কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের জন্য বিরাট সুখবর। আর এক মাস পরেই ২০২৪ সালের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। তার আগেই অষ্টম বেতন কমিশনের প্রস্তাব দিল কেন্দ্রীয় সরকার। অষ্টম বেতন কমিশন কেন্দ্রীয় সরাকারী কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের মূল বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাগুলির পর্যালোচনা করবে। ফলে নতুন করে বেতন এবং পেনশন বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের।
প্রতি দশ বছর অন্তর একটি বেতন কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন মূলত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতন কাঠামো, পেনশন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পর্যালোচনা করে। মূলত মুদ্রাস্ফিতির ওপর ভিত্তি করে সবদিক খতিয়ে দেখে নতুন বেতন কাঠামো তৈরি করা হয়, সেই মতো পেনশনও বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, সপ্তম বেতন কমিশন গঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে। সেই কমিশনের সুপারিশগুলি কার্যকর হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। সেই মতো ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে অষ্টম বেতন কমিশনের প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেই অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিলেন। যার ফলে গোটা দেশের এক কোটির বেশি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং প্রায় সম সংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর বেতন, ভাতা এবং পেনশন বৃদ্ধি পেতে চলেছে। ফলে খুশির হাওয়া বইছে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য গঠিত জয়েন্ট কনসালটিভ মেশিনারির ন্যাশনাল কাউন্সিল সেক্রেটারি (স্টাফ সাইড) শিব গোপাল মিশ্র অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের জন্য চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিবকে। তিনি ওই চিঠিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে অষ্টম বেতন কমিশন গঠনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়েও আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেল। সূত্রের খবর, চিঠিতে শিব গোপাল মিশ্র জানিয়েছেন, করোনাকালের আগে ভারতে মুদ্রাস্ফিতির হার ছিল ৪ থেকে ৭ শতাংশ। কিন্তু করোনার পরে তা গড়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশে থমকে ছিল। বলা ভালো মুদ্রাস্ফিতি করোনা পূর্ববর্তী সময়ের থেকে অনেক বেশি। তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যদি দৈনন্দিন জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের খুচরো মূল্য তুলনা করি তবে তা আগের পরিস্থিতি থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি। কিন্তু ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত যদি কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের প্রায় ৪৬ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা বা ডিএ দেওয়া হয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, দেশের মুদ্রাস্ফিতি এবং মহার্ঘ্য ভাতার ফারাক অনেকটাই।
আরও পড়ুন : প্রিয়াঙ্কার নাম ঘোষণা হতেই রায়বরেলি-ওয়ানাড পেল দুজন করে সাংসদ
অপরদিকে, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব আদায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলেও ওই চিঠিতে দাবি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই সময়কালে কেন্দ্রীয় রাজস্বের পরিমান প্রায় ১০০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের আরও বেশি অর্থ প্রদান করার ক্ষমতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ক্যাবিনেট সচিবকে দেওয়া অষ্টম বেতন কমিশনের প্রস্তাবের ওই চিঠিতে। শিব গোপাল মিশ্র ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ২০১৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জিএসটি আদায় হয়েছে ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা এবং ব্যাক্তিগত আয়কর সংগ্রহের পরিমান ৯ লক্ষ ৬০ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। ফলে এই সময়কালে কেন্দ্রীয় কোষাগারে রাজস্বের পরিমান ২৪.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতন কাঠামো এবার বৃদ্ধি করার দাবি রয়েছে। সেই সঙ্গে বিগত এক দশকে কেন্দ্রীয় সরকারের যে ১০ লক্ষের বেশি শূন্যপদ রয়েছে, তাও পূরণ করার দাবি জানানো হয়েছে।
Discussion about this post