ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর সেই সুযোগে কাজে লাগিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনুস চীন সফরে গিয়েছেন। তবে আদৌ কি ইউনূসের এই সফরটি সফল হতে চলেছে? সত্যিই কি বাংলাদেশের উন্নতি সাধন হবে এতে, নাকি এই চীন সফরই কাল হলো ইউনুসের?
বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর গত বছরের অক্টোবর দুটি চীনা যুদ্ধজাহাজ শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশে আসে, যা দুই দেশের সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।অর্থাৎ বলা যায় হাসিনা সরকারের পতনের পর চীন দ্রুত নবগঠিত ইউনূস সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
তবে, এই চিন সফরের পরে ইউনুস চিনের প্রায় ৩০টি কোম্পানি বাংলাদেশের বিশেষ চিনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। পাশাপাশি, মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০ কোটি ডলার ঋণ প্রদান, চট্টগ্রামে চিনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫ কোটি ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরও ১৫ কোটি ডলার বরাদ্দ প্রদানের পরিকল্পনা করেছে শি জিংপিনের প্রশাসন। পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পরে দুই দেশের প্রতিনিধিরা অর্থনৈতিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে সহযোগিতার একটি চুক্তি এবং সাস্কৃতিক আদানপ্রদান, সংবাদ মাধ্যম, খেলাধুলো ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার ৮টি মৌ চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিশ্বের বহু দেশ এর আগে চিনের মহাজনী ঋণ ব্যবসার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। যেমন, মলদ্বীপ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ইত্যাদি। এবার বাংলাদেশও সেই ফাঁদে পা দিল। চিনা ঋণ নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা পূর্ববর্তী হাসিনা সরকারকে সতর্ক করলেও তাঁরা বেজিংয়ের কাছ থেকে ঢালাও ঋণ নিয়ে গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অনুদানের অর্থও ঋণ খাতে যোগ করে দিয়েছে চিন। এবার বাধ্য হয়েই সেই সুদের হার কমাতে দরবার করতে হচ্ছে ইউনূসকে। তবুও চিনা ঋণ পেতে আবদার করছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
আর চিনের সঙ্গে এই ধরনের চুক্তির ফলে ভারতের ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একইসঙ্গে সমস্যা তৈরি হবে মোংলা বন্দর চিনের হাতে চলে গেলে। কারণ বঙ্গোপসাগরে চিনের প্রভাব আরও বাড়বে। চিন কার্যত মরিয়া এই বন্দরের দখল নিজের হাতে নিতে।
উল্লেখ্য, চিনে গিয়েও মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মৃদু ভাষায় হুমকি দিয়ে চিনা বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত বঙ্গোপসাগরের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
কারণ, একদিকে মোংলা, অন্যদিকে লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি নিয়ে বাংলাদেশ যদি চিনের দিকে বেশি ঝোঁকে, তাহলে ভারত যে ছেড়ে কথা বলবে না, সেই বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট। আর এর জন্য ভারত পাশে পাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও।এখন দেখার, এই সফরই মোহাম্মদ ইউনুস কে গতিচ্যুত হওয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় কিনা।
অবশেষে, চারদিনের চীন সফর শেষে দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার দুপুরেই বেইজিং থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের আমন্ত্রণে এই সফরে গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।
Discussion about this post