বাংলাদেশ সরকারের বিভক্তি! যেকোনো সময় বিস্ফোরক কিছু ঘটতে পারে বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে সংঘর্ষে। হাতে হাত মিলিয়ে দেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানালেও এবার প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জামায়াতে ইসলামি। জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মাহফুজ আলমকে র এর এজেন্ট বলে দাবি জামাত নেতার। তবে এটি দ্বন্দ্ব না রাজনৈতিক কৌশল?
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক মঞ্চে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করলেও সেই দাবি আদায়ের পরপরই প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেজামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থাণের আগে হাসিনা সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠীগুলিকে। কিন্তু ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সে দেশে সরকার পতনের পরবর্তী বাংলাদেশে এই দুটি দল হঠাৎ কেন এই দ্বন্দ্বে জড়ালো, সেই প্রশ্নই সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার বাস ভবনের সামনে আন্দোলন শুরু হয়। ওই রাতে একে একে ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন আন্দোলনে যুক্ত হয়। আন্দোলনের পরিসর সেই রাতেই বৃদ্ধি পেলে পরদিন শুক্রবার বিকেলে অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করে শাহবাগে নিয়ে যাওয়া হয়।
শাহবাগে অবস্থান নেওয়ার পর জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের নামে বিতর্কিত স্লোগান দেওয়া ও জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এনসিপির একজন শীর্ষ নেতা জানান, এনসিপি মূলত মধ্যপন্থার রাজনীতি করে। তবে, শাহবাগে জামায়াত সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের কিছু কর্মকাণ্ড এনসিপির ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণার পরপরই এনসিপির উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দুটি স্ট্যাটাস দেন। প্রথম স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “৭১’র প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে।” কিছুক্ষণ পর তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, “আমাকে নিয়ে নোংরামি করছো, ঝামেলা নেই। ফ্যামিলি টেনোনা, যুদ্ধাপরাধের সহযোগী রাজাকারেরা। এটা লাস্ট ওয়ার্নিং।” কিছুক্ষণের মধ্যেই স্ট্যাটাসটি সরিয়ে নিলেও এর স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এনসিপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এনসিপি মধ্যপন্থার রাজনীতি করে, তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে সঠিক অবস্থান কষ্ট করতে হবে। তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের অবস্থান স্পষ্ট না হলে এনসিপি তার মিত্রতা পুনর্বিবেচনা করবে।”
অন্যদিকে, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, “একজন উপদেষ্টা হিসেবে এমন বক্তব্য দেওয়া তার শপথের পরিপন্থী। তিনি যদি রাজনীতিতে থাকতে চান তবে তার উপদেষ্টা পদ থেকে সরে আসা উচিত।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররা পরবর্তীতে এনসিপি অর্থাৎ জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। এনসিপি তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আত্মপ্রকাশ করলেও জামায়াতের সাথে তাদের মিত্রতার ইঙ্গিত বারবার আলোচনায় আসে। এনসিপির প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের সাথে মঞ্চও ভাগ করেছেন।
তবে জামাত ও এনসিপির এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতেই,বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন সফল হওয়ায় তার কৃতিত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। তবে এটি কৌশলগত পদক্ষেপও হতে পারে, কারণ সামনের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের ইস্যুতে দলগুলো নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাইছে। অনেকের মতে, এনসিপি ও জামায়াতের দ্বন্দ্ব আপাতত মুখোমুখি হলেও এটি সাময়িক। এখন দেখার,
শেষ পর্যন্ত এই দ্বন্দ্ব কি রূপ ধারণ করে এবং কোন দিকে মোড় নেয়!
Discussion about this post