অবশেষে খোলা হচ্ছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বহু চর্চিত রত্ন ভাণ্ডারের তালা। যে তালার তিনটি চাবির মধ্যে একটি খোয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বহু কিংবদন্তীর সঙ্গে জড়িত পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার শেষবার খোলা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। এবার বিজেপি ওড়িশা বিধানসভা ভোটে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রত্ন ভাণ্ডার খোলার বিষয়ে। ওড়িশায় ক্ষমতা দখল করেই নতুন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন বহু চর্চিত সেই রত্ন ভাণ্ডার খোলার দিনক্ষণ।
প্রায় সাড়ে চার দশক ধরে তালাবন্ধ রয়েছে পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার। যা নিয়ে বহু রহস্য আজও উদঘাটন করা যায়নি। বিশ্বাস, ওই রত্ন ভাণ্ডারে বিপুল পরিমান সোনা, রুপো, মণিমুক্ত সঞ্চিত রয়েছে। কিন্তু সেই ১৯৭৮ সালে শেষবার খোলা হয়েছিল পুরীর জগন্নাখ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারটি। তখনই যে পরিমান সোনাদানার হিসেব পাওয়া গিয়েছিল, তাতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। এর পর থেকে আরও সোনা, রুপো, মণি-মাণিক্য জমা হয়েছে সেখানে। ফলে এবার গণনা হলে সেই পরিমান কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা।
ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সাতটি গোপন কক্ষ রয়েছে। সেগুলিই রত্ন ভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মনে করা হয়, এই রত্ন ভাণ্ডারটি সেই দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মান করা হয়েছিল। এই রত্ন ভাণ্ডারে জমা রাখা হয় জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার কাছে দেওয়া ভক্তদের ভেট। দামী রত্নখচিত সোনা, রুপোর অলঙ্কার, অস্ত্রশস্ত্র বা আরও কিছু। শেষবার এই রত্ন ভাণ্ডার খোলা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। সেবারই শেষবার গোনা হয়েছিল জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার অলঙ্কারের পরিমান। জানা যায়, সেবার জগন্নাথদেবের মাথায় থাকা রত্নচিতা ভেঙে গিয়েছিল। ফলে রত্ন ভাণ্ডার খুলে সেখান থেকে কিছু পরিমান সোনা বের করা হয়েছিল সেই রত্নচিতা পুনরায় নির্মানের উদ্দেশ্যে। এরপর আর কোনও দিন রত্ন ভাণ্ডার খোলার প্রয়োজনীয়তা হয়নি। যদিও পরবর্তী সময় এই রত্ন ভাণ্ডার নিয়ে মামলা গড়ায় ওড়িশা হাইকোর্টে।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই ওড়িশায় বিধানসভা ভোট হয়েছে। এবার বিজেপি তাঁদের ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যদি বিজেপি সরকার গঠন করে তবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চারটি দরজা এবং রত্ন ভাণ্ডার খুলে দেওয়া হবে। দীর্ঘকাল পর ওড়িশায় পালা বদল হয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এসেই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চারটি দরজা খুলে দিয়েছে। এবার নতুন মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি জগন্নাথের রত্ন ভাণ্ডারের তালা খোলার দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন। আগামী ৮ জুলাই বহু প্রতিক্ষিত রত্ন ভাণ্ডারের দরজা খুলবে দীর্ঘ সাড়ে চার দশক পর। সম্প্রতি ওড়িশা হাইকোর্টে জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারে গচ্ছিত গয়নার পরিমান সম্পর্কে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল মন্দির কমিটি। তাতে জানানো হয়েছে প্রায় দেড় কুইন্টাল সোনাদানা গচ্ছিত রয়েছে রত্ন ভাণ্ডারে। সেই তালিকায় মোট ৮৩৭টি সামগ্রীর হিসেব রয়েছে। তবে এই তালিকা ১৯৭৮ সালে তৈরি হয়েছিল। এর পর আরও মূল্যবান রত্ন জমা পড়েছে জগন্নাথ মন্দিরে। এও জানা যায়, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডারে সঞ্চিত বিপুল রত্নের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে পরানো হয়।
প্রসঙ্গত, পুরীর রত্ন ভাণ্ডারের মেঝে, দেওয়াল অবস্থা বেশ বেহাল দশায় রয়েছে। ২০১৮ সালে ওড়িশা হাইকোর্ট আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে ওই রত্ন ভাণ্ডার পরীক্ষা করার অনুমতি দেয়। কিন্তু তাঁরা রত্ন ভাণ্ডারের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি। তখনই জানা যায়, ওই রত্ন ভাণ্ডারের একটি চাবি নিখোঁজ। উল্লেখ্য, রত্ন ভাণ্ডারের তালায় তিনটি চাবি রয়েছে। একটি চাবি থাকে গজপতি রাজার কাছে, ১টি মন্দির সেবায়েত প্রধানের কাছে আর তৃতীয় চাবিটি থাকে পুরীর জেলাশাসকের কাছে। সূত্রের খবর, এই তৃতীয় চাবিই নিখোঁজ। রত্ন ভাণ্ডারের তিনটি চেম্বার রয়েছে। সূত্রের খবর, ভিতরের একটি চেম্বারে ৫০ কেজি ৬০০ গ্রাম সোনার অলঙ্কার এবং ১৩৪ কেজি ৫০ গ্রাম রুপোর অলঙ্কার রয়েছে। বাইরের চেম্বারে রয়েছে ৯৫ কোজি ৩২০ গ্রাম সোনা এবং ১৯ কেজি ৪৮০ গ্রাম ওজনের রুপোর অলঙ্কার। আর একেবারে ভিতরের তৃতীয় চেম্বারটি কোনও দিনও ব্যবহার করা হয়নি। সেখানে কত পরিমান মণিমাণিক্য রয়েছে তা অজানা।
Discussion about this post