অসম্ভব বলে কিছুই নেই। ইচ্ছে থাকলে সব প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে ফেলা সম্ভব। ঠিক তেমনই করে দেখিয়েছেন গুজরাতের বাসিন্দা গণেশ বারাইয়া। প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়েই তিনি পেয়েছেন সাফল্য। উচ্চতায় মাত্র ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি। বর্তমানে তিনি বিশ্বের সব থেকে খর্বকায় চিকিৎসকের শিরোপা পেয়েছেন। খাটো উচ্চতার কারণে নানা বাঁধা এসেছে তাঁর উচ্চ শিক্ষার আকাঙ্খায়। তবুও নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে ক্রমেই এগিয়ে গিয়েছেন গণেশ। খর্বাকার উচ্চতা হওয়ায় শারীরিক নানা সমস্যার সম্মুখীনও হতে হয়েছে তাঁকে। শুধু শারীরিক নয়, কেরিয়ার জীবেনও নানা মানসিক বাধার মুখে পড়তেও হয়েছে গণেশকে। তবুও অদম্য মনের জোরে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। অবশেষে এম.বি.বি.এস ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে তিনি গুজরাটের একটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক পদে কর্মরত। বেঁটে হওয়ার কারণে পেশাগত দিকেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে।
শুধু তাই নয়, উচ্চতা খাটো হওয়ায় পড়াশোনার যোগ্যতা নিয়েও নানান প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। ২০১৮ সালে ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছেন গণেশ। এরপর ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটে ২৩৩ নম্বরে ছিলেন তিনি। ২৩ বছর বয়সী গণেশকে চিকিৎসক হওয়ায় বাধা হেনেছে মেডিকেল কাউন্সিল। উচ্চতা কম থাকার কারণে তিনি নাকি পরিস্থিতি সামালই দিতে পারবেন না। এমনকি প্রথমে গুজরাট সরকার তাঁকে ডাক্তারি পড়ার অনুমতিও দেননি। যত বাধা এসেছে ততই মনের অদম্য জেদ বেড়েছে গণেশের। সফল চিকিৎসক হওয়ার হওয়ার বাসনায় তিনি দ্বারস্থ হয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের। ২০১৮ সালে সেই মামলা জিতে যাওয়ার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ডাক্তারিতে ভর্তি হন তিনি। রাত-দিন জেগে পড়াশোনা করে অবশেষে এম.বি.বি.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে গুজরাটের ভাবনগরের একটি হাসপাতালে অন্যান্য চিকিৎসকদের সঙ্গে ট্রেনিং নিচ্ছেন গণেশ।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে গণেশ জানিয়েছেন, উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এ ভর্তি হন। সেখান থেকে উত্তীর্ণের পর এম.বি.বি.এসে ভর্তির জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু উচ্চাতার কারণে সেই আবেদন খারিচ করে দেয় মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইণ্ডিয়া। আবেদন খারিচের প্রসঙ্গে কাউন্সিল গণেশকে জানিয়েছিল , তাঁর উচ্চতার জন্য তিনি রোগীদের পরিষেবা দিতে ব্যার্থ হবেন, তাই খারিচ হয় আবেদনপত্র। ঘটনার পরই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন গণেশ। সেই সময় তাঁর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে নানা আলোচনা করেন তিনি। শিক্ষকের পরামর্শ মতো জেলা শাসক ও গুজরাটের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন গণেশ। এরপর ভাবনগরের জেলাশাসকের পরামর্শ অনুযায়ী গুজরাট হাইকোর্টে দ্বারস্থ হয় গণেশ। গুজরাট হাইকোর্টে মামলায় হেরে যাওয়ার পর অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্ত হন তিনি। ২০১৮ সালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায়দানের পর ২০১৯ সালে এম.বি.বি.এসে ভর্তি হন গণেশ। বর্তমানে গণেশ এখন একজন সফল চিকিৎসক। ছোট শিশুর মতো চিকিৎসকের পোশাক পড়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডে যখন রোগীদের চিকিৎসা করতে আসেন, আচমকাই এক ঝলক দেখলে মন হবে কোনও শিশু যেন ঘুরে বেরাচ্ছে ওয়ার্ডে। কিন্তু খর্বাকার এই চিকিৎসকের হাতের স্পর্শেই সেরে ওঠেন রোগীরা। তাই জীবনে যতই বাধা আসুক না কেন, মনের জেদের কাছে সব কিছুকেই হারিয়ে দেওয়া যে সম্ভব, তা আবারও বুঝিয়ে দিলেন এই বামুন চিকিৎসক।।
Discussion about this post