ভোট বড় বালাই। যে কোনও ভোট এলেই দেখা যায় নেতা-নেত্রীদের নানান কর্মকাণ্ড করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। ২০২৪ লোকসভা ভোটের শেষ দফার ভোটগ্রহন বাকি সারা দেশে। ভোটগ্রহন হবে আগামী ১ জুন। ফলে শেষ বেলার প্রচারে দিন-রাত এক করছেন প্রার্থীরা। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের দাপট প্রচারপর্বের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দক্ষিণবঙ্গে। কলকাতা লাগোয়া দমদম লোকসভা কেন্দ্রেও ভোটগ্রহন হবে শেষ দফায়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের দাপটে দমদমের বহু জায়গায় জল জমে যায়। দমদমের বিদায়ী সাংসদ তথা এবারও তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় দমে যাননি। রীতিমতো বাঁশ হাতে নিয়ে তিনি নেমে পড়লেন ড্রেনের মুখ পরিস্কার করতে। যা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ, অত্যন্ত দূর্বল চিত্রনাট্য।
২৬ মার্চ রবিবার রাতেই ঘূর্ণিঝড় রেমাল আছড়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূলবর্তী অঞ্চলের মাঝামাঝি কোনও এলাকায়। যার জেরে রবিবার বিকেল থেকেই প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয় কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায়। এমনিতেই দমদমের কিছু এলাকায় অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান জল জমে। আর রেমালের জেরে অতি প্রবল বৃষ্টিতে দমদমের বিস্তৃর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ভোট বাজারে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেতে চাননি পোড় খাওয়া রাজনৈতিক সৌগত রায়। সোমবার সকালেই তাই তিনি দলবল নিয়ে নেমে পড়েন জমা জল সরানোর কাজে। আর এই কাজে তাঁর হাতিয়ার হল একটি বাঁশ। হাঁটুর উপরে ধুতির খুঁট তুলে হাত তিনেক লম্বা একটি বাঁশ নিয়ে ৭৬ বছরের সৌগত রায়কে দেখা গেল নর্দমা খোঁচাতে। অথচ তাঁর পাশেই তখন কয়েকজন শক্তপোক্ত তৃণমূল কর্মী মাথার উপর ছাতা ধরে রয়েছেন। দমদমের তৃণমূল প্রার্থীর এহেন কর্মকাণ্ডের ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল ভাইরাল। নেটিজেনরাও নানা রকম রসিক মন্তব্য করতে ছাড়ছেন না।
অপরদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা খোঁচা দিতে ছাড়ছেন না। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এক্স হ্যান্ডলে তিনি ওই ভিডিও শেয়ার করে লেখেন, “১৫ বছর ধরে সাংসদ। ১৫ বছর ধরে পৌরসভার ক্ষমতায়। ১৩ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায়। কিন্তু নির্বাচনের আগে বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার কারণে জল জমে যাওয়ায় বাঁশ দিয়ে কি খোঁচাচ্ছেন উনিই জানেন! ভাব খানা এমন যেন, এই ছ’ মাস আগে তৃণমূল কংগ্রেস নামক এক দলের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে আর ইনি এই প্রথম ভোটে লড়ছেন”। এই বিষয়ে কটাক্ষ করতে পিছিয়ে থাকেননি দমদমের বাম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ভোটের আগে এত তৎপরতা, তাহলে এত বছর উনি কি কাজ করলেন?
আসলে বাঁশ এমন একটি বস্তু যা বহু ক্ষেত্রে মানবজীবনে কাজে আসে। বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা তথা দমদমের প্রার্থী সেই বাঁশকে কাজে লাগালেন রেমাল বিধ্বস্ত দমদমের রাস্তায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে অনেকেই মন্তব্য করছেন, অতি দুর্বল চিত্রনাট্য এটি। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, তাঁর দল এত বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায়, তিনবারের সংসদ হয়েও সৌগত রায় দমদমের জলজমার সমস্যার সমাধান করতে পারলেন না। অথচ ভোটের মুখে নিজেই বাঁশ হাতে নর্দমার জমা জল পরিস্কার করছেন ভিডিও তুলে প্রচার পাওয়ার জন্য। বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ভোট প্রচারে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা গেল দমদমের নাম। তিনি সরাসরি দাবি করেছেন, দমদমে সিপিএম এবং বিজেপি সেটিং করেছে। দমদমে সিপিএমের ভোট এবার বিজেপির ঝুলিতে যাবে বলেও দাবি করেন তৃণমূল নেত্রী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অবশ্য অভিমত, এবার সৌগত রায় কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। দমদমে এবার লড়াই মূলত ত্রিমুখী। সৌগত রায়ের বিপক্ষে এবার বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত এবং সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। কংগ্রেস এবং সিপিএমের ভোট মিলিয়ে মাত্র ১৪ শতাংশ পুঁজি নিয়ে কতটা লড়াই দেবেন বাম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী, এই প্রশ্ন থাকলেও সুজন এবার আশাবাদী। একদা যাদবপুর থেকে লোকসভায় যাওয়া পক্ককেশ সুজন চক্রবর্তী এবার দমদমের অতীতের বামদূর্গ পুনরুদ্ধার করতে দিনরাত এক করছেন। বামপ্রার্থীর দাবি, সৌগত রায় এলাকায় জনসংযোগ ঠিকঠাক রাখলেও তাঁর কাজ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে দমদমের মানুষদের মধ্যে। অপরদিকে, বাম আমলেই একবার দমদমে পদ্মফুল ফুটিয়েছিল বিজেপি।
সকলকে অবাক করে ১৯৯৮ সালে দমদম লোকসভা থেকে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী তপন শিকদার। মিশ্র জনজাতীর বাস এই দমদমে। ফলে বরাবরই বিজেপি এখানে ভালো ভোট আদায় করে নেয়। ২০১৪ লোকসভা ভোটেও তৎকালীন বিজেপি প্রার্থী তপন শিকদার পেয়েছিলেন প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট। ২০১৯ সালে বিজেপির শমিক ভট্টাচার্য ৩৮ শতাংশের বেশি ভোট টেনেছিলেন। সেবার সৌগত রায় জিতেছিলেন মাত্র ৫৩ হাজার ভোটে। ফলে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত অনেকটাই আশাবাদী। শীলভদ্র দত্তও একদা তৃণমূলে ছিলেন। তিনি ব্যারাকপুরের বিধায়ক ছিলেন। লড়াইয়ের ময়দানে তিনিও জোরকদমে রয়েছেন। এখন দেখার বাঁশ হাতে নর্দমা পরিস্কার করে বর্ষীয়ান তৃণমূল প্রার্থী দমদমে ভোট বৈতরণী পার করতে পারেন কিনা।
Discussion about this post