ভারতে মন্দিরের শেষ নেই। সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতে দেবদেবীর মন্দির নির্মানের চল রয়েছে। তাই এই দেশে হাজার বা তার বেশি বছরের মন্দিরও খুঁজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মন্দির বা দেবালয় রয়েছে, যেখানকার পাথরে চাপা পড়ে রয়েছে অপার রহস্য। সেই রহস্যের অনেকগুলি আজও উন্মোচিত হয়নি। তবে আমরা আজ আলোচনা করবো রত্ন ভাণ্ডার নিয়ে। ভারতের অনেক মন্দিরেই রয়েছে গোপন রত্ন ভাণ্ডার। রাশি রাশি সোনাদানাস মণিমাণিক্য জমা রয়েছে সেখানে। যেমন কয়েকদিন ধরে শোনা যাচ্ছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্ন ভাণ্ডার সম্পর্কে। যে রত্ন ভাণ্ডার খোলা হল চার দশক পর। যদিও সেখানে কি কি পাওয়া গেল, সেটা এখনও জানা যায়নি। সেই দিকে কৌতুহল রয়েছে সকলের। তবে আপনাদের আজ জানাই আরেকটি মন্দিরের থেকে পাওয়া বিশাল ধনরাশি সম্পর্কে। আর সেই মন্দিরের এক গোপন কুঠুরি সম্পর্কে। যা আজও খোলা যায়নি। কারণ সেই কুঠুরির দরজায় আঁকা দুটি সাপের ছবি। আর নেই কোনও তালা-চাবি।
দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরলের তিরুবন্তপুরম শহরে বুকে দাঁড়িয়ে আছে সুবিশাল একটি মন্দির। যার বয়স ঐতিহাসিক মতে প্রায় ৩ হাজার বছর। ব্রক্ষ্ণ পুরাণ, মৎস পুরাণ, বরাহ পুরাণ, স্কন্ধ পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, মহাভারতেও এই মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায় কেরলের এই মন্দির খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত। তবে ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, এই মন্দিরটি আঠেরো থেকে উনিশ শতকের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। আমরা কথা বলছি, তিরুবন্তপুরমের শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের প্রসঙ্গে। এটি সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে এক অপার বিশ্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে সায়িত রয়েছে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি।
কথিত আছে, গোটা ভারতে ভগবান বিষ্ণুর প্রতি উৎসর্গকৃত ১০৮টি মন্দিরের মধ্যে অন্যতম পদ্মনাভস্বামী মন্দির। এখানে ভগবন বিষ্ণু অনন্ত সজ্জায় সায়িত। অর্থাৎ, অনন্তনাগের উপর সায়িত বিষ্ণুমূর্তি। যা প্রায় ১৮ ফুট লম্বা। মূর্তির নাভিতে রয়েছে একটি পদ্ম, আর সেই পদ্মের উপর বসে রয়েছেন প্রজাপতি ব্রক্ষ্ণা। পাশাপাশি গর্ভগৃহে রয়েছে ভগবান বিষ্ণুর দুই স্ত্রী লক্ষ্ণী এবং ধরিত্রী দেবী। মূল মূর্তিটি কষ্টি পাথরের নয়। জানা যায়, ১০০৮টি শালিগ্রাম শিলা বিশেষ উপায়ে সাজিয়ে তার উপর এক আয়ুর্বেদিক আঠালো মিশ্রন সাজিয়ে তৈরি হয়েছে এই সুবিশাল মূর্তি।
প্রাচীন পত্মনাভস্বামী মন্দির, যার আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। এরমধ্যে অন্যতম হল এই মন্দিরের নীচে পাতালঘরে লুকোনো রত্নভাণ্ডারের রহস্য। যা নিয়ে অনেক গল্প আজও প্রচলিত। ২০১১ সালে কেরলের এক আইপিএস অফিসার টি পি সুন্দরাজন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের পাতালঘরের কুঠুরি খোলার ব্যাপারে। সুপ্রিম কোর্ট দীর্ঘ শুনানির শেষে পাতালঘরের রত্ন ভাণ্ডার খোলার নির্দেশ দেয়। সেই মতো সাত জনের একটি বিশেষজ্ঞ দল মন্দিরের চোরা কুঠুরিতে প্রবেশ করেন। আর সেখানে ঢুকেই তাঁদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। সেখানে থরে থরে সাজানো রয়েছে রাশি রাশি ধনরত্ন। যার মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা।
জানা যায়, কেরলের পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের নীচে রয়েছে গোপন পাতালঘর। সেখানে রয়েছে ছয়টি কুঠুরি। এ থেকে এফ পর্যন্ত এই কুঠুরিগুলিকে চিহ্নিত করা হয়। ২০২২ সালেই খোলা হয় পাঁচটি কুঠুরি। আর সেখানে যে বিপুল ধনরত্ন পাওয়া গিয়েছিল, তাতেই পদ্মনাভস্বামী মন্দির বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মন্দিরের শিরোপা পেয়ে যায়। কারণ ওই রত্নভাণ্ডার থেকে পাওয়া মোট সম্পদের পরিমান ছিল ২২ মিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে ছিল, ৪ ফুট লম্বা এবং ৩ ফুট চওড়া হিরে, মণিমুক্ত খচিত খাঁটি সোনার বিষ্ণুমূর্তি। খাঁটি সোনার সিংহাসন, একটি সোনার ১৮ ফুট লম্বা হার, রোমান এবং গ্রিক সাম্রাজ্যের দুঃপ্রাপ্য স্বর্ণমূদ্রা, মধ্যযুগের স্বর্ণমূদ্রা ভর্তি কয়েকটি বস্তা। এছাড়া নানা দামী এবং দুঃপ্রাপ্য মণি খচিত অসংখ্য সোনার মুকুট। তবে আপনি জেনে অবাক হবেন, এই পাতালঘরের একটি কুঠুরি আজও খোলা হয়নি। সেটি হল বি কুঠুরি।
জানা যায়, ওই কুঠুরির দরজার গায়ে খোদাই করা রয়েছে দু’টি বিষাক্ত গোখরো সাপের বিশাল হাঁ করা মুখ। তাছাড়া ওই কুঠুরির দরজায় কোনও নাটবল্টু, কড়া, ছিটকিনি বা তালা-চাবির হদিশ মেলেনি। ফলে ওই দরজা কিভাবে খোলা হবে সেটাই বোঝা যায়নি। অপরদিকে পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের পুরোহিতদের দাবি, যিনি ওই গোপন কুঠুরি খুলবেন, তাঁর প্রাণ সংশয়ও হতে পারে। তাছাড়া জোর করে দরজা খোলা হলে গোটা দেশে নেমে আসবে ভয়ংকর কোনও প্রলয়। ছাড়খাড় হয়ে যাবে দেশ। পুরোহিতদের আরও দাবি, বিশেষ নাগপাশ মন্ত্রবলে ওই দরজা বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই ওই দরজা আজও খোলার চেষ্টা করা হয়নি।
Discussion about this post