কেষ্টর অনুপস্থিতিতে ভোট হচ্ছে বীরভূমে। কেষ্ট ছাড়া দল কি দিশেহারা নাকি কেষ্টর দেখানোর পথে সাফল্য ধরে রাখতে পারবে তৃণমূল। সর্বপরি ভোটে অনুপস্থিত থেকে নেতা হিসেবে আরও একবার পরীক্ষার সম্মুখীন হতে চলেছে অনুব্রত মণ্ডল।
চড়াম চড়াম ঢাকে কাঠি, নকুলদানা, কিংবা গুড়-বাতাসা। কোনটাই হিন্দী সিনেমার জনপ্রিয় ডায়লগ নয়। এর সবকটাই তৃণমূলের কেষ্টার পাঞ্চ। যার একডাকে বীরভূমে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়। ঘটনাটা সত্যি নাকি প্রবাদ তা জানা নেই। তবে কেষ্টর দলের কর্মীদের মুখে মুখে ফেরে এই কথাই। কেষ্ট এখন তিহাড় জেলবন্দী। গরুপাচার মামলায় কেষ্টকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। ছাড় পাইনি তাঁর একমাত্র কন্যা সুকন্যাও। বাবা সঙ্গে তারও ঠিকানা হয়েছে তিহাড় জেল। তাই বোলপুরের নীচুপট্টির আকাশি ও নীল রঙা বাড়িটা এখন শুনশান। ভোটের আগে এখানে তিলধারনের জায়গা থাকতো না। আজ কেষ্টর পাড়া, অফিস খাঁ খাঁ করছে। এখন প্রশ্ন কেষ্টর অনুপস্থিতিতে কী ভাবে হবে বীরভূম ও বোলপুরের ভোট। যার ঘাড়ে ভোট করানোর দায়িত্ব থাকতো, যাকে সামনে পেয়ে দলের প্রার্থীরা নিশ্চিত হতেন আজ সেই তো নেই।
অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম থেকে দল টিকিট দিয়েছে শতাব্দী রায়কে। অন্যদিকে বোলপুর লোকসভায় টিকিট পেয়েছেন অসিত মাল। ২০০৯ সাল থেকে একটানা সাংসদ হয়ে আসছেন শতাব্দী। কোনবার দলকে নিরাশ করেননি। বরং প্রতিবারই ভোটের ব্যবধান বাড়িয়ে দলের আশা-ভরসা ধরে রেখেছেন। তবে এই শতাব্দীকে নিয়ে দুশ্চিন্তার মেঘ একটা থেকেই যাচ্ছে। টানা তিনবার জিতলেও প্রতিবার শতাব্দীর হয়ে যিনি ভোট করাতেন, যিনি বীরভূম ভোটের মাস্টারমাইন্ড সেই কেষ্ট এখন তিহাড়বন্দী। তার উপস্থিতির অভাব কি পূরণ করতে পারবে দল? তবে জোড়াফুল বিভিন্ন বৈঠকে নিশ্চিত করে দিয়েছে কেষ্ট না থাকলেও তাঁর দেখানো রাস্তাতেই ভোট হবে বীরভূমে। সম্প্রতি বীরভূমের সাংগঠনিক বৈঠকে যে কোর কমিটি নতুন করে গড়ে তোলা হয় সেখানে কেষ্ট ঘনিষ্ঠদের রাখেন মমতা ব্যানার্জি। এমনকি কেষ্টর অনুপস্থিতিতে নতুন জেলা সভাপতির নামও ঘোষণা করা হয়নি দলের তরফে। সূত্রের খবর সাংগঠনিক বৈঠকে নেত্রী সাফ জানিয়ে দিয়ে ছিলেন কেষ্টকে ভুললে চলবে না।
এদিকে স্বাধীনতার পর থেকে বীরভূম প্রথমে কংগ্রেস ও পরে সিপিআইএমের গড় হিসেবে পরিচিত ছিল। এমনকি বাংলার মসনদে সিপিআইএম আসার আগে থেকেই বীরভূমে লাল ঝাণ্ডার যুগ শুরু হয়। ১৯৭১ থেকে টানা ২০০৪ পর্যন্ত বামপ্রার্থীরাই জয়ী হতেন বীরভূম থেকে। ২০০৯ সালে ব্রজ মুখোপাধ্যায়কে হারিয়ে অভিনেত্রী শতাব্দী রায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু হয় বীরভূমের লাল মাটি থেকে। ভোট যত হয়েছে বামেরা হয়েছে কোনঠাসা। ভোট বেড়েছে তৃণমূলের। অন্যদিকে বামেদের দ্বিতীয় স্থান থেকে সরিয়ে তৃণমূলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলেছে বিজেপি।
গত লোকসভা নির্বাচনে শতাব্দী রায় পেয়েছিলেন ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার ৭৭ টি ভোট। অন্যদিকে বিজেপির দুধকুমার মণ্ডল পান ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ১৫৩টি ভোট। চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে দুধকুমার মণ্ডল ভালো লিড দিলেও তিনটি বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের দারুণ ফল শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি এনে দেয় জোড়াফুলের ঝুলিতে। এই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র হল নলবহাটি, মুরারই ও হাসান। এর প্রত্যেকটিতে সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। চলতি ভোটে বাম ও কংগ্রেস প্রাক্তন বিধায়ক মিল্টন রশিদকে ভোটে দাঁড় করিয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপি ও তৃণমূলের প্রার্থীরা কেউই সংখ্যালঘু নন। সুতরাং ভোট কাটাকাটির একটা সম্ভবনা থেকেই যাচ্ছে। যাতে আখেরে লাভ হবে বিজেপিরই। যদিও প্রার্থী নিয়ে লালমাটির জেলায় ল্যাজেগোবরে অবস্থা গেরুয়াশিবিরে। প্রথমে দেবাশিস ধরকে প্রার্থী করে বেকায়দায় পড়েছে । যার ফায়দাও তুলতে শুরু করেছে ঘাসফুল
বিজেপি প্রার্থী নিয়ে যতই সমস্যায় পড়ুক না কেন ভোট কাটাকাটি ও অনুব্রতর অনুপস্থিতি চলতি ভোটে বেগ পেতে হবে তৃণমূলকে। মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। সর্বপরি কেষ্টর অনুপস্থিতি নেতা হিসেবে কেষ্টর গুরুত্ব ও ভার দলের কাছে আরও একবার উঠে আসবে ফলাফল ঘোষণার পর পরেই।
Discussion about this post