আমরা জানি মা মেরী ছিলেন কুমারী মাতা। আবার হিন্দু ধর্মেও কুমারী মা অর্থাৎ কন্যাকুমারী মাতার পুজো হয়। সে তো গেল দেবতাদের কথা। পৃথিবীতে এমন কয়েকটি প্রাণী আছে, যারা মিলন না করেই সন্তান ধারণ করে। জীববিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে পার্থেনোজেনেসিস বলে। কোনও সঙ্গী ছাড়াই তাঁরা সন্তান প্রসব অথবা ডিম পাড়ে। আজ আপনাদের এমন আজব কয়েকটি ঘটনা সম্পর্কে বলবো।
VO – সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাজ্যের নর্থ ক্যালোরিনার এক চিড়িয়াখানায় এক বোয়া প্রজাতির সাপ ১৪টি ডিম পেড়েছে। এই কথা শুনে আপনারা নিশ্চই আশ্চর্য হচ্ছেন না। কিন্তু যদি শোনেন, ওই বিশালাকায় সাপটি বিগত ৯ বছর ধরে একাকি ছিল। অর্থাৎ, তাঁর কোনও সঙ্গী ছিল না, ফলে সে কোনও রকম মিলন করেনি বিগত ৯ বছরে। তাহলে ওই সাপটি কিভাবে ডিম পাড়ল? এটা কি কোনও অলৌকিক ঘটনা, নাকি গোপনে সে মিলন করেছিল। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন ওই চিড়িয়াখানার কর্মীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা নিশ্চিত হয়েছিল, যে ওই সাপ কোনও ভাবেই মিলন করেনি।
বোয়া রেনবো, ব্রাজিলের এক বিরল প্রজাতির সাপ। নর্থ ক্যালোরিনার চিড়িয়াখানায় এই বোয়া রেনবো প্রজাতির যে সাপটি রয়েছে তাঁর বয়স ১৩ বছর, দৈর্ঘ্যে প্রায় ৬ ফুট। এই সাপটির নাম রোনাল্ডো, এবং সেটি খুবই জনপ্রিয়। সম্প্রতি এই রোনাল্ডো ১৪টি ডিম দিয়েছিল। এবং সবগুলি থেকেই সন্তান জন্ম হয়েছে। ছোট ছোট শিশু সাপগুলি চিড়িয়াখানার কর্মীরা খুবই যত্নে রেখেছেন। কিন্তু সকলেরই মনে প্রশ্ন, যে সাপ দীর্ঘ ৯ বছর ধরে একাই এই খাঁচায় বন্দী, সে কিভাবে ডিম পাড়ল? সবদিক খতিয়ে দেখে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয়, এটি অলৌকিক কোনও ঘটনা নয়, বরং এটি বিরল পার্থেনোজেনেসিস-এর ঘটনা। এখন প্রশ্ন হল এই পার্থেনোজেনেসিস ব্যাপারটা কি।
পার্থেনোজেনেসিস একটি গ্রীক শব্দ। পার্থোনোস শব্দের অর্থ হল কুমারী এবং জেনেসিস শব্দের অর্থ জন্ম। কিছু পতঙ্গ, সরীসৃপ এবং মাছ এই পদ্ধতিতে সন্তান প্রসব করে। তবে উচ্চতর প্রাণীদের মধ্যে এই ঘটনা একেবারেই বিরল। প্রতি হাজার প্রজাতির মধ্যে একটিই ঘটে। যেমন, ২০০৬ সালে চেস্টার শহরে এক কোমোডো ড্রাগন পার্থেনোজেনেসিস পদ্ধতিতে ৮টি সন্তানের জন্ম দিয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালে এসে বোয়া প্রজাতির সাপটি ১৪টি ডিম পাড়ল। জীববিজ্ঞানীরা বলছেন, পার্থেনোজেনেসিস একটি উপায়েই ঘটতে পারে। সেটা হল, যদি কোনও মহিলার ডিম্বানু অন্য কোনও কোষের সঙ্গে মিলিত হয়, এবং কোনও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ওই কোষ অবশিষ্ট থাকে। যা ওই মহিলাকে ডিম বা ভ্রুণ তৈরি করতে সাহায্য করে।
এই কোষকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় পোলার বডি। যে ওই ডিম্বানুকে সেই জেনেটিক তথ্য প্রদান করে, যা সাধারণত শুক্রাণু থেকে পাওয়া যায়। ফলে কোষটি বিভাজিত হতে শুরু করে এবং এটি একটি ভ্রুণ সৃষ্টির দিকে নিয়ে যায়। তবে জীববিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বন্য পশুদের মধ্যে এই পদ্ধতি কতটা প্রচলিত তা এখনও পরিস্কার নয়। তবে দীর্ঘদিন বন্দীদশায় থাকা প্রাণীদের মধ্যে এটা পরিলক্ষিত হয়েছে। যেমন, ওই কোমোডো ড্রাগন ফ্লোরা আর এই বোয়া প্রজাতির সাপ রোনাল্ডো কোনও রকম মিলন ছাড়াই সন্তান প্রসব করেছে।
Discussion about this post