনা গেল, দেশ এখন যুদ্ধাবস্থায় আছে।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, দেশে যদি যুদ্ধাবস্থাই থাকে, তাহলে তিনি কেন নিশ্চিন্তে চিনের উদ্দেশ্যে উড়ে গেলেন?বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান তিন দিন ধরে একের পর এক বৈঠক করলেন।
সেনাবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করলেন দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। দ্রুত নির্বাচনের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে সেনাপ্রধান যখন উদ্যোগী, তখন প্রধান উপদেষ্টা চিন সফর করছেন। যেখানে তিনি আদৌ কোনও সুবিধা আদায় করতে পারবেন, তার নিশ্চিয়তা নেই।
উল্লেখ্য, ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, এ বছর খুব শীঘ্রই নির্বাচন হবে। আমরা চাই, আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এ জন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে শুরু করবে বলে আশা করছি।’ অর্থাৎ, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হতে চলেছে এমনই বার্তা দিতে দেখা গেল প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসকে।
Discussion about this post